আগরতলা পুরনিগম ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে এক জনের ভোট অন্য জন দিচ্ছেন! টুইটার থেকে নেওয়া।
গনগনে ভোটের আঁচ থেকে বেরিয়ে একটু জিরিয়ে নেওয়ার ফুরসত মিলেছে সবে। চার পাশে এলাকাতেও বেশ শান্তির ভাব। থানায় বসে পুলিশ আধিকারিক বলছেন, ‘‘এখানে তো মাত্র একটা ওয়ার্ডে ভোট। বাকি সব ফয়সালা হয়ে গিয়েছে। ভোট নেই, তাই ঘটনাও নেই!’’
কথা শেষ হতে না হতেই ফোন এল একটা। তড়িঘড়ি উঠে গাড়ি বার করতে বললেন এসডিপিও। একটু পরে একই পথ নিলেন জিরানিয়ার ডিসিএম মুনমুন দেববর্মাও। বলে গেলেন, ‘‘এলে আমার পিছনে থাকবেন।’’ অগত্যা আবার দৌড়!
জিরানিয়া স্টেশনের রেলব্রিজের উপরে পৌঁছে দেখা গেল, নীচে রেললাইন ধরে ‘পজ়িশন’ নিয়েছে সিআরপিএফ। তার পাশের মেঠো পথ ধরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দৌড়চ্ছেন এসডিপিও সুমন মজুমদার। গোটা তল্লাট জুড়ে উত্তেজনা ব্যাপক। বুথের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে নিরস্তই হতে হল। বুথ ঘিরে থাকা উত্তেজিত জনতা জানাচ্ছে, এলাকার কয়েক জন ভোট দিতে এসে দেখেন তাঁদের ভোট পড়ে গিয়েছে। প্রায় ৭০% ভোট পড়ে যাওয়ার পরেও শাসক দলের বাহিনী নিজের হাতে ভোটের দায়িত্ব তুলে নিয়েছিল। তখনই বাইরে থেকে ঘিরে ফেলে জনজাতি প্রধান দল ‘তিপ্রা মোথা’। সেখান থেকেই গণ্ডগোল।
গোলমালের মধ্যেই সেখানে এসে পড়েছিলেন জনজাতি এলাকার স্বশাসিত পরিষদের (এডিসি) চেয়ারম্যান জগদীশ দেববর্মা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টার পরে তিনি বললেন, ‘‘এখানে এই একটা মাত্র ওয়ার্ডে ভোট। বাকি সব ওরা (বিজেপি) জিতে নিয়েছে, কাউকে দাঁড়াতে দেয়নি। তার পরেও জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। আমাদের লোকজন দু’দিক থেকে তৈরি ছিল।’’ একটু দূরে দাঁড়ানো পুলিশের এক আধিকারিকের মুখে ইঙ্গিতপূর্ণ একটা হাসি দেখা গেল। যার একটাই মানে হয়— বুঝে নিন, কী অবস্থা!
মনে পড়ছিল, দলবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে এখানে না হয় জাল ভোটের বাহিনী বেকায়দায় পড়েছে। আগরতলার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে একটা বুথে ইভিএমের ঘেরাটোপে এক মহিলা ভোটার থাকার সময়ে শাসক দলের এক কর্মী (পরে তাঁর নাম প্রকাশ করেছে বিরোধী সিপিএম) বাইরে থেকে বেমালুম নিজের দলের বোতামটা টিপে দিয়েছেন! মনে পড়ছিল, জিবি বাজারের কাছে ওষুধের দোকানের আড়ালে ঘুপচি ঘরে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর ভয়ার্ত মুখটা।
রাজ্যপাল থেকে মুখ্যসচিব যে ‘ভিআইপি’ বুথে ভোট দেন, আগরতলার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সেই বুথেই এজেন্টদের রক্তাক্ত করে বার করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের প্রার্থী শ্যামল পালও রেহাই পাননি। বাড়ির সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়ে লুকিয়ে বসেছিলেন। দেখা করতে চাই শুনে নিজের ওষুধের দোকানের পিছনে গোপনে ডেকে নিয়েছিলেন। শ্যামলবাবু বলছিলেন, ‘‘এক দিন পেটানি খেয়েছি, এটা বড় কথা নয়। ভাবতে কষ্ট হচ্ছে, কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে গিয়ে ‘চলো পাল্টাই’ স্লোগান দিয়ে বামফ্রন্ট শাসনের অবসান এনেছিলাম এই দিন দেখব বলে? পুরোপুরি সমাজবিরোধীদের রাজত্ব চলছে।’’ আতঙ্কে অস্থির হতে হতেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘উল্টোপাল্টা কথা বলে দেন বলে মুখ্যমন্ত্রীকে বোকা ভাববেন না! যা হচ্ছে, সব কিছুর মাথায় উনিই!’’
জিরানিয়ার সেই রেলব্রিজ বা আগরতলার ওষুধের দোকানের ঘুপচি, কোথাও ছবি তোলার উপায় ছিল না। তবে গণতন্ত্রের উৎসবের যে ছবি দেখা হল, মনে রাখতে ক্যামেরা লাগবে না!