শনিবার সন্ধ্যায় আগুন লেগেছিল দুর্গাপুর সেতুর নিচে থাকা বস্তিতে । —ফাইল ছবি।
শনিবার সন্ধ্যায় নিউ আলিপুর অঞ্চলে দুর্গাপুর সেতুর নীচে এক বস্তিতে ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে, ভস্মীভূত হয় বেশ কিছু ঝুপড়ি। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হয়েছিল, আগুনের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেতুটি। সেই আশঙ্কা মাথায় রেখে তড়িঘড়ি কলকাতা নগরোন্নয়ন বিভাগ (কেএমডিএ)-এর তরফে সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। রবিবার সেতুটির প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পর কেএমডিএ নিশ্চিত করে জানিয়েছে, দুর্গাপুর সেতুর স্থায়িত্ব ও কার্যকারিতা ঠিক আছে। আগুনের কারণে সেতুর কোনও বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। এই খবর স্বস্তি এনে দিয়েছে রাজ্য প্রশাসনের পাশাপাশি শহরের বাসিন্দাদের।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ কলকাতার এই সেতুটি আলিপুর, নিউ আলিপুর, বেহালা এবং বড়িশার সঙ্গে শহরের অন্য অংশের সংযোগরক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতি দিন অসংখ্য গাড়ি, বাস, ট্যাক্সি, এবং অন্য যানবাহন সেতুটি ব্যবহার করে। তাই এই সেতুটির সামান্যতম ক্ষতিও ভবিষ্যতে বড়সড় পরিবহণ সমস্যা তৈরি করতে পারে। তবে সেতুটির নীচে দীর্ঘ দিন ধরে দখলদারদের বসবাস একটি বড় সমস্যা। এই ঝুপড়িগুলিতে থাকা রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার বা বৈদ্যুতিক ত্রুটিই আগুন লাগার কারণ হিসেবে অনুমান করা হচ্ছে। রেলের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, বস্তির বাসিন্দারা সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে এলাকাটি দখল করেছেন। তাঁদের সরাতে মাঝেমধ্যেই অভিযান চালানো হয়, কিন্তু কিছু দিন পর তাঁরা আবার ফিরে আসেন। দখলদারির কারণে রেলের যাত্রীসুরক্ষা এবং কাজের গতি প্রভাবিত হচ্ছে বলে অভিযোগ। দুর্গাপুর সেতুর মতো ব্যস্ত সেতুগুলির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনাগুলি রোধ করতে সেতুর আশেপাশের এলাকাগুলি নজরদারিতে রাখতে হবে।
সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট ইতিবাচক হলেও প্রশাসনকে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে বলেই মনে করছেন কেএমডিএ-র কর্তারা। পাশাপাশি, শহরের রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য দখলদার সমস্যার স্থায়ী সমাধান অপরিহার্য। শনিবার কেএমডিএ-র চেয়ারম্যান তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। পাশাপাশি দ্রুত সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন।
সেতুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষায় প্রাথমিক রিপোর্ট ইতিবাচক হওয়ায় অগ্নিকাণ্ডে গৃহহীন হওয়া বস্তিবাসীদের নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে প্রশাসনে। দখলদারদের উচ্ছেদ করলেও পুনর্বাসন না-দিলে সমস্যা মিটবে না। এ জন্য বিকল্প বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ নিউ আলিপুরে যেখানে এই বস্তিটি ছিল, তা পূর্ব রেলের। স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠছে ক্ষতিপূরণ নিয়ে। ক্ষতিপূরণের দাবি উড়িয়ে রেল জানিয়েছে, ওখানে সকলেই দখলদার। তাঁদের হটানোর জন্য মাঝেমধ্যেই অভিযান চালানো হয়। পরে তাঁরা ফের এসে বসে পড়েন। দখলদারির ফলে যাত্রীসুরক্ষা এবং রেলের কাজেও সমস্যা হয়।
তবে এই পুর্নবাসনের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করছে কলকাতা পুরসভা। বস্তিবাসীদের আপাতত নিউ আলিপুর এলাকার একটি স্কুলে আশ্রয়শিবির করে রাখা হচ্ছে। স্থানীয় কাউন্সিলর তথা বোরো চেয়ারম্যান জুঁই বিশ্বাস তাঁদের খাওয়ানোর বন্দোবস্ত করেছেন। তবে পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, রেলের জমির উপরে ওই বস্তিটি থাকায় বস্তিবাসীদের ঘর বানিয়ে দিতে পারবে না কলকাতা পুরসভা। বাংলার বাড়ি প্রকল্পে দখলীকৃত জায়গায় বাড়ি তৈরির নিয়ম নেই। জমির প্রশ্নে আইনি বাধা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক। মেয়র পারিষদ (বস্তি) স্বপন সমাদ্দার বলেছেন, ‘‘আমরা আপাতত ওই বস্তিবাসীদের ত্রাণ দেওয়ার সব বন্দোবস্ত করেছি। কিন্তু বাড়ি তৈরি করে দেওয়া নিয়ে আমাকে মেয়রের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তবে এটুকু বলতে পারি, কলকাতা পুরসভা বিষয়টি সহানুভূতির দৃষ্টি থেকেই দেখছে।’’