গা ঘেঁষে: শুক্রবার মহাত্মা গান্ধী রোডের এখানেই মিনিবাসের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল এক পথচারীর। শনিবারও সেখানে একই রকম ভাবে রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে মানুষজন। পাশ দিয়ে বিপজ্জনক ভাবে চলছে বাস। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
এ যেন রোগের চিকিৎসা না করেই বদহজমের দাওয়াইয়ের বন্দোবস্ত।
পথ নিরাপত্তার স্বার্থে কলকাতা-সহ রাজ্য জুড়ে নতুন করে যানবাহনের গতি নির্ধারণ করছে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি এ নিয়ে মুখ্যসচিবের দফতর থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে শহরের যানবাহনের গতি তিনটি মাপে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনার একটি কারণ যদি যানবাহনের গতি হয়, অন্য কারণ তা হলে ফুটপাতে উঠতে না পেরে পথচারীদের রাস্তা দিয়ে হাঁটার বাধ্যবাধকতা। যা নিয়ে এখনও কোনও সদর্থক ভূমিকা দেখা যায়নি।
বড়বাজারে শুক্রবার মিনিবাসের ধাক্কায় এক প্রৌঢ়ার মৃত্যু হয়, আহত আরও তিন মহিলা। মিনিবাস আসতে দেখেও তাঁরা পালানোর পথ পাননি। কারণ, সেখানে ফুটপাতে হাঁটাচলা করাই দায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বড়বাজার থানার গলির মুখে লোহার দরজা দিয়ে পুলিশ রাস্তা পার করাচ্ছে। পাশের একাংশ লোহার রেলিং দিয়ে ঘেরা হয়েছে। কিন্তু তার পরেই পথচারীকে চলতে হচ্ছে রাস্তা দিয়ে। যেখানে গা ঘেঁষে এসে দাঁড়াচ্ছে বাস। মধ্য কলকাতার বড়বাজার-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় সর্বত্র একই পরিস্থিতি। পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানান, গাড়ির গতি বেঁধে দিয়ে নতুন ‘স্পিড ম্যানেজমেন্ট` ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে প্রথম এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করা হচ্ছে। পরিকল্পনা করেছে খড়্গপুর আইআইটি। দুর্ঘটনা ঘটলেও জেলার তুলনায় কলকাতায় মৃত্যুর হার কম। তাই রাজ্যে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে।’’ পথ নিরাপত্তার অপর দিক হল, পথচারীর জন্য ফুটপাত ফাঁকা থাকা। কিন্তু স্থানীয় নেতাদের মদতে ফুটপাত দখলের অভিযোগ ওঠে বড়বাজার, শ্যামবাজার-সহ উত্তর ও মধ্য কলকাতায়। সেই সমস্যার সমাধান নিয়ে মন্ত্রী মন্তব্য করেননি।
নতুন মাপকাঠি অনুযায়ী, বাইপাস, ভিআইপি রোডের মতো রাস্তায়, যেখানে সহজে লোকজনের পারাপার-সহ বিভিন্ন কারণে গাড়ির গতি বাধাপ্রাপ্ত হবে না, সেখানে যানবাহনের গতি হবে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। ঘিঞ্জি রাস্তা, লোকজনের পারাপার বেশি— এমন জায়গায় গাড়ি ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার গতিতে চলবে। এর মধ্যবর্তী অবস্থায় ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার গতি রাখা যাবে। স্কুল, হাসপাতালের মতো জায়গায় গাড়ির গতি হবে ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার।
খড়্গপুর আইআইটি-র অধ্যাপক তথা পরিবহণ বিশেষজ্ঞ ভার্গব মৈত্রের কথায়, ‘‘বিজ্ঞানসম্মত ভাবে বিশ্বব্যাপী যে ব্যবস্থা চলছে, তাতে ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার গতিতে দুর্ঘটনা ঘটলে মৃত্যুর আশঙ্কা কম থাকে। তাই ঘিঞ্জি এলাকায় গতি ওই মাপে বাঁধা হচ্ছে। তবে পথচারীর সামনে ফুটপাত বা চলার পথ প্রশস্ত থাকলে শহরের গতি বাড়তেই পারে।’’