Death

চাকরি নিয়ে উদ্বেগেই কি অসুস্থ হয়ে মৃত্যু শিক্ষকের

মৃতের নাম প্রশান্ত দাস (৩৮)। তাঁর বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:২৫
বুধবার দুপুরে মৃত্যু হয় শিক্ষকের।

বুধবার দুপুরে মৃত্যু হয় শিক্ষকের। — প্রতীকী চিত্র।

ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে আন্দোলনরত এক শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। আন্দোলনকারী অন্য শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, মৃতের নাম প্রশান্ত দাস (৩৮)। তাঁর বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে।

Advertisement

প্রশান্তের এক সহকর্মী শিক্ষক হুমায়ুন ফিরোজ মণ্ডল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘প্রশান্ত আমাদের এই ওয়াই চ্যানেলের ধর্নায় বেশ কয়েক বার এসেছেন। গত ২ জানুয়ারি আমরা যে বিকাশ ভবন অভিযান করেছিলাম, তাতেও তিনি ছিলেন। প্রশান্তের সুগার এবং উচ্চ রক্তচাপ ছিল। গত ক’দিন ধরেই উনি তীব্র মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন। বার বার বলতেন, পুরো প্যানেল বাতিল হয়ে গেলে আমরা যদি বেকার হয়ে যাই, তা হলে কী হবে? সংসার ভেসে যাবে। অন্যদের মতো ওঁরও দাবি ছিল, শুধু অযোগ্যদের প্যানেল থেকে বাদ দিতে হবে।’’ হুমায়ুন জানান, বিকাশ ভবন অভিযানের পরে প্রশান্ত বাড়ি চলে যান। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে তমলুকের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয় বলে বাড়ির লোকজন জানিয়েছেন।

প্রশান্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপের মহেন্দ্রগঞ্জ হাইস্কুলে ভৌতবিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন। এ দিন তাঁর বাড়িতে ফোন করা হলেও কেউ ধরেননি। ওই স্কুলে প্রশান্তের সহকর্মী উজ্জ্বলকুমার মাঝি জানান, প্রশান্তের বাড়ির কেউ কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। উজ্জ্বল বলেন, ‘‘প্রশান্তের সুগার, প্রেশার ছাড়াও প্যানক্রিয়াটাইটিসের সমস্যা ছিল। যদিও সেই সমস্যা বছর তিনেক আগেই চিকিৎসায় সেরে যায়। বর্তমানে তিনি সুস্থই ছিলেন। তবে, নতুন করে চাকরিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় তাঁর সুগার ও রক্তচাপ বেড়ে যায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও কলকাতায় এসে আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। গত কয়েক দিন ধরে টানা আন্দোলনে ছিলেন।’’ উজ্জ্বল আরও বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের শুনানি পিছিয়ে যাওয়ায় উনি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। প্রশ্ন করেছিলেন, আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে? আমাদের প্রায়ই বলতেন, কয়েক জন অযোগ্যের জন্য যদি পুরো প্যানেল বাতিল হয়ে যায়, তা হলে তো কর্মহীন হয়ে যেতে হবে। তখন কী হবে? বাড়িতে ওঁর স্ত্রী, দশ বছরের মেয়ে, মা-বাবা এবং ভাই আছেন। সকলেই ওঁর উপরে নির্ভরশীল। প্রশান্ত এর আগে একটি সরকারি দফতরে করণিকের চাকরি করতেন। সেটি ছেড়ে এই শিক্ষকতার চাকরি নিয়েছিলেন।’’

আন্দোলনরত আর এক শিক্ষক ধীতীশ মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রশান্ত বাড়ি করতে গিয়ে ঋণ নিয়েছিলেন। সেই ঋণ মাসিক কিস্তিতে শোধ করছিলেন। প্রায়ই বলতেন, গোটা প্যানেল বাতিল হয়ে যদি চাকরি চলে যায়, তা হলে ঋণ শোধ করবেন কী ভাবে?’’ ওয়াই চ্যানেলে আন্দোলনরত আর এক শিক্ষক মেহবুব মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রশান্ত গত ছ’বছর ধরে শিক্ষকতার চাকরি করছিলেন। হঠাৎ করে এক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে সকলের মধ্যে। ওঁর মতো আমাদের এই আন্দোলনে আসা প্রায় সমস্ত শিক্ষকেরই ছ’-সাত বছর চাকরি হয়ে গিয়েছে। অনেকে বাড়ি করার জন্য ঋণ নিয়েছেন। কেউ বা ছেলেমেয়ের পড়াশোনার জন্য ঋণ নিয়েছেন। আমাদের উপরে নির্ভরশীল পুরো পরিবার। হঠাৎ করে চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় সকলেই মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন। এই যন্ত্রণা থেকে দ্রুত মুক্তি না পেলে শিক্ষকদের মৃত্যু-মিছিল দেখা যেতে পারে।’’

Advertisement
আরও পড়ুন