—প্রতীকী ছবি।
বেআইনি নির্মাণ এবং হেলে পড়া বাড়ি নিয়ে মহাসঙ্কটে কলকাতা পুরসভা। গত প্রায় এক পক্ষকাল ধরে কলকাতা শহরের নানা প্রান্তে বেআইনি নির্মাণ-সহ হেলে পড়া বাড়ি নিয়ে অভিযোগ আসছে। এমতাবস্থায় এমন সঙ্কটের পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে বোরোভিত্তিক নজরদারি বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ। বর্তমানে কলকাতা শহরে ১৬টি বোরো অফিসের অধীনে ১৪৪টি ওয়ার্ড রয়েছে। কেন্দ্রীয় অফিস থেকে সব ওয়ার্ডের অলিগলিতে নজরদারি সম্ভব নয়। তাই এই নজরদারির কেন্দ্রীয় ভাবে করাও অসম্ভব। তাই বোরো কমিটিগুলিকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যাতে বেআইনি নির্মাণ এবং হেলে পড়া বাড়ি নিয়ে তারা পদক্ষেপ করে। কারণ, গত বছর মার্চ মাসে গার্ডেনরিচে বেআইনি নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই ঘটনায় কলকাতা পুরসভা তো বটেই, বোরো-১৫-র দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার ও জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। বেজায় চাপে পড়েছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এখন মেয়র সব ক্ষেত্রেই কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিল্ডিং বিভাগকে। ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ছয় মাস পরেই হবে কলকাতা পুরসভার নির্বাচন। তাই বেআইনি নির্মাণ এবং হেলে পড়া বাড়ি নিয়ে যদি কোনও পদক্ষেপ না করা হয়, তা হলে তা কলকাতা পুরসভার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করবে। সেই কারণেই বোরোভিত্তিক দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। যদিও কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, সারা বছরই আমাদের বোরো কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারেরা বেআইনি নির্মাণ এবং বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সমীক্ষা করেন। এটা কলকাতা পুরসভার কাছে কোনও নতুন বিষয় নয়, তবে যে হেতু বেশ কিছু অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে, তাই সেই কাজে গতি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত বছর মেয়রের বিধানসভা কেন্দ্র কলকাতা বন্দরে বেআইনি নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ার পর কলকাতা পুর প্রশাসনের উপর চাপ তৈরি হয়েছিল। গত কয়েক সপ্তাহে বাঘাযতীন, ট্যাংরা, এন্টালি, কসবা এবং ভবানীপুর থেকে একের পর এক বাড়ি হেলে পড়ার অভিযোগ এসেছে। এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে বোরোর দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, বাঘাযতীনের বহুতলটি হেলে পড়ার পরে সমীক্ষা চালিয়েছিলেন পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারেরা। তাতে দেখা গিয়েছে, বাড়িটি একটু হেলে পড়লেও, তাতে আশঙ্কার কিছু ছিল না। কিন্তু ওই বহুতলের দু’টি ফ্ল্যাট তখনও অবিক্রিত থাকায় মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন প্রোমোটার সুভাষ রায়। বাড়িটি সামান্য হেলে থাকায় ওই ফ্ল্যাট দু’টি বিক্রয় হচ্ছিল না বলেই জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাই নিজ উদ্যোগে বহুতলটি সোজা করার বন্দোবস্ত করেছিলেন ওই প্রোমোটার। অপরিকল্পিত ভাবে আবাসনটি সোজা করতে গিয়েই ঘটে বিপত্তি, যার কারণে বাড়িটি অনেকটা হেলে পড়ে। সেই ঘটনার জেরে বাড়িটি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর থেকে শিক্ষা নিয়ে কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ থেকে বোরোগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের অনুমতি ছাড়া এই ধরনের কোনও বাড়ি অনুমতিহীন ভাবে মেরামত করার কোনও উদ্যোগ না নেওয়া হয়।