— প্রতীকী চিত্র।
নদ-নদীর বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে উৎকণ্ঠায় হুগলি সেচ দফতর। এমনিতেই বেআইনি ভাবে বাঁধ কেটে ঘর নির্মাণ, চরে ইটভাটা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। এ বার তাদের না জানিয়ে বাঁধ কেটে সরকারি কৃষি সেচ দফতরের ‘নদী সেচ’ এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পানীয় জল সরবরাহের পাইপ লাইন নিয়ে যাওয়া নিয়ে আপত্তি উঠল।
জেলার বন্যাপ্লাবিত এলাকায় আরামবাগ মহকুমার নদ-নদীর বাঁধগুলিতেই মূলত এই সমস্যা সামনে এসেছে। জেলা সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অনুমতি না নিয়েই, বাঁধ কেটে পাইপ লাইন করে কৃষি সেচের জন্য নদী উত্তোলক সেচ (আরএলআই) প্রকল্পগুলি হয়েছে। বর্তমানে আবার ‘জলজীবন মিশন’ প্রকল্পে বাড়ি বাড়ি জল সরবারহের লক্ষ্যে বাঁধ কেটে পাইপ লাইন বসানো হচ্ছে। ওই সব পাইপ থেকে জল বেরিয়ে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নদ-নদীর জল বাড়লেই বাঁধ ফাঁক হয়ে ভেঙে এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
মুণ্ডেশ্বরী নদীর খানাকুলের কেদারপুরে ১৬০ মিটার এবং পুরশুড়ার বড়দিগরুইঘাটে ১৩০ মিটার বাঁধ ভাঙার অন্যতম কারণ, নদী সেচের পাইপ বসানো। এলাকায় যাঁরা কাজ করছেন, সেই সেচ দফতরের বাস্তুকারেরা এমনটাই মনে করছেন।
বাঁধের ক্ষতির কথা স্বীকার করে জেলা সেচ দফতরের (নিম্ন দামোদর) এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার দেবেন্দ্রকুমার সিংহ বলেন, “আমরা সকলেই রাজ্য সরকারের নানা দফতরের কর্মী। কোনও দফতরকে দোষারোপ করা হচ্ছে না। তবে বিষয়টির গুরুত্ব নিয়ে বৈঠক হয়েছে। বাঁধে কোনও কাজের ক্ষেত্রে সেচ দফতরকে জানিয়ে যাতে করা হয়, সেই আলোচনা হয়েছে।” তিনি জানান, বলে দেওয়া হয়েছে, বাঁধ কেটে কিছু না করতে। উপর দিয়ে পাইপ লাইন করা যেতে পারে। অথবা, দফতরকে জানিয়ে কিছু করলে বলে দেওয়া হবে, কোন পাশ দিয়ে পাইপ নিয়ে গেলে বাঁধের ক্ষতি হবে না।
সেচ দফতরের বাস্তুকারদের বক্তব্য, মুণ্ডেশ্বরী নদীর ক্ষেত্রে সংলগ্ন নদী সেচ প্রকল্পগুলির সবই প্রায় বাঁধ কেটে বাঁধের মাঝখান দিয়ে পাইপ লাইন নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এক সঙ্গে ওই চার-পাঁচটি পাইপ। তবে দ্বারকেশ্বর নদের ক্ষেত্রে গত বছর তৎকালীন মহকুমা শাসক সুভাষিণী ই-র ব্যবস্থাপনায় সেচ দফতর এবং নদী সেচ দফতর যুগ্ম পরিদর্শন করে বাঁধের এক-দেড় মিটার নীচের পাইপ লাইনগুলি তুলে বাঁধের উপর থেকে এক ফুটের মধ্যে আনা হয়েছে।
আরামবাগ মহকুমায় মুণ্ডেশ্বরী নদী, দ্বারকেশ্বর নদ এবং রূপনারায়ণ নদ মিলিয়ে মোট ১৬৮টি নদী সেচ প্রকল্প আছে বলে নদী উত্তোলক সেচ সূত্রে জানা গিয়েছে। সেচ দফতরের তোলা আপত্তি নিয়ে দফতরে জেলা এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার চন্দন কর্মকার বলেন, “সেচ দফতর আগেই আমাদের চিঠি দিয়ে বাঁধের ক্ষতির কথা জানালে কাজ আগেই হয়ে যেত। এখন যদি বলে তোমাদের জন্য বাঁধ ভেঙেছে, এটা ঠিক নয়। সেচ দফতর যদি মনে করে আগামী দিনের জন্য পাইপ লাইন উপরে তুলে দেওয়া দরকার তা আমাদের জানালেই করে দেব।” তিনি জানান, বাঁধ ভেঙে মানুষের ক্ষতি হোক কেউ চায় না। বাঁধ যেমন দরকার, সেচের জন্য জলও দরকার। দরকার খালি দফতরগুলির সমন্বয়।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রাজেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের যেখানে যেখানে কাজ হচ্ছে সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলেই হচ্ছে। এ ছাড়াও কোথাও যদি সেচ দফতরের অনুমতি ছাড়া হয়ে থাকে, সেটা আমাদের নজরে আনলে সংশোধন করে নেব।” সেচ দফতরের অনুমতি বা যুগ্ম পরিদর্শন ছাড়া বাঁধে হাত দেওয়া হবে না বলে তিনি জানান।