Manik Bhattacharya

মানিকের বিরুদ্ধে ১০০ পাতার নতুন এফআইআর, জেরা শেষে ছ’ঘণ্টা পরে জেল ছাড়ল সিবিআই

মঙ্গলবার রাতের পর বুধবার সকাল ৯টা নাগাদ প্রেসিডেন্সি জেলে পৌঁছয় সিবিআইয়ের তিন সদস্যের দল। মানিক ভট্টাচার্যকে জেরার পর প্রায় ৬ ঘণ্টা পর জেল থেকে বেরোন তদন্তকারীরা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৩ ১৭:২১
Filed FIR against Manik Bhattacharya and interrogated him for six hours, CBI officials left Presidency Jail

মানিক ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।

শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে প্রায় ৬ ঘণ্টা জেরা করার পর প্রেসিডেন্সি জেল থেকে বেরোলেন সিবিআই আধিকারিকেরা। মঙ্গলবার রাতেই মানিকের বিরুদ্ধে প্রায় ১০০ পাতার এফআইআর দাখিল করেছে সিবিআই। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০ (প্রতারণা), ১২০বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র), ৪৬৭ (নথি জাল করা, নকল নথি বানানো), ৪৬৮ (জালিয়াতি) নম্বর ধারায় এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৭, ৭এ ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে সিবিআই। সিবিআই সূত্রের খবর, জেরায় তদন্তকারীদের সঙ্গে পুরোপুরি সহযোগিতা করছেন না মানিক।

বুধবার কলকাতা হাই কোর্টে সিবিআই জানায়, মানিকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থার তরফে জানানো হয়, বুধবার দীর্ঘ ক্ষণ মানিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এই মামলাটি নিয়ে অনেক কিছু বলেছেন তিনি। সব কিছুর ভিডিয়ো রেকর্ড করা হয়েছে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মানিককে জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিয়ো ফুটেজ আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে সিবিআইকে।

Advertisement

দ্বিতীয় দফায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার সকালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে পৌঁছন সিবিআই আধিকারিকেরা। প্রাথমিকে পোস্টিং-দুর্নীতি নিয়ে মানিককে জেরা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতির নির্দেশ অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত প্রায় দু’ঘণ্টা মানিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআইয়ের চার আধিকারিক। সিবিআইয়ের এসপি কল্যাণ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে জেলে গিয়ে মানিককে জেরা করেন দু’টি পৃথক মামলার তদন্তকারী আধিকারিক মলয় দাস, ওয়াসিম আক্রম খান-সহ চার জন। হাই কোর্টের নির্দেশে এই জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিয়োগ্রাফিও করা হয়। মঙ্গলবার রাতেই মানিকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে সিবিআই।

বুধবার সকাল ৯টা নাগাদ আবারও প্রেসিডেন্সি জেলে যায় তদন্তকারীদের তিন জনের একটি দল। সিবিআইয়ের এক জন ভিডিয়োগ্রাফারও তদন্তকারীদের সঙ্গে ছিলেন। পোস্টিং-দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়েই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে সিবিআই সূত্রের খবর। নিয়োগ দুর্নীতির অন্য মামলায় অভিযুক্ত হয়ে জেল হেফাজতে থাকা মানিককে সিবিআই নিজের হেফাজতে নিয়ে জেরা করবে কি না, তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়।

প্রাথমিক শিক্ষকদের ‘পোস্টিং’ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে একটি মামলা করেন সুকান্ত প্রামাণিক। মঙ্গলবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে সেই মামলাটির শুনানি হয়। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ ছিল, প্রাথমিকের নিয়োগে পরিকল্পিত ভাবে দুর্নীতি হয়েছে। যার নেপথ্যে রয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি মানিক। মানিক ছক কষে দুর্নীতি (ডিজ়াইনড করাপশন) করেছেন। এর পরেই বিচারপতি জানান, মানিককে জেরা করার প্রয়োজন রয়েছে। তাঁর মতে, ‘‘যে ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’’

এই জিজ্ঞাসাবাদের ভার তিনি সিবিআইয়ের উপরেই দেন। জানান, দক্ষ আধিকারিকদের জেলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। রাত সাড়ে ৮টা থেকে শুরু করতে হবে জিজ্ঞাসাবাদ। এজলাসে বসেই সিবিআইয়ের আধিকারিকদের মামলার বিষয়বস্তু বুঝিয়ে দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি এ-ও নির্দেশ দেন যে, এ বিষয়ে তদন্তকারী আধিকারিকদের সাহায্য করবেন জেলের সুপার। অসহযোগিতার অভিযোগ এলে আদালত কড়া পদক্ষেপ করবে বলেও জানান বিচারপতি। এমনকি, এই মামলায় ইডি-কেও যুক্ত করার নির্দেশ দেন তিনি। জানিয়ে দেন, এই মামলায় কোনও আর্থিক তছরুপ হয়ে থাকলে তদন্ত করতে পারবে ইডি। মঙ্গলবার থেকেই শুরু করা যাবে তদন্ত। সিবিআইকে জিজ্ঞাসাবাদের দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি, তাদের তদন্ত নিয়েও অসন্তোষও প্রকাশ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি জানান, প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও যাবেন তিনি। কারণ, সিবিআইকে নিয়োগ করেন তিনিই।

Advertisement
আরও পড়ুন