মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। ছবি: পিটিআই
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়কে কলকাতা পুলিশের আওতায় আনার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার আলিপুর বডিগার্ড লাইনে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকেই ভাঙড়ে কলকাতা পুলিশের আলাদা ডিভিশন করার জন্য কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে নির্দেশ দেন তিনি। রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালবীয়কেও এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক মহলের একাংশ মনে করছেন, ভাঙড়ের ধারাবাহিক অশান্তিতে লাগাম পরাতেই এই পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা অনেক দিন ধরেই বলছি, বারুইপুর জেলা পুলিশ, কাশীপুর থানা কাজ করতে পারছে না। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা তাতেই সিলমোহর দিল। এতে যদি ভাঙড়ের মানুষ শান্তিতে থাকে তাহলে ভালই। আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি।’’ পাশাপাশিই, আইএসএফ বিধায়কের বক্তব্য, ‘‘কিন্তু যদি পুলিশ দিয়ে ভাঙড় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হয়, তা হলে বিধায়ক হিসাবে আমি তা মেনে নেব না।’’
অন্য দিকে, সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ভাঙড়ের মধ্যেই পড়ে লেদার কমপ্লেক্স থানা। সেই থানাকে অনেক দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা পুলিশের আওতায় এনেছিলেন। তাতে লাভ কী হয়েছে? ওখানে তো খুন, ছিনতাই, গন্ডগোল সবচেয়ে বেশি।’’
পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকেই রাজনৈতিক হিংসায় উত্তপ্ত থেকেছে ভাঙড়। বার বার তৃণমূল এবং ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর সংঘর্ষ হয়েছে সেখানে। এমনকি পুলিশকে লক্ষ্য করেও হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে একাধিকবার। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। ক্রমাগত অশান্তির ঘটনায় ভাঙড়ে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। মঙ্গলবার রাতেও অশান্ত হয়ে ওঠে ভাঙড়। পুলিশের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করেন ভাঙড়ের কাটাডাঙা এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারা বিবি এবং তাঁর পরিবার। বৃদ্ধা আনোয়ার দাবি করেন, তাঁর ছেলে আইএসএফ কর্মী। পুলিশ তাঁর খোঁজে বাড়িতে আসে। তাঁদের পরিচয়পত্র চাওয়া হয়। তা দিতে অস্বীকার করায় মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। আনোয়ারার বৌমা বাড়ি ভাঙচুরের ছবি দেখান।
পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার পর থেকেই উত্তপ্ত হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় বিধানসভা। তৃণমূল এবং আইএসএ কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এখনও পর্যন্ত দুই দল মিলিয়ে মোট ছয় জন নিহত হয়েছেন সেখানে। তার পরেও থেমে থাকেনি ভাঙড়ের রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা। পঞ্চায়েত ভোট পর্ব মিটে গেলে ভাঙড়ে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল প্রশাসন। যার ফলস্বরূপ নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে ঢুকতে পারেননি বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। উল্লেখ্য, ২০২১ সালে রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের বিপুল জয়ের মধ্যেও ভাঙড়ে জয়ী হয়েছিলেন আইএসএফ মনোনীত বিধায়ক নওশাদ। এর পর ভাঙড়ের রাজনৈতিক জমি উদ্ধারের দায়িত্ব ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লাকে দেন মমতা।
কিছু দিন আগেই ভাঙড় থেকে ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান শওকত। তা নিয়ে অবশ্য শওকতকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি আইএসএস বিধায়ক। নওশাদের কথায়, ‘‘ভাঙড়ে আসলে অশান্তি থামাতে নয়, বিরোধী দল যাতে সেখানে প্রবেশ না করতে পারে, সেই জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সেই ১৪৪ ধারার কারণে আমি নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে ঢুকতে পারিনি। এখন তৃণমূল বিধায়ক এ সব কথা বলে ভাঙড়ের মানুষের ক্ষোভ থেকে বাঁচতে চাইছেন।’’ সম্প্রতি ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম এবং শওকত সাংবাদিক সম্মেলন করে ভাঙড়কে বাম আমলের জঙ্গলমহলের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে মুখ্যমন্ত্রীকে পদক্ষেপ করারও আর্জি জানিয়েছিলেন তাঁরা।