ছবি: সংগৃহীত।
রামমন্দির প্রসঙ্গে মমতা বললেন, ‘‘আমি রামের বিরুদ্ধ নই। রাম-সীতাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তোমরা তো কই সীতার কথা বল না! তোমরা কি নারীবিরোধী? সীতা না থাকলে রাম হয় না। আর কৌশল্যা দেবী না থাকলে, মা না থাকলে রামের জন্ম হয় না। মায়েরাই জন্ম দেয়। ১৪ বছর বনবাসে সীতাই রামের সঙ্গে ছিলেন। আবার তাঁকে নিজেকে প্রমাণ করতে অগ্নিপরীক্ষাও দিতে হয়েছিল। আমরা জানি। আমরা তাই নারীশক্তি দুর্গার পুজো করি। রামই সেই দুর্গার পুজো করেছিলেন রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে যাওয়ার আগে।’’
মমতা বললেন, ‘‘এরা খাবার পয়সা দেয় না। রাস্তার পয়সা দেয় না। বাংলা থেকে করের টাকা তুলে নিয়ে চলে যায়। আর আজ দেখুন সব জায়গায় এলইডি স্ক্রিন লাগিয়ে, সাজিয়ে গুছিয়ে কী করেছে। আমি বলব, গরিবদের বলি দিয়ে ধর্ম করবেন না।’’
মমতা বলেন, ‘‘সকাল থেকে যা হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে স্বাধীনতা সংগ্রাম হচ্ছে এমন প্রচার শুরু হয়েছে। কিন্তু এর পরের দিন থেকে কী হবে? ’’
মমতা বললেন, ‘‘যখন বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়েছিল, আমি একা পথে নেমেছিলাম। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর কাছে গিয়েছিলাম। বলেছিলাম, কোনও প্রয়োজন আছে কি না। ভয় না পেয়ে সমস্ত জায়গায় গিয়ে ত্রাণ দিয়ে এসেছিলাম। এসব অনেকে ভুলে গিয়েছে। ’’
মমতা বললেন, ‘‘জয় বাংলা, জয় সম্প্রীতি। সব ধর্ম ভাই ভাই। দেশকে ভাগ করতে দেব না। আমরা শান্তি চাই।’’
মমতা বললেন, ‘‘বেচারা নেতাজি। এত লড়াই করলেন স্বাধীনতার জন্য। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের জন্মদিনে ওদের জাতীয় ছুটির দিবস ঘোষণা করতে বলেছিলাম। বলে দিয়েছিল হবে না। আর আজ ওরা ছুটি চাইছে। ছুটি দিচ্ছে। কারণ আজ নাকি ওদের স্বাধীনতার দিন। জানি না, ওরা নতুন করে কী স্বাধীনতা পেয়েছে। ওদের কি রাজনৈতিক স্বাধীনতার দিন? যদিও স্বাধীনতা আন্দোলনে এদের কারও টিকিটিও ছিল না। আর আজ ওরা বলছে সবাইকে ছুটি দিয়েছি। বাড়িতে থাকো আর আমাদের কথা শোনো।’’
মমতা বললেন, ‘‘একটা লড়াই শুরু হয়েছে। আর এই লড়াই চলবে। আমরা না ভয় পেয়ে লড়ব। আমরা কাপুরুষ নয়। তাই আমরা লড়ব। ’’
‘‘ বিরোধী জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ আমি দিয়েছি, অথচ বৈঠকে সম্মান পাই না’’, বললেন মমতা। বললেন, ‘‘সিপিএম বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক নিয়ন্ত্রণ করে। আমি সেটা মানব না।’’
আগুন জ্বালানো সহজ, নেভানো সহজ নয়, বললেন মমতা।
মমতা বললেন, ভোটের আগে ধর্মে উসকানি দেওয়া হচ্ছে। বাংলাকেই এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে।
অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে মমতা বললেন, ভোটের নামে দেশটাকে বিক্রি করছে কিছু লোক।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, আপনারা আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা শুনতে এসেছেন, আমি বক্তব্য দীর্ঘায়িত করব না।
অভিষেক বললেন, গরীবদের বঞ্চিত করে ধর্ম নিয়ে বিভাজন করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের নেত্রী বার বার বলেছেন ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আমরা বাড়ির ভিতরে ধর্ম করব। বাইরে নয়।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, আজকের দিনটা আমার কাছে গর্বের। কারণ যেদিন দেশে একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে ঘিরে ভেদাভেদ চলছে, তখন বাংলায় ধর্মীয় সংহতি যাত্রা হচ্ছে।
সংহতি যাত্রার মঞ্চে নাখোদা মসজিদের ইমাম বললেন, ‘‘দেশে যখন ভেদাভেদের পরিবেশ, তখন মমতা একা বাঘিনীর মতো সংহতির কথা বলছেন। ঘৃণার পরিবেশে ভালবাসার স্তবক নিয়ে ঘুরছেন। সমস্ত ধর্মকে ভালবাসার যে পথ আপনি দেখিয়েছেন, তা একদিন আপনাদের দেশের শীর্ষে পৌঁছে দেবে’’।
পার্ক সার্কাস ময়দানে মমতার ‘সংহতি যাত্রা’র মঞ্চে উপস্থিত রয়েছেন সমস্ত ধর্মের প্রতিনিধিরা। রয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল রাজ্যসভাপতি তথা তৃণমূল সাংসদ সুব্রত বক্সী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। রয়েছেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও।
সোমবার দুপুর ৩টেয় হাজরা থেকে শুরু হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সংহতি মিছিল। প্রথমে কালীঘাটের মন্দিরে গিয়ে পুজো করেন মমতা। তার পরে একে একে গুরুদ্বার, মসজিদ এবং গির্জায় গিয়ে প্রার্থনা করেন। মিছিলে তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা। তাঁদের সঙ্গে নিয়েই মমতা পৌঁছন পার্ক সার্কাস ময়দানে সংহতি মিছিলের সভা মঞ্চে।