মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।
মমতা বলেন, ‘‘বাংলাদেশে যদি পড়াশোনার সূত্রে কেউ গিয়ে থাকেন, কেউ যদি চিকিৎসার জন্য গিয়ে আটকে পড়েন, কোনও রকমের সহযোগিতার দরকার হলে আমরা পাশে আছি।’’ তার পরই তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ নিয়ে কিছু বলব না, ওটা আলাদা দেশ। যা বলবে, ভারত সরকার বলবে। আমি এটুকু বলতে পারি, যদি অসহায় মানুষ বাংলার দরজায় খটখট করে তবে আমরা আশ্রয় নিশ্চয়ই দেব। রাষ্ট্রপুঞ্জের একটা নির্দেশ আছে, কেউ যদি শরণার্থী হন, তবে তার পাশের এলাকা সম্মান জানাবে। বাংলাদেশ নিয়ে আমরা যেন কোনও প্ররোচনায় পা না-দিই, আমরা যেন উত্তেজনায় না-জড়াই। যারই রক্ত ঝরুক, তাদের সঙ্গে আমাদের সহমর্মিতা আছে। আমরাও খবর রাখছি। ছাত্রছাত্রীদের তাজা প্রাণ চলে যাচ্ছে। আমার কিছু বলার নেই।’’
মমতা বলেন, ‘‘তৃণমূল করতে গেলে সকলকে নিয়ে চলতে হবে। যেখানে যেখানে জিতেছেন, সেখানে সেখানে গিয়ে মানুষকে ধন্যবাদ জানাবেন। মানুষের জন্য কাজ করবেন। যেখানে যেখানে আমরা জিতিনি, সেখানকার মানুষের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবেন। মনে রাখবেন গাড়িতে ঘোরার চেয়ে পায়ে হেঁটে ঘোরা ভাল। তাতে শরীর-মন ভাল থাকে। বড় গাড়িতে ঘোরার থেকে স্কুটার, সাইকেলে ঘোরা ভাল।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমরা দুর্নীতির কাছে মাথা নত করব না। এটা আজকে শপথ নিন। আমরা লড়াই করব।’’ তার পরেই তিনি বলেন, ‘‘বৃষ্টি গায়ে লাগল তো? এ তো স্নান করলে ধুয়ে যাবে, কিন্তু নোংরা গায়ে লাগলে সেটা ধোয়া যায় না। কেউ যেন আপনাকে লোভী বানাতে না পারে। আমাদের শপথ নিতে হবে, দুর্নীতির সঙ্গে কোনও আপস নয়। যাঁরা নির্বাচিত হয়ে মানুষের সেবা করবেন না, তাঁদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখব না।’’
ধর্মতলার মঞ্চ থেকে বিজেপিকে আক্রমণ করেন তৃণমূলনেত্রী। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি আন্দোলনে পারে না। আমার কাছে ১০ লক্ষ সরকারি চাকরি তৈরি আছে। কিন্তু আমি কিছু করতে গেলে আদালতে ছোটে তারা। কখনও বলছে ২৬ হাজারের চাকরি খাই, কখনও বলছে ৪২ হাজারের চাকরি খাই, কখনও বলছে ওবিসি উঠিয়ে দাও। উঠবে না। আমরা আইনি লড়াই করছি, করে যাব।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমরা বাংলার অস্তিত্ব রক্ষা করব। বাংলাই দেশের অস্তিত্ব রক্ষা করবে।’’
দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘অন্যায় করলে আমি দলের কাউকে ছাড়ি না। গ্রেফতার করি। অন্যায় করবেন না, অন্যায় সহ্য করবেন না। আমি পরিষ্কার বলছি, মা-বোনেদের সম্মান দেবেন।’’
মমতা তৃণমূলের সকল বিধায়ক, কাউন্সিলর, সাংসদ, নেতা-নেত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘‘যেন কারও বিরুদ্ধে দল কোনও অভিযোগ না পায়। অভিযোগ পেলে দল উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব। আমি চাই আপনারা গরিব থাকুন। তার মানে ঘরে যা আছে, সেটা খেয়ে বেঁচে থাকুন। লোভ করার দরকার নেই।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমি দলে বিত্তবান লোক চাই না। বিবেকবান লোক চাই। কেন জানেন? পয়সা আসে, চলে যায়। কিন্তু সেবার কোনও বিকল্প নেই।’’
মমতার বক্তৃতার মাঝেই শুরু বৃষ্টি। তবে তৃণমূলনেত্রী বৃষ্টিতে ভিজেই বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, ‘‘২১ জুলাই একটু বর্ষা তো হবে। এটা ঈশ্বরের আশীর্বাদ। শহিদের চোখের জল। এই জল দেখে ভয় পাবেন না।’’
ধর্মতলার মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, ‘‘আমরা দায়িত্বে আসার আগে দারিদ্রসীমার নীচে ছিলেন ৫৭.৬ শতাংশ মানুষ। আমাদের জমানায় তা ৪০ শতাংশ কমে গিয়েছে।”
তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘আমরা একমাত্র রাজনৈতিক দল, যারা লোকসভায় ৩৮ শতাংশ নির্বাচিত মহিলা প্রতিনিধি পাঠিয়ে দিয়েছি। তাঁরা আমাদের সম্পদ। একটা পার্টির সম্পদ সবাইকে নিয়ে চলা।’’
মমতা বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের একতরফা আচরণের পরেও লোকসভা নির্বাচনে, বিধানসভা উপনির্বাচনে মানুষ আমাদের পাশে থেকেছেন। এজেন্সির ধমকানি-চমকানির পরেও বিজেপি-কংগ্রেস-সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করে জিতে এসেছি, তাতে স্যালুট জানাই বাংলার মানুষকে। যাঁরা আমাদের সমর্থন দেননি, আগামী দিন তাঁদের কাছে সমর্থন আশা করব। সাধারণ মানুষ ছাড়া তৃণমূল পথ চলতে পারে না। আমরা যত জিতব, আমাদের তত নরম হতে হবে। যত জিতব, তত আমাদের দায়িত্ব বাড়বে। উত্তরবঙ্গে আমাদের রেজাল্ট খারাপ হয়েছে, আশা করব ভবিষ্যতে তারা আমাদের সমর্থন করবে।’’
অখিলেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তৃতা শুরু করলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় আসার জন্য অখিলেশকে ধন্যবাদ। দিল্লির সরকার বেশি দিন টিকবে না। উত্তরপ্রদেশে অখিলেশে খেলা দেখিয়েছে। বিজেপির তো সরে যাওয়া উচিত ছিল।’’
দুপুর ১টা ১০ মিনিট নাগাদ তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্মতলার সভাস্থলে পৌঁছন। সঙ্গে ছিলেন অখিলেশ যাদব। তাঁকে দেখেই ধর্মতলার ভিড় থেকে উল্লাসধ্বনি ওঠে। হাততালি দিয়ে মমতাকে স্বাগত জানান উপস্থিত সকলে।
কালীঘাট থেকে তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ মঞ্চের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে রয়েছেন অখিলেশ যাদব। তাঁরা যখন কালীঘাটের বাড়ি থেকে ধর্মতলার উদ্দেশে বার হন, তখন ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে বক্তৃতা করছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
রবিবার দুপুর ১২টা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন সমাজবাদী পার্টি (এসপি)-র প্রধান অখিলেশ যাদব। তার পর সেখান থেকে তিনি সোজা চলে যান কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে। সেখান থেকেই দু’জন একসঙ্গে ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে যাবেন।
লোকসভা ভোটে বাংলায় এ বার ২৯টি আসন নিজেদের দখলে রেখেছে তৃণমূল। জেলায় জেলায় বিজয় উৎসব হলেও তৃণমূলের তরফে সে ভাবে কোনও অনুষ্ঠান করা হয়নি। মমতা আগেই জানিয়েছিলেন, লোকসভা ভোটের জয় উদ্যাপন করা হবে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে। তাই সকলের নজর রবিবার ধর্মতলার মঞ্চের দিকে।
ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চের সামনে সকাল থেকেই ভিড় জমাতে শুরু করেন কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই ভিড় আরও বাড়ে। সকলেই শুনতে এসেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বার্তা দেন ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে।