জরাজীর্ণ: দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি কাঠের সেতুটির। নিউ টাউনে বিপজ্জনক সেই সেতু দিয়েই চলছে ভার যানবাহনl ছবি: স্নেহাশিষ ভট্টাচার্য্য
শালবল্লার খুঁটির উপরে কাঠের সেতু। খালের উপরে থাকা সেই সেতু দিয়েই প্রতিদিন
কয়েক হাজার মানুষের আনাগোনা। এমনকি, সেই সেতু দিয়ে চলে গাড়ি, অটোও। কখনও-সখনও সেতুতে চলাচলের সময়ে বিপজ্জনক শব্দও শোনা যায়। নিউ টাউনের সাপুরজি থেকে চাঁদপুর পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী কাঠের সেতুটির বর্তমানে এমনই বেহাল দশা। অভিযোগ, সেতুটির হাল ফেরানোর জন্য প্রশাসনের সর্বস্তরে দরবার করেও কাজ হয়নি। বরং প্রতিদিনই বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। প্রশাসনের নজর ফেরাতে স্থানীয় বাসিন্দারা এ বার অনশনে বসবেন বলেও ঘোষণা করেছেন। যদিও তার কোনও দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা করা হয়নি।
শহর নিউ টাউন বিভিন্ন খালের মাধ্যমে পঞ্চায়েত এলাকা থেকে আলাদা রয়েছে। নিউ
টাউনের সাপুরজি এবং চাঁদপুর পঞ্চায়েতের কাদা গ্রামটিকে জুড়ছে ওই সেতু। তার নীচ দিয়ে যাচ্ছে বাগজোলা খালের বর্ধিত একটি অংশ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাজারহাট-ভাঙড়ের মতো এলাকা থেকে নিউ টাউন তথা কলকাতার দিকে আসতে লোকজন অথবা গাড়িচালকেরা ওই সেতুটি ব্যবহার করেন। ফলে প্রতিদিন ব্যাপক ভাবে সেতুটির ব্যবহার হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা বিভাস মণ্ডল জানান, ওই জায়গায় আগে একটি কংক্রিটের সেতু
ছিল। সেটি ভেঙে যাওয়ার পরে ২০১৯ সালে এই কাঠের সেতু তৈরি করা হয়। তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে সেতুটির জরাজীর্ণ অবস্থা। শালবল্লা দুর্বল হয়ে গিয়েছে। সেতুর নীচের অংশও ভেঙেচুরে গিয়েছে। সেচ দফতর-সহ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অনেক দিন ধরে কাঠের বদলে কংক্রিটের সেতু তৈরি করতে অনুরোধ করছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কাজের কাজ কিছু হয়নি। যে কোনও সময়ে বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’’
দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ সেতুটির সংস্কারের কাজ না হওয়ায় প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়েরা। তাঁরা জানান, সেতুর হাল ফেরানো না হলে ডিসেম্বরে তাঁরা নিরাপদ যাতায়াতের দাবিতে অনশনে বসবেন। অনশন আন্দোলনের কথা ঘোষণা করে সেই সংক্রান্ত একটি ব্যানারও ওই সেতুর উপরে ইতিমধ্যেই ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাপুরজি ও চাঁদপুর পঞ্চায়েত— দু’টি জায়গাই নিউ টাউন বিধানসভা এলাকার অধীনে। সেতু নিয়ে এই সমস্যার কথা বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে উত্থাপন করা হবে বলে এলাকায় জানিয়েছেন নিউ টাউনের বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়। অনশনের মতো চরম পদক্ষেপ না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি সেতুর হাল ফেরানোর জন্য স্থানীয়দের থেকে সময় চেয়েছেন।
তাপস বলেন, ‘‘বাসিন্দাদের আশঙ্কা অমূলক নয়। সেতুটি ঠিক হওয়া প্রয়োজন। আমি ভেবেছিলাম, বাগজোলা খাল যখন, তখন সেচ দফতর বিষয়টি দেখবে। কিন্তু সেচ দফতর বলেছে, সেতুর কাজ পূর্ত দফতর করবে। আমি বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে বিষয়টি তুলব। মুখ্যমন্ত্রীরও দৃষ্টি আকর্ষণ করানোর চেষ্টা করছি।’’
অন্য দিকে, সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার দাবি, নাগরিকেরা কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তিনি বলেন, ‘‘গত অগস্ট মাস থেকে আমি দায়িত্ব নিয়েছি। নাগরিকেরা আমাকে কেউ কিছু
জানাননি। এলাকার বিধায়ক আমায় বিষয়টি জানিয়েছেন। কিন্তু সেতুটি সেচ দফতরের না
পূর্ত দফতরের, তা চিহ্নিত হওয়া দরকার। যে দফতরের হবে, তারা অবশ্যই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।’’