আরজি কর হাসপাতাল চত্বরে হামলা। ছবি: পিটিআই।
মেয়েদের ‘রাত দখল’ কর্মসূচির দিন ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আন্দোলনে মিশে ছিলেন হামলাকারীরা। আগে থেকেই এই হামলার পরিকল্পনা করা ছিল। এমনটাই মনে করছে কলকাতা পুলিশ। হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে সমাজমাধ্যমে আন্দোলনের ডাক দেওয়া বিভিন্ন গ্রুপের দিকেও নজর রাখা হচ্ছে। পুলিশের অনুমান, ইচ্ছা করেই আন্দোলনের দিনটি বেছে নেওয়া হয়েছিল এই হামলার জন্য। ‘রাত দখল’ কর্মসূচির সুযোগ নেওয়া হয়েছিল।
আরজি করে হামলার সময়ে বাম যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের পতাকা দেখা গিয়েছে বলে দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার সময়ে হাসপাতালের বাইরে ওই ধরনের কিছু পতাকা দেখা যায়। কিন্তু ভিতরে বাম পতাকা থাকার প্রমাণ মেলেনি।
গত বুধবার রাতে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে শহর জুড়ে মহিলাদের জমায়েত এবং মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন প্রান্তে স্বতঃস্ফূর্ত জমায়েত হয়। আরজি কর হাসপাতাল চত্বরের জমায়েতে আচমকা হামলা চালায় কয়েক দল দুষ্কৃতী। অভিযোগ, ব্যারিকেড ভেঙে হাসপাতালে ঢুকে পড়েন বহু মানুষ। তার পর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিশকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। সেই ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ। এখনও পর্যন্ত ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, আগে থেকেই আরজি করে এই হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। হামলার জন্য ইচ্ছাকৃত ভাবে আন্দোলনের ওই রাতটিকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল। তদন্তে নেমে এমনটাই আভাস তারা পেয়েছে।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ছিলেন হামলাকারীরা। এক একটি দলে ছিলেন ৫ থেকে ১০ জন করে। ভিড়ে মিশে গিয়েছিলেন তাঁরা। ওই দলগুলি আলাদা আলাদা ভাবে আরজি কর চত্বরে পৌঁছেছিল। ছোট ছোট দলগুলির মধ্যে যোগাযোগ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে এই আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছিল। সে সব গ্রুপও পুলিশের নজরে রয়েছে। কোনও গ্রুপ থেকে হামলার উদ্দেশ্যে লোক জড়ো করা হয়েছিল কি না, গোটা পরিকল্পনার নেপথ্যে মাথা কে বা কারা? খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
আরজি করে হামলার ঘটনায় রাজনৈতিক চক্রান্ত দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী। মূলত সিপিএম এবং বিজেপিকেই দুষেছেন তিনি। জানিয়েছেন, আন্দোলনের সময়ে হামলাকারীদের হাতে ডিওয়াইএফআইয়ের পতাকা দেখা গিয়েছিল। যাঁদের হাতে জাতীয় পতাকা ছিল, তাঁরা বিজেপির সমর্থক। পুলিশ সেই পতাকাও নজরে রেখেছে। সূত্রের খবর, বাম পতাকা হাসপাতালের বাইরে ব্যারিকেড ভাঙার সময়ে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ভিতরে তা ছিল না। তেমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কারা হামলার আয়োজক, খোঁজ চলছে। ইতিমধ্যে গ্রেফতার হওয়া ২৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা। কয়েক জনকে বৃহস্পতিবার রাতে লালবাজারে নিজে জিজ্ঞাসাবাদ করেন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি জানিয়েছেন, পুলিশ কাউকে লুকোনোর চেষ্টা করছে না। কেবল প্রমাণ খুঁজছে। প্রমাণ পেলেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। গুজবে কান না-দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।