পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
মণিপুর নিয়ে রাজ্য বিধানসভার বাদল অধিবেশনে নিন্দাপ্রস্তাব আনছে তৃণমূল। সোমবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বাদল অধিবেশন শুরু হয়েছে। এই অধিবেশনে মণিপুর নিয়ে নিন্দাপ্রস্তাব আনা হবে বলে সোমবার জানালেন পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। পাল্টা সরব বিজেপি-ও।
গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত মণিপুর নিয়ে প্রথম থেকেই সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার তা নিয়ে নিন্দাপ্রস্তাব আনতে চলেছে তৃণমূল সরকার। এ প্রসঙ্গে সোমবার শোভনদেব বলেন, ‘‘বিধানসভায় প্রস্তাব আনা হবে। গোটা দেশের সঙ্গে আমরাও দুঃখিত। মহিলা, শিশুদের উপর অত্যাচার চলছে। তাঁরা আমাদের দেশেরই নাগরিক। যাঁরা আক্রমণ করছেন, তাঁরাও দেশের নাগরিক। এটা দুর্ভাগ্যজনক।’’ এর পরেই কেন্দ্রকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা দুর্ভাগ্যজনক। একটা রাজ্যের মহিলাদের উপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী দু’-আড়াই মিনিটের জন্য মুখ খুলেছেন। অন্য বিষয়ে উনি খুবই সক্রিয়। অথচ এই ব্যাপারে সক্রিয় নন কেন, এটা ভাবাচ্ছে। নারী নির্যাতনের ঘটনা যে কোনও ভারতীয়ের কাছে লজ্জার।’’ অন্য কোনও রাজ্যের সঙ্গে মণিপুরের ঘটনার তুলনা করা ঠিক নয় বলেও মন্তব্য করেছেন শোভনদেব। তিনি বলেন, ‘‘মণিপুরের পরিস্থিতির সঙ্গে রাজ্যের কোনও ঘটনার তুলনা করা যায় না।’’
এর পাল্টা মন্তব্য করেছেন বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের নিজের জামায় নারী নির্যাতনের আলকাতরা লেগে রয়েছে। আগে সেটা পরিষ্কার করুক। তার পর পর অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলবে।’’
গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত মণিপুর। সম্প্রতি মণিপুরে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে ঘোরানো এবং গণধর্ষণের ঘটনার কথা প্রকাশ্যে এসেছে। একটি ভিডিয়োও প্রকাশ্যে এসেছে সমাজমাধ্যমে। যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। এই ঘটনার পর মণিপুর নিয়ে নতুন করে সরগরম হয়েছে জাতীয় রাজনীতি। ৭৮ দিন মৌনী থাকার পর মণিপুর নিয়ে মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেছেন, ‘‘এই ঘটনা যে কোনও সভ্য সমাজের লজ্জা।’’ মণিপুর নিয়ে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি সরকারকে বিঁধেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীও। ২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চে মোদীকে আক্রমণ করে মমতা বলেছিলেন, ‘‘আপনার মনটা বড় করুন! আপনি বিদেশে গিয়ে দেশের জন্য কাঁদছেন। আর আপনাদের জন্য দেশের মানুষ কাঁদছে। আপনার মনে মা-বোনেদের প্রতি এতটুকু ভালবাসা নেই? এক দিন এই মহিলারাই আপনাদের ছুড়ে ফেলে দেবে! এই সরকার হল বেটি পড়াও, বেটি জ্বালাও!’’
গত ১৯ এবং ২০ জুলাই মণিপুর গিয়েছিলেন তৃণমূল সংসদীয় দলের কয়েক জন সদস্য। সেখানে পাহাড় এবং সমতলের আশ্রয় শিবির পরিদর্শন করার পাশাপাশি বিভিন্ন ছাত্র, গণ সংগঠনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। মণিপুরের রাজ্যপাল অনসুয়া উইকের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছিলেন তাঁরা। বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে তিনি মণিপুর যেতে চান বলে জানিয়েছেন মমতা। এই আবহে এ বার বিধানসভায় মণিপুর নিয়ে নিন্দাপ্রস্তাব আনতে চলেছে তৃণমূল।
অন্য দিকে, বাদল অধিবেশনের তৃতীয় দিনে বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’র সাংসদ এবং বিজেপি সাংসদদের বিক্ষোভে সরগরম হয়ে উঠল সংসদ চত্বর। মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিবৃতি চেয়ে সংসদের বাইরে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে ধর্নায় বসেন বিরোধী সাংসদেরা।