Egra Blast

কটক থেকে গ্রেফতার এগরা বিস্ফোরণকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ভানু, সিআইডির জালে তাঁর পুত্র, ভাইপো

স্থানীয় সূত্রে খবর, ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাজি তৈরির সঙ্গে যুক্ত ভানু। তাঁর তৈরি বাজির চাহিদাও ছিল বাজারে। ভানুর ‘সুখ্যাতি’ ছড়িয়ে পড়েছিল দূরদূরান্তে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
এগরা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৩ ০৯:০৯
Egra blast

ভানুর বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের সময় সেখানে কাজ করতে করতেই প্রাণ হারান ৯ শ্রমিক। যাঁদের অধিকাংশই মহিলা। —ফাইল চিত্র।

এগরায় বিস্ফোরণকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত ভানু বাগ গ্রেফতার। বৃহস্পতিবার ওড়িশা থেকে গ্রেফতার করা হয় ভানু এবং তাঁর পুত্র বিশ্বজিৎ বাগকে। সূত্রের খবর, কটকের এক হাসপাতালে আহত অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন ভানু। সেখান থেকেই ধরা হয়েছে তাঁদের। সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছেন ভানুর ভাইপো ইন্দ্রজিৎ বাগও। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ এগরা ১ ব্লকের সাহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের খাদিকুল গ্রামের এগরার বেআইনি বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এই ঘটনায় ন’জন নিহত হন। সেই কারখানার মালিক ভানু ওরফে কৃষ্ণপদ বাগ ঘটনার পর থেকেই ছিলেন পলাতক।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওড়িশার হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন ভানু। ভানুর দেহের বেশ কিছুটা অংশ পুড়ে গিয়েছে। তাঁর মাথা, বুক, কোমর এবং পা জখম হয়েছে। তাঁকে রাখা হয়েছে কলাপাতায় মুড়ে। ওড়িশা পুলিশ নজরদারিতে রাখা হয়েছে তাঁকে। ভানুর শারীরিক পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে স্থানান্তরিত করা সম্ভব হয়নি। এমনটাই জানা গিয়েছে সিআইডি সূত্রে। আপাতত তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন থাকবেন বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে খবর, ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাজি তৈরির সঙ্গে যুক্ত ভানু। তাঁর তৈরি বাজির চাহিদাও ছিল বাজারে। ভানুর ‘সুখ্যাতি’ ছড়িয়ে পড়েছিল দূরদূরান্তে। ক্রমেই ভানু হয়ে ওঠেন এলাকার ‘সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী’দের অন্যতম। ২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে শাসকদলের নেতাদের সঙ্গে ভানুর ওঠাবসা শুরু হয় বলে দাবি স্থানীয়দের। তবে সূত্রের খবর, রাজনীতি নিয়ে সে ভাবে মাথা ঘামাতেন না ভানু। বুধবার এগরায় গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু অবশ্য দাবি করেছিলেন, ‘‘ভানু বাগ তৃণমূলের এক জন বড় নেতা। উনি ২০১৩ সালে পঞ্চায়েতের সদস্য ছিলেন। ’১৮ সালে ওঁর বৌমাকে দাঁড় করিয়েছিলেন ভোটে।’’

মৃতের আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করে বিস্ফোরণের ঘটনায় এনআইএ তদন্তের দাবিও করেছিলেন শুভেন্দু। তিনি এলাকা ছাড়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই খাদিকুলে হাজির হয় তৃণমূলের ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল। যে দলে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া, মন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী, বিধায়ক তরুণ মাইতি, দলের নেত্রী দোলা সেন, নেতা সৌমেন মহাপাত্ররা। গ্রামে ঢুকতেই তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়। এই বিক্ষোভকে ‘বিজেপি এবং সিপিএমের আঁতাঁত’ বলে কটাক্ষ করেন মানস।

তৃণমূলের প্রতিনিধি দল জানায়, তাঁর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই ঘটনাস্থলে এসেছেন। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে বলেও জানান মানস, দোলারা। যদিও বিক্ষোভের মুখে তাঁদের ফিরে যেতে হয়। পরে একে একে ফরেন্সিক দল, বম্ব ডিসপোজ়াল স্কোয়াড এসে নমুনা সংগ্রহ করে। এলাকা পরিদর্শনে আসেন সিআইডির প্রতিনিধিরাও।মঙ্গলবারের বিস্ফোরণের ঘটনার পর কার্যত রাজ্য-রাজনীতির ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে এগরা। গ্রাম জুড়ে রয়েছে পুলিশ। আসছেন রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরাও। বিজেপি সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে যাওয়ার কথা রয়েছে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের। বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এগরার ঘটনা দিকনির্দেশ করছে পশ্চিমবঙ্গ বারুদের স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে। আইনশৃঙ্খলার অবনতিটাই মানুষের চোখে পড়ে। এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। সেই জন্যই এটা নিয়ে এত চর্চা।’’

অন্য দিকে, এগরায় বিস্ফোরণে মৃত্যুর ঘটনায় সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দমকলের থেকেও রিপোর্ট নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। মঙ্গলবার বিস্ফোরণণ্ডের কিছু ক্ষণ পরেই নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে এ কথা জানান তিনি। একই সঙ্গে স্থানীয় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ভানু বাগকে কালীপুজোর সময় গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে তিনি জামিন পেয়ে যান। কী ভাবে তিনি জামিন পেলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, ওড়িশা সীমানার কাছাকাছি বেআইনি ভাবে চালানো হচ্ছিল ওই বাজি কারখানাটি।

বিস্ফোরণের পর কারখানা মালিক ওড়িশায় পালিয়ে গিয়েছেন বলেও জানান তিনি। বলেছিলেন, ‘‘যেখানেই পালাক আমরা টেনে আনব। আমি শুনেছি উনি ওড়িশা, বাংলাদেশে বাজি সরবরাহ করেন।’’ বৃহস্পতিবার দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীর কথা মিলল। কটক থেকে গ্রেফতার হলেন ভানু।সাংবাদিক বৈঠকে ভাবে মমতা জানান, এগরার সাহারা গ্রাম পঞ্চায়েতটি আগে তৃণমূলের দখলে থাকলেও ২ মাস আগে নির্দল সদস্যকে প্রধান করে বিজেপি তা দখল করেছে। বিস্ফোরণের পর স্থানীয় বিধায়ককে সেখানে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় বলেও জানিয়েছেন তিনি। নিহতদের পরিবারকে আড়াই লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণাও করেছেন তিনি। একই সঙ্গে বেআইনি বাজি কারখানা নিয়ে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেন।

আরও পড়ুন
Advertisement