(বাঁ দিকে) ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্নায় অনুমতি না দিয়ে পুলিশের ইমেল। কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থানের অনুমতি দিল না পুলিশ। শুক্রবার রাত থেকে মেট্রো চ্যানেলের সামনে ধর্নায় বসেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রতিবাদে বিচার এবং হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা-সহ একাধিক দাবিতে আন্দোলন চলছে। রাতে এই কর্মসূচির জন্য পুলিশের অনুমতি চেয়ে ইমেল করা হয়েছিল। শনিবার সকালে সেই ইমেলের জবাব দিয়েছে লালবাজার। অবস্থান কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া যাবে না বলে জানানো হয়েছে ডাক্তারদের।
পুলিশের বক্তব্য, পুজোর আগে এই সময়ে ধর্মতলা এলাকায় ভিড় বেশি থাকে। তাই সেখানে অবস্থান কর্মসূচি চললে সাধারণ মানুষের সমস্যা হবে। ধর্মতলায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণেও সমস্যা হতে পারে। সেই কারণেই ডাক্তারদের কর্মসূচিতে অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না।
লালবাজার থেকে ডাক্তারদের কাছে যে ইমেল গিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ‘‘শুক্রবার রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে ধর্মতলায় ধর্না এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশনের অনুমতি চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। ট্র্যাফিকের দিকটি মাথায় রেখে সেই আবেদনে সাড়া দেওয়া যাচ্ছে না। এই কর্মসূচির জন্য সাধারণ মানুষের সমস্যা হতে পারে। রাস্তায় দীর্ঘ যানজট তৈরি হতে পারে। পুজোর মুখে ধর্মতলা এলাকায় প্রচুর মানুষ কেনাকাটা করতে যাচ্ছেন। পুজোর প্রস্তুতি পর্বে এখন প্রতি দিনই সেখানে খুব ভিড় হচ্ছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই পুজোর আগে এই কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়বেন। এলাকার শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে।’’
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে শুক্রবার এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। ধর্মতলা পৌঁছে জানান, তাঁরা কর্মবিরতি তুলে নিচ্ছেন। শনিবার থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারেরা কাজও শুরু করেছেন। কিন্তু ধর্মতলায় রাতেই বসে পড়েন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা প্রতীকী ঘড়ি হাতে নিয়ে সরকারকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন। ওই সময় পর্যন্ত ধর্না চলবে ধর্মতলায়। তাঁদের দাবি না মানা হলে এর পর অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশনের হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছেন ডাক্তারেরা।
গত ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতাল থেকে মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। তাঁকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয় বলে অভিযোগ। সেই থেকেই নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলন চলছে ডাক্তারদের। ৪২ দিন ধরে তাঁরা কর্মবিরতি পালন করেছিলেন। স্বাস্থ্য ভবনের সামনে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তাঁরা ধর্নাতেও বসেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজে সেই ধর্নামঞ্চে যান। সরকারের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকের পর তাঁদের কিছু দাবি মেনে নেওয়া হয়। কর্মবিরতি আংশিক তুলে নিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। কিন্তু কিছু দিন আগে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে রোগীমৃত্যুকে কেন্দ্র করে নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায়। রোগীর আত্মীয়দের বিরুদ্ধে চিকিৎসকের মারধরের অভিযোগ ওঠে। তার পর আবার নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেছিল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট। শুক্রবার তা তুলে নিয়ে অবস্থান বিক্ষোভের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন ডাক্তারেরা।