বার্সেলোনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
বাংলায় লগ্নি আনার লক্ষ্যেই স্পেন সফরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাদ্রিদে লা লিগা কর্তার সঙ্গে বৈঠক, বাণিজ্য সম্মেলনও করেছেন। বার্সেলোনাতেও মঙ্গলবার সেই রকম শিল্প সম্মেলন হবে। তার আগেই সেখানে প্রবাসী ভারতীয় এবং বাঙালিদের সঙ্গে আলাপচারিতায় রাজ্যে শিল্পস্থাপনের আর্জি শুনলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতাকে কাছে পেয়েই সরাসরি কলকাতায় লগ্নির ইচ্ছা প্রকাশ করলেন এক প্রবাসী ভারতীয়। জানালেন, কলকাতা বা তার আশপাশে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের কারখানা গড়তে চান তিনি। যা শুনে মুখ্যমন্ত্রীও আমন্ত্রণ জানালেন তাঁকে। তবে শুধু লগ্নির প্রস্তাবই নয়, মমতাকে কাছে পেয়ে কেউ প্রশ্ন করেন পাট শিল্প নিয়ে। কেউ আবার ভারতের রাজনীতিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিয়ে।
রবিবার বার্সেলোনায় প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর আলাপচারিতার অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় শহরের এল প্যালেস হোটেলে। মমতা সেখানে বক্তৃতাও করেন। তার পরেই প্রবাসীদের সঙ্গে কথাবার্তায় অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বাঙালি। অনেক অবাঙালিও। সেই আলাপচারিতায় সতীশ রাই সিঙ্ঘানি নামে এক প্রবাসী ভারতীয় মমতার কাছে কলকাতায় বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের কারখানা গড়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। সতীশ জানান, তিনি বার্সেলোনায় ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং সোগো গ্রুপের চেয়ারম্যান। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘চিন, তাইওয়ানের মতো জায়গায় আমাদের জিনিস তৈরি হয়। রফতানিও হয়। আমরা চাই, আমাদের জিনিস আমাদের দেশেও তৈরি হোক। কলকাতা কিংবা তার আশপাশে কোথাও আমরা কারখানা তৈরি করতে চাই। আমাদের কাছে ভাল শ্রমিক রয়েছে। রয়েছে উন্নত প্রযুক্তিও। আপনি যদি বিষয়টি একটু দেখেন।’’ এ কথা শুনে মুখ্যমন্ত্রীও উজ্জ্বল মুখে বলেন, ‘‘আপনাকে আমরা আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আপনার যা কিছু জানবার আছে, তা আমাদের শিল্পসচিব বন্দনা যাদব এবং মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর থেকে জেনে নিন।’’
আলাপচারিতায় মুখ্যমন্ত্রীকে বাংলার পাট শিল্পে জোর দেওয়ার প্রস্তাব দেন বার্সেলোনার প্রবাসী বাঙালি অরুন্ধতী রক্ষিত। অরুন্ধতী জানান, তিনি দক্ষিণ দমদম পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারপার্সন অঞ্জনা রক্ষিতের কন্যা। বলেন, ‘‘অতিমারির সময় থেকে পাট শিল্পের উপর জোর দেওয়া শুরু হচ্ছে। আমরাও তো পাটের তৈরি জিনিসের উপর জোর দিতে পারি। সেগুলি বিদেশে রফতানির কথা ভাবতে পারি। যেমনটা বাংলাদেশ করছে দীর্ঘ দিন ধরে।’’ এই প্রস্তাব শুনে মমতা বলেন, ‘‘পাট শিল্পে কিছু সমস্যা রয়েছে। ম্যানেজমেন্ট (কর্তৃপক্ষ) আর শ্রমিকদের মধ্যে। প্রায় সব শ্রমিকই বিহার থেকে আসেন। তবে পাটশিল্পকে গুরুত্ব দিতে সরকারও অনেক কিছু ভাবছে। যা সমস্যা রয়েছে, তা যাতে দ্রুত সমাধান করা যায়, আমরা সেই চেষ্টাই করছি।’’
মমতার কাছে ভারতীয় রাজনীতিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিয়েও জানতে চান এক জন। তার জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের পঞ্চায়েত স্তর থেকেই মহিলাদের অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে। সংরক্ষণও দেওয়া হচ্ছে যাতে মহিলারা রাজনীতিতে যোগ দিতে পারেন। তবে শুধু রাজনীতিই, সব ক্ষেত্রেই মহিলাদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। সরকারও তাঁদের জন্য নানা রকম প্রকল্প গ্রহণ করেছে— যেমন কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী। মহিলাদের জন্য আইসিডিএস প্রকল্প চালু রয়েছে। এখন মহিলারা অনেক বেশি স্মার্ট। তাঁরা ভীষণ খাটতে পারে। আমার ওঁদের দেখে সত্যিই ভীষণ ভাল লাগে।’’
বাংলার দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কো আবহমান আতিহ্যের তকমা দিয়েছে। সেই ঘোষণার পর এ বারই প্রথম পুজো। সে কথা উল্লেখ করেন মমতা। দুর্গাপুজোতে রাজ্যে আমন্ত্রণ জানান মুখ্যমন্ত্রী। রবিবার মমতা বার্সেলোনা পৌঁছনোর খানিক ক্ষণ আগেই ইউনেস্কো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ হিসাবে ঘোষণা করেছে। তা উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘‘আজ আমাদের বড় গর্বের দিন।’’