দিলীপ রায়। —ফাইল চিত্র।
কয়েক দশকের পুরনো ছাত্রছাত্রীদের চিনে ফেলে প্রবীণের চোখে স্নেহের ঝিলিক। দু’চার জনকে চিনতে পারলেন না। তাঁদের পাকা দাড়ি, স্ফীত মধ্যপ্রদেশ দেখিয়ে অনুচ্চ চেহারার, ৯০ বছরের স্নিগ্ধ ব্যক্তিত্ব মজা করলেন, ‘‘কী করে চিনব বলো, তখন তো এমন ছিলে না।’’ প্রেসিডেন্সি কলেজ তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদরদী মূল্যবোধের আবহমান প্রতীক দিলীপ রায়কে সোমবার প্রেসিডেন্সি ছাত্র সংসদের তরফে জীবনকৃতী সম্মানে ভূষিত করা হল। প্রেসিডেন্সির দুই শতকের পথ চলায় বছরের ঐতিহ্যশালী পার্বণ ‘প্রতিষ্ঠাতৃ দিবস’-এর অনুষ্ঠানটি ‘দিলীপদার’ জন্য এ বার আলাদা মাত্রা পেল।
সবার প্রিয় ‘দিলীপদা’ পূর্বতন প্রেসিডেন্সি কলেজের স্টুডেন্ট ইন-চার্জ দিলীপ রায়। ১৯৬০ থেকে ১৯৯২-এর কর্মজীবন শেষে প্রাক্তনী সংসদের আধিকারিক তিনি। অতিমারি কালের আগে পর্যন্ত বসতেন প্রেসিডেন্সিতেই। নকশাল আমলে অনেক ছাত্রকে বাবা-বাছা করে বুঝিয়ে পরীক্ষায় বসিয়েছেন। দলমত নির্বিশেষে সব ছাত্রের তিনি সমান প্রিয়। ছাত্রছাত্রীদের নাম, রোল নম্বর—সব তাঁর ঠোঁটস্থ থাকত। প্রেসিডেন্সির সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য নির্মাল্যনারায়ণ চক্রবর্তীকে দেখিয়ে প্রাক্তনী সংসদের সহ-সভাপতি বিভাস চৌধুরী দিলীপদাকে বললেন, ‘‘আপনার সময়ের ছাত্র এখন উপাচার্য।’’ ‘দিলীপদা’ প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী নন। কিন্তু প্রাক্তনী সংসদের তরফে প্রথা ভেঙে তাঁকে সদস্য পদে বরণ করা হয়েছে। মঞ্চে বসে কথা বলার সময়ে মিতভাষী মানুষটির এ দিন গলা বুজে এল।
ব্রিটিশ আমল থেকে প্রেসিডেন্সির একটি বিশেষ দিন এই ‘ফাউন্ডার্স ডে’ বা প্রতিষ্ঠাতৃ দিবস। ৭৫ বছর আগে প্রাক্তনী সংসদের সূচনার পর থেকে এই দিনটি প্রতিষ্ঠানের পুনর্মিলন উৎসবেরও চেহারা নিয়েছে। এ বছরের অতুলচন্দ্র গুপ্ত বিশিষ্ট প্রাক্তনী সম্মান পেলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান,সমাজতত্ত্বের ইমেরিটাস অধ্যাপক প্রশান্ত রায়। অনিন্দ্য মিত্র, জয়ন্ত মিত্র, জ্যোতির্ময় পালচৌধুরীপ্রমুখ বিশিষ্ট প্রাক্তনী তথা প্রাক্তনী সংসদের পূর্বতন সভাপতিদের এ দিন সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার বলেন, ‘‘প্রাক্তনীদের সঙ্গে সমন্বয়ে নানা কর্মকাণ্ডে প্রেসিডেন্সিকে এগিয়ে নিয়ে চলার ধারাবাহিকতা অটুট রয়েছে।’’