Fake Passport

বিনা যাচাইয়ে মেলে পাসপোর্ট, সন্দেহ একাধিক ডাকঘর ঘিরে

একাধিক ডাকঘরের ভূমিকার পাশাপাশি সেখানকার কর্মীদের একাংশের ভূমিকাও আপাতত গোয়েন্দাদের আতশকাচের নীচে রয়েছে। ইতিমধ্যে ডাকঘরের দুই অস্থায়ী কর্মীকে গ্রেফতার করেছে লালবাজারের বিশেষ তদন্তকারী দল।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:৪০
ইতিমধ্যে ডাকঘরের দুই অস্থায়ী কর্মীকে গ্রেফতার করেছে লালবাজারের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)।

ইতিমধ্যে ডাকঘরের দুই অস্থায়ী কর্মীকে গ্রেফতার করেছে লালবাজারের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

শুধু বসিরহাট বা পঞ্চসায়র ডাকঘরই নয়, ভুয়ো পাসপোর্ট-চক্রের সঙ্গে যোগসূত্র মিলেছে রাজ্যের আরও বেশ কয়েকটি ডাকঘরের। সেগুলি কলকাতার উপকণ্ঠে অবস্থিত। পুলিশ সূত্রের খবর, একাধিক ডাকঘরের ভূমিকার পাশাপাশি সেখানকার কর্মীদের একাংশের ভূমিকাও আপাতত গোয়েন্দাদের আতশকাচের নীচে রয়েছে। ইতিমধ্যে ডাকঘরের দুই অস্থায়ী কর্মীকে গ্রেফতার করেছে লালবাজারের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। কিন্তু পুলিশের দাবি, এর বাইরে অন্তত পাঁচটি ডাকঘরের কর্মীদের একাংশের ভূমিকা সন্দেহজনক ঠেকেছে তদন্তকারীদের কাছে। যার সূত্র ধরেই তদন্ত এগোচ্ছে।

Advertisement

কেন ডাকঘর এবং সেখানকার কর্মীদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে সন্দিহান তদন্তকারীরা?

পুলিশের দাবি, ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, যে সব ডাকঘরে পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র রয়েছে, সেখানে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হয়ে থাকে। এই ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া সমরেশ বিশ্বাস এবং তার ছেলে রিপন বিশ্বাস আগে থেকে আর এক অভিযুক্ত দীপঙ্কর দাসের মাধ্যমে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের পাসপোর্টের জন্য ভুয়ো পরিচয়পত্র, অর্থাৎ আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, এমনকি জন্মের শংসাপত্র তৈরি করাত। এর পরে সেগুলি দিয়ে ডাকঘরের পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রে আবেদন জমা দেওয়া হত।

এক পুলিশ অফিসার জানান, সংশ্লিষ্ট আবেদনপত্রগুলি এতটুকু যাচাই না করেই জমা নিয়ে নিত এই মামলায় ধৃত তারকনাথ সেনের মতো ডাকঘরের কর্মীরা। ফলে, কোনও রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই জমা পড়ে যেত ভুয়ো নথি ও তথ্য। প্রসঙ্গত, বসিরহাট ডাকঘরের কর্মী তারককেও ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

তদন্তকারীরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী ডাকঘরের পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রে আবেদন জমা পড়ার পরে পুলিশি যাচাইয়ের সময়ে সেই আবেদন খতিয়ে দেখার কথা। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা হয়নি বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে বিনা বাধায় কোনও রকম যাচাই বা পরীক্ষা ছাড়াই আঞ্চলিক পাসপোর্ট দফতর ওই পাসপোর্ট দিয়ে দিত। এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তদের জেরা করে পুলিশ নিশ্চিত, যে সব তথ্য তদন্তে উঠে এসেছে, সেগুলি হিমশৈলের চূড়া মাত্র।

প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের দাবি, পরিকল্পনা করেই বাংলাদেশি নাগরিকদের এনে ওই পাসপোর্ট বানিয়ে তাঁদের বিদেশে পাঠানো হত। বিনিময়ে ভুয়ো পাসপোর্ট-চক্রের সদস্যেরা আবেদনকারীদের থেকে কয়েক লক্ষ টাকা করে নিত। তবে, এখনও পর্যন্ত এ ভাবে কত পাসপোর্ট তৈরি হয়েছে, তা জানা যায়নি। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট ডাকঘরগুলিতে গত কয়েক বছরে জমা পড়া যাবতীয় আবেদনপত্র খতিয়ে দেখা হবে। একই সঙ্গে, ওই সব ডাকঘরের পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে কত পাসপোর্ট তৈরি হয়েছে, তার তালিকা চাওয়া হয়েছে আঞ্চলিক পাসপোর্ট দফতরের কাছে।

উল্লেখ্য, পঞ্চসায়র ডাকঘর থেকে শহরের বিভিন্ন ঠিকানার পাসপোর্ট তৈরি করা হয়েছে জানতে পেরে সন্দেহ হয়েছিল পুলিশের একাংশের। সেই সূত্র ধরে তদন্তে নেমেই ভুয়ো পাসপোর্ট-চক্রের সন্ধান পান লালবাজারের গোয়েন্দারা। গ্রেফতার করা হয় চক্রের অন্যতম চাঁই সমরেশ বিশ্বাস-সহ পাঁচ জনকে। যাদের মধ্যে রয়েছে পঞ্চসায়র ডাকঘরের কর্মী দীপক মণ্ডল। এ দিকে, এই ঘটনায় ধৃত দীপঙ্কর দাস যার নির্দেশে ভুয়ো নথি তৈরি করত, সেই ব্যক্তির খোঁজে বুধ এবং বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ-সহ বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়। ওই ব্যক্তির ভাড়া করা অফিস থেকেই মঙ্গলবার উদ্ধার করা হয়েছিল প্রচুর জাল নথি, নথি তৈরিতে ব‍্যবহৃত কম্পিউটার, প্রিন্টার ও অন‍্য সামগ্রী। মিলেছিল দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সিল, ৩৬টি ভারতীয় পাসপোর্টের ফোটোকপি এবং শেনগেন ও ব্রিটেনের ভিসা।

অন্য দিকে, ভুয়ো পাসপোর্ট-চক্রের তদন্তে লালবাজার সিট গঠন করেছে। সিট-এর তরফে কলকাতা পুলিশের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ সংস্থার এক অফিসারকে তদন্তকারী অফিসার করা হয়েছিল। তবে, ঘটনার ব্যাপকতা দেখে লালবাজারের তরফে গোয়েন্দা বিভাগের জালিয়াতি দমন শাখার এক অফিসারকে নতুন করে তদন্তকারী অফিসার হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে। যদিও লালবাজারের দাবি, এর সঙ্গে তদন্তের যোগ নেই।

Advertisement
আরও পড়ুন