সোমবার তৃণমূল ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে থাকবেন মমতা এবং অভিষেক। ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের শীর্ষ সাংগঠনিক স্তর ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে আগামী সোমবার। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে ওই বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ ওয়ার্কিং কমিটির ২১ জন সদস্যই হাজির থাকতে বলা হয়েছে বলে শুক্রবার তৃণমূলের মুখপত্রে জানানো হয়েছে।
দলের তরফে জানানো হয়েছে, জাতীয় পর্যায়ে দলের অভিমুখ কী হবে, সে কথাই বৈঠকে জানাবেন মমতা এবং অভিষেক। পাশাপাশি, সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে তৃণমূল সাংসদেরা কী ভূমিকা নেবেন, তা-ও ঠিক করে দেওয়া হবে।
গত কয়েক মাসে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন সর্বভারতীয় স্তরের কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তাঁদেরই অন্যতম, গাঁধী পরিবারের একদা ঘনিষ্ঠ হরিয়ানা প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অশোক তনওয়ারকেও ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তৃণমূলের মুখপত্রে বলা হয়েছে, ‘দলের বাকি নেতাদের সঙ্গে তাঁকে (অশোক) আলাপ-পরিচয় করানো হবে।’
চলতি বছরের মার্চে তৃণমূলে যোগ দিয়েই ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যপদ পেয়েছিলেন অটলবিহারী সরকারের বিদেশ এবং অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিন্হা। এর পর গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরো, অসমের প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব, উত্তরপ্রদেশের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমলাপতি ত্রিপাঠীর পৌত্র এবং প্রপৌত্র, রাজেশপতি এবং ললিতেশপতি। এঁদের মধ্যে ফেলেইরোকে দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি এবং ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যপদ দেওয়া হয়। ফেলেইরো এবং সুস্মিতাকে রাজ্যসভায় পাঠান মমতা।
মমতা সাম্প্রতিক দিল্লি সফরের সময় অশোক ছাড়াও প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার তথা প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ কীর্তি আজাদ (তিনি ছিলেন কংগ্রেসে) এবং প্রাক্তন জেডি (ইউ) সাংসদ পবন বর্মা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার মেঘালয়ের ১১ জন কংগ্রেস বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে জোড়াফুল শিবিরে শামিল হয়েছেন সে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা মুকুল সাংমা। ঘটনাচক্রে, এঁদের মধ্যে অধিকাংশই কংগ্রেসি বা প্রাক্তন কংগ্রেসি।
এই পরিস্থিতিতে দলকে সর্বভারতীয় চেহারা দিতে নতুন যোগ দেওয়া সদ্য যোগদানকারী কয়েক জনকে শীর্ষ সাংগঠনিক স্তরের সদস্যপদ বা আমন্ত্রিত সদস্য করা হতে পারে বলে তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে। অশোককে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে আমন্ত্রণ ‘ইঙ্গিতবাহী’ মনে করছে তারা।
২০০৯ সালে হরিয়ানার সিরসা লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন অশোক। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে হেরে যান। এর কিছু দিন পরেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডার সঙ্গে মতবিরোধের জেরে দল ছাড়েন একদা রাহুল গাঁধীর টিমের ওই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। প্রসঙ্গত, অশোকের স্ত্রী অবন্তিকা গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেনের তুতো বোন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে নতুন দল ‘অপনা ভারত মোর্চা’ গড়ার কথা ঘোষণা করেন অশোক। সেই কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে হাজির ছিলেন তাঁর দীর্ঘ দিনের বন্ধু, ত্রিপুরার ‘মহারাজা’ তথা ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি প্রদ্যোৎ দেববর্মন।
বছর দুয়েক আগে কংগ্রেস ছেড়ে নয়া রাজনৈতিক মঞ্চ ‘তিপ্রা মথা’ গড়েছিলেন প্রদ্যোৎ। গত এপ্রিলে সে রাজ্যের স্বশাসিত উপজাতি পরিষদের নির্বাচনে বিজেপি-আইপিএফটি জোটকে পর্যুদস্ত করে ক্ষমতা দখল করেছে ‘তিপ্রা মথা’। ত্রিপুরায় ৬০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ উপজাতি পরিষদের এলাকায়। সেখানে তৃণমূলের সঙ্গে প্রদ্যোৎ হাত মেলালে বিজেপি বিপাকে পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সম্ভাব্য সেই ‘সেতুবন্ধে’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন অশোক।