রকমারি মাস্ক। প্রতীকী চিত্র।
হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস (এইচএমপিভি)নিয়ে ভয় বা আতঙ্কের কারণ নেই। এই ভাইরাসের অস্তিত্বও নতুন নয়, জানিয়েছে কেন্দ্র। গত কয়েক দিনে বেঙ্গালুরু, অহমদাবাদ, নাগপুর, কলকাতাতে শিশুর দেহে হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস মেলার খবর ছড়াতেই এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে থাকে। তবে সাবধান হওয়ায় ক্ষতি নেই।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নড্ডা জানিয়েছেন, শিশু নয়, যে কোনও বয়সের মানুষই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। শীতকালে এবং বসন্তের শুরুর দিকে এই ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। তবে এতে আতঙ্কের কারণ নেই।
চিকিৎসকেরা বলছেন, ভয়ের কারণ না থাকলেও সাবধানের মার নেই। এইচএমপিভির সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে আরও বেশি করে সচেতনতা বৃদ্ধিরও প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্রও। বিশেষ করে সাবান এবং জল দিয়ে হাত ধোয়া, অপরিষ্কার হাত চোখে, নাকে বা মুখে না দেওয়া, হাঁচি-কাশির সময়ে নাক-মুখ ঢেকে নেওয়ার উপর জোর দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, যাঁদের শরীরে কোনও উপসর্গ রয়েছে, তাঁদের খুব কাছাকাছি না যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। বেঙ্গালুরুতে দুই শিশু ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরে গত সোমবার কয়েক দফা নির্দেশিকা জারি করেছে কর্নাটক সরকার। তাতে হাঁচি বা কাশির সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখা, মাস্ক পরা, একই রুমাল বার বার ব্যবহার না করা এমন নানা নিয়মবিধি রয়েছে।
শুধু ভাইরাস থেকে বাঁচতে নয়, মরসুম বদলে বা শীতের সময়ে হাঁচি, কাশি, জ্বর, ফ্লু এড়াতে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কারণ, একজনের হাঁচি-কাশির ছিটে অন্যের শরীরে প্রবেশ করলে তিনিও রোগাক্রান্ত হতে পারেন। বাজারে নানা ধরনের মাস্ক পাওয়া যায়। কোনওটি কাপড়ের, কোনওটি ত্রিস্তরীয়। সংক্রমণ ঠেকাতে কোন মাস্ক উপযোগী? কী বলছেন চিকিৎসকেরা?
ফরিদাবাদের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক রবি শেখর ঝা বলছেন, ‘‘শ্বাসজনিত সংক্রমণ এইচএমপিভি ঠেকাতে কাপড়ের মাস্ক ন্যূনতম সুরক্ষা দিতে পারে। কাশি, হাঁচির সময় নির্গত বায়ুবাহিত কণা বড় হলে সেটি কাপড়ের মাস্ক ঠেকাতে পারে, তবে সূক্ষ্ম কণা নয়।’’
চিকিৎসকের কথায়, অসুস্থ ব্যক্তির হাঁচি, কাশির সময় নির্গত ছিটে বা অপেক্ষাকৃত সূক্ষ্ম কণা প্রতিরোধের জন্য সার্জিক্যাল মাস্ক কার্যকর। তবে সবচেয়ে ভাল সুরক্ষা বর্ম হতে পারে এন নাইনটি ফাইভ। বায়ুবাহিত ভাইরাস, কণা ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত আটকে দিতে পারে মাস্কটি। অত্যন্ত জনবহুল স্থানে যেতে হলে বা অসুস্থ ব্যক্তির কাছাকাছি যেতে হলে এই ধরনের মাস্ক উপযুক্ত।
মাস্ক পরার নিয়মকানুন
মাস্ক শুধু কিনলেই হল না, তা মুখে ঠিকমতো বসছে কি না দেখা দরকার।
কাপড়ের মাস্ক হোক বা সার্জিক্যাল মাস্ক কিংবা এনাইনটিফাইভ, নাক এবং মুখগহ্বর দুটোই যেন ঢাকা থাকে।
মাস্ক খুব বেশি শক্ত হয়ে নাকে, মুখে বসলে শ্বাস নিতে কষ্ট হবে। তা যেমন আলগা হবে না, তেমনই খুব চেপে যেন না বসে। সার্জিক্যাল মাস্ক পরার পর মুখের দু’পাশে ফাঁক থাকলে সেখান দিয়েও ভাইরাস হানা দিতে পারে।
চিকিৎসক বলছেন, বাড়তি সুরক্ষা বর্মের দরকার হলে এনাইনটিফাইভ পরা যেতে পারে। তা না পেলে সার্জিক্যাল মাস্ক। তবে তার উপরে কাপড়ের মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। একটি যথেষ্ট।
মাস্কের ব্যবহার বিধি
ধুলো, ধোঁয়া, রোগ সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করলেও, পরিচ্ছন্নতা ভীষণ জরুরি। চিকিৎসকেরা সতর্ক করছেন, বার বার মাস্কে হাত দিলে, অপরিচ্ছন্ন মাস্ক দিনের পর দিন ব্যবহার করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। মাস্ক ধরলে তার পর হাত সাবান দিয়ে ধোয়া বা স্যানটাইজ়ার ব্যবহার করা জরুরি। পাশাপাশি, ব্যবহারের পর মাস্ক যেখানে-সেখানে ছুড়ে ফেললে হবে না। প্লাস্টিক বা কাগজে মুড়ে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গায় তা ফেলতে হবে।