Kasba Attempt to Murder Case

বিরোধী গোষ্ঠীকে কোণঠাসা করার চেষ্টা, কসবায় বাড়ছে উত্তেজনা

যে কোনও ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে গোটা এলাকায় লালবাজার এবং আনন্দপুর থানার তরফে টহল দেওয়া চললেও নতুন করে উত্তেজনা ছড়ানোর আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

Advertisement
চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:১৮
নতুন করে উত্তেজনা ছড়ানোর আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

নতুন করে উত্তেজনা ছড়ানোর আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। —ফাইল চিত্র।

চাপা উত্তেজনা আগেই ছিল এলাকায়। জমি-বাড়িকে কেন্দ্র করে একাধিক গোষ্ঠীর বিবাদের জেরে উত্তেজনাও ছড়াত গুলশন কলোনিতে। কিন্তু সম্প্রতি পুরপ্রতিনিধিকে খুনের চেষ্টার ঘটনার পর থেকে সেই চাপা উত্তেজনা এক মুহূর্তে বদলে গিয়েছে গনগনে ‘আগুনে’। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এলাকা দখলে রাখার পাশাপাশি, বিরোধী গোষ্ঠীকে কোণঠাসা করার লড়াইও পুরোদমে চলছে গুলশন কলোনি এবং নোনাডাঙায়। যে কোনও ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে গোটা এলাকায় লালবাজার এবং আনন্দপুর থানার তরফে টহল দেওয়া চললেও নতুন করে উত্তেজনা ছড়ানোর আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

Advertisement

গত সপ্তাহে বাড়ির সামনে গুলি করে খুন করার চেষ্টা হয় কলকাতা পুরসভার ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি সুশান্ত ঘোষকে। স্কুটারে চেপে এসে কসবায় তাঁর বাড়ির সামনেই পিস্তল নিয়ে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। শেষ মুহূর্তে গুলি না চলায় রক্ষা পান সুশান্ত। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই চার জনকে গ্রেফতার করেছে লালবাজার। গ্রেফতার করা হয়েছে অন্যতম অভিযুক্ত গুলজ়ারকেও। প্রাথমিক ভাবে গুলশন কলোনি এবং নোনাডাঙা এলাকায় জমি ও গুদাম দখল সংক্রান্ত বিবাদের জেরেই পুরপ্রতিনিধিকে খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। সেই সঙ্গে এর পিছনে এলাকা দখলের কৌশলও কাজ করেছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীদের একাংশ।

এলাকা দখলের এই সূত্র খুঁজতে গিয়ে জানা যাচ্ছে, জমি হোক অথবা সিন্ডিকেট— একাধিক গোষ্ঠী ছিল গুলশন কলোনি এবং সংলগ্ন নোনাডাঙা এলাকায়। এলাকা জুড়ে থাকা সরকারি এবং বেসরকারি জমি দখলের পাশাপাশি, জলাভূমিবুজিয়ে বহুতল গড়তে এই গোষ্ঠীগুলি মূলত নিজেদের ‘হাত’ মজবুত করেছিল এলাকায়। কিন্তু বছর আড়াই আগে নতুন পুরপ্রতিনিধি আসার পর থেকেই সেখানে এই গোষ্ঠী-সমীকরণে বদল আসতে শুরু করে। পুরপ্রতিনিধির অনুগামীদের সঙ্গে এলাকার আর এক প্রভাবশালী গোষ্ঠীর অনুগামীদের টক্কর বাড়তে থাকে। গোষ্ঠীর ভিড়ে নতুন নতুন নাম উঠে আসে এলাকায়। জুলকার, গুলজ়ারের মতো মাথারাও তাদের হাত শক্ত করতে থাকে। এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে গোষ্ঠীগুলির সদস্যদের মধ্যে চাপা উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়তে থাকে। এলাকা দখলের সেই দ্বন্দ্বই যেন আগুনে সলতে দেওয়ার মতো কাজ করেছে পুরপ্রতিনিধির উপরে হামলার চেষ্টার ঘটনায়। ফলে, এখন অন্য গোষ্ঠীকে কোণঠাসা করে নিজেদের ‘হাত’ মজবুত করতে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে ওই এলাকায়।

পুরপ্রতিনিধিকে খুনের চেষ্টার ঘটনায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে অন্যতম অভিযুক্ত গুলজ়ারকে। স্থানীয় সূত্রের খবর, গুলজ়ারের গ্রেফতারির পর থেকে তার অনুগামীদের একটি বড় অংশ এলাকাছাড়া। এ হেন পরিস্থিতিতে চাপে ওই এলাকায় শাসকদলের আর এক প্রভাবশালীর অনুগামী গোষ্ঠীও। ফলে উত্তেজনা বাড়ছে গুলশন কলোনি, সংলগ্ন নোনাডাঙা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায়। যদিও সুশান্ত এলাকার একাধিক গোষ্ঠী প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। এমনকি, কেন তাঁর উপরে হামলা, তা নিয়েও কোনও মন্তব্য করতে নারাজ। তবে তিনি বলেন, ‘‘আমার উপরে হামলার চেষ্টার ঘটনার পরেই হঠাৎ কয়েক জন সামনে এসেছেন। নানা সময়ে নানা বিবৃতি দিচ্ছেন। কেন, কী উদ্দেশ্যে তাঁরা হঠাৎ সামনে এলেন, তা তদন্ত করে দেখা উচিত।’’

যদিও এলাকায় উত্তেজনার এই আঁচ পেয়ে আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে লালবাজার। গোটা এলাকায় গোষ্ঠী সংঘর্ষ ছাড়াও যে কোনও ধরনের গোলমাল এড়াতে ২৪ ঘণ্টার পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। লালবাজারের পাশাপাশি, আনন্দপুর থানার বিশেষ দলও ঘুরছে গোটা এলাকায়। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘যে কোনও ধরনের পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশি তরফে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, তা নেওয়া হয়েছে। সব কিছু নজরে রাখা হচ্ছে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement