(বাঁ দিকে) তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
স্পেন সফরে গিয়ে পায়ে চোট পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার রাতে কলকাতায় ফিরে রবিবার তিনি পায়ের চিকিৎসা করাতে এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়েছিলেন। চিকিৎসকেরা আপাতত ১০ দিন বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। তাঁর হাঁটাচলার উপরেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। অর্থাৎ, আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর স্বাভাবিক চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা জারি থাকছে। ঘটনাচক্রে, তার মধ্যেই দিল্লিতে তৃণমূলের ঘোষিত কর্মসূচি রয়েছে। ২ অক্টোবর, গান্ধীজয়ন্তীতে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিসৌধ রাজঘাটে প্রার্থনা এবং পরের দিন ধর্নায় বসতে চলেছে বাংলার শাসকদল। ওই কর্মসূচির নেতৃত্ব দেওয়ার কথা মমতা এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পায়ের চোটের কারণে মমতাকে চিকিৎসকেরা বিশ্রামে থাকতে বলেছেন। অর্থাৎ, রাজধানীর কর্মসূচিতে অনিশ্চিত তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী। সে ক্ষেত্রে, রাজঘাটে তৃণমূলে্র ধর্না আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে হবে ‘তৃণমূলের সেনাপতি’ অভিষেককে।
প্রসঙ্গত, ‘দিল্লি চলো’র ডাক প্রথমে দিয়েছিলেন অভিষেকই। বাংলায় ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা আদায়ের দাবিতে গত ২১ জুলাই তৃণমূলের শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, গান্ধীজয়ন্তীতে ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রাখা-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলে রাজধানীর রাজপথে সরব হবে তৃণমূল। দিল্লির রামলীলা ময়দানে অবস্থান-বিক্ষোভের পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু দিল্লি পুলিশ তার অনুমতি দেয়নি। এর পরই তৃণমূলের তরফে বিকল্প কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান, গান্ধীজয়ন্তীতে মমতা, অভিষেক-সহ দলের সকল সাংসদ, বিধায়ক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিল্লির রাজঘাটে প্রার্থনায় বসবেন। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতিও চেয়েছেন তাঁরা। বাংলায় যাঁরা ১০০ দিনের কাজ করেও অর্থ পাননি, তাঁদের লেখা ৫০ লক্ষ চিঠি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হবে। পরের দিন ৩ অক্টোবর দিল্লির যন্তর মন্তরে একই দাবিতে ধর্না কর্মসূচি করবে তৃণমূল। সেই কর্মসূচির নেতৃত্বে মমতা থাকবেন, এমনই ঘোষণা করা হয়েছিল।
স্পেন এবং দুবাই সফর সেরে থেকে শনিবার কলকাতায় ফিরেছেন মমতা। স্পেনেই তাঁর বাঁ হাঁটিতে চোট লেগেছিল। রবিবার বিকেলে এসএসকেএম হাসপাতালে তার চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন তিনি। হাসপাতাল সূত্রে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর বাঁ পায়ের হাঁটুতে সপ্তাহখানেক আগে চোট লেগেছে। উডবার্ন ওয়ার্ডে মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের চিকিৎসা হয়েছে। তাঁর পায়ের এমআরআই-ও করা হয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, মমতা ১০ দিন বিশ্রামে থাকলে আগামী ৪ অক্টোবর, বুধবারের আগে তাঁর বাড়ি থেকে বেরনো সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে দিল্লিতে তিনি যেতে পারবেন না।
চিকিৎসকদের পরামর্শ মানলে আগামী কয়েক দিন মুখ্যমন্ত্রীর নবান্নেও যাওয়া হবে না। যদিও যাবতীয় কাজ তিনি কালীঘাটের বাসভবনে বসেই করতে পারেন। তিনি নিজেও তেমনই চেয়েছেন বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। দিল্লির ধর্না কর্মসূচিতে অংশ নিলে মুখ্যমন্ত্রীকে বেশি হাঁটাহাঁটি করতে হতে পারে। দিল্লিযাত্রার ধকলও রয়েছে। ফলে পায়ের চোট পুরোপুরি না সারলে চিকিৎসকেরাও তাঁকে দিল্লি না-যাওয়ার পরামর্শই দেবেন বলে মনে করছেন অনেকে। তবে তার মধ্যে যদি তিনি একটু ভাল বোধ করেন, তা হলে একদিনের জন্য হলেও মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি যেতে পারেন। সেই সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। তবে তা তাঁর এবং চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তের উপরেই নির্ভরশীল। মমতা দিল্লিতে না যেতে পারলে রাজধানীর ধর্নামঞ্চে অভিষেকই হবেন তৃণমূলের ‘মুখ’। এতে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তাঁর পরিচিতি এবং গুরুত্ব আরও বাড়বে।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের এই দিল্লিসফর ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ হতে চলেছে। ইতিমধ্যে বাংলার প্রতিটি প্রান্তে এই কর্মসূচি পৌঁছে দিতে তোড়জোড় শুরু করেছে শাসকদল। কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে দিল্লিতে তৃণমূলের যাবতীয় কর্মসূচি যাতে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি ব্লকে পৌঁছে দেওয়া যায়, তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। প্রতিটি ব্লকে জায়ান্ট স্ক্রিনের মাধ্যমে দিল্লির প্রতিবাদ কর্মসূচির সম্প্রচার করা হবে। বিভিন্ন জেলার তৃণমূলের সভাপতিদের সেই মর্মে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। প্রতি ব্লকের বিডিয়ো অফিসের সামনে জায়ান্ট স্ক্রিনে দু’দিন ধরে প্রতিবাদ কর্মসূচির সম্প্রচার দেখা যাবে। তাতে যেন ভাল জনসমাগম হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে জেলা সভাপতিদের।