Kamduni Gangrape Case Verdict

রায় শুনে কাঁদছে কামদুনি, ফাঁসির আসামি খালাস পাওয়ায় নতুন লড়াইয়ের শপথ মৌসুমী, টুম্পাদের

রায় শুনতে আদালত চত্বরে হাজির হয়েছিল কামদুনি। কিন্তু রায় শুনে আদালতের মধ্যেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মৌসুমী, টুম্পা কয়ালরা। সুবিচার পেতে এ বার সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার তোড়জোড় করছেন তাঁরা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:৪১
File image of Mousumi Kayal and Tumpa Kayal of Kamduni

কামদুনি আন্দোলনের অন্যতম মুখ মৌসুমী এবং টুম্পা কয়াল। — ফাইল ছবি।

ঘটনার ১০ বছর পর কামদুনি গণধর্ষণ এবং হত্যা মামলার রায় দিল কলকাতা হাই কোর্ট। কিন্তু সেই রায়ে খুশি হতে পারেনি এক দশক ধরে কামদুনির নির্যাতিতার লড়াই লড়ে যাওয়া গ্রামবাসীরা। রায় শুনতে শুক্রবার সকাল সকাল আদালত চত্বরে হাজির হয়েছিলেন সেই আন্দোলনের একেবারে প্রথম সারিতে থাকা মৌসুমী কয়াল, টুম্পা কয়ালরা। রায় শুনে আদালত চত্বরেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন কামদুনির প্রতিনিধিরা।

Advertisement

কামদুনিকাণ্ডের প্রতিবাদের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছিলেন ওই গ্রামেরই মেয়ে মৌসুমী। রায় ঘোষণা হবে শুনে সকালেই কলকাতা হাই কোর্টে চলে আসেন তিনি। কামদুনি গ্রামে নির্যাতিতার যে মূর্তি রয়েছে তাতে শ্রদ্ধার্ঘ্য দিয়ে এসেছিলেন মৌসুমীর সঙ্গে আরও অনেকেই। আশা ছিল, নিম্ন আদালতের রায়ই বহাল থাকবে হাই কোর্টেও। কিন্তু সেটা না হওয়ায় অখুশি মৌসুমী আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘এই রায় মানতে পারছি না। আমরা খুব তাড়াতাড়ি সুপ্রিম কোর্টে যাব। দরকারে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে দরবার করব। কিন্তু দোষীদের সাজা আদায় না হওয়া পর্যন্ত থামব না।’’ দিল্লিতে নির্ভয়াকাণ্ডে যে আইনজীবীদের সাহায্য নিয়েছিল নির্যাতিতার পরিবার তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথাও বলেন মৌসুমী।

আদালত চত্বরে রায় শুনে হতবাক মৌসুমীর বন্ধু টুম্পাও। কান্নায় ভেঙে পড়ে টুম্পা বলেন, ‘‘আজ প্রমাণ হল আমাদের রাজ্যে কোনও বিচার নেই। একের পর এক মায়ের কোল খালি হচ্ছে। মেয়েদের নিরাপত্তা নেই।’’ কাঁদতে কাঁদতে তিনি একই কথা বার বার বলতে থাকেন, ‘‘দোষীদের কেন ছেড়ে দেওয়া হল?’’

২০১৩ সালে কামদুনিকাণ্ডের সময়ে গ্রামবাসীদের যে আন্দোলন হয়েছিল তাতে নেতৃত্ব দেন শিক্ষক প্রদীপ মুখোপাধ্যায়। শুক্রবার হাইকোর্টের রায় শোনার পরে তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘এই রায়ে একেবারেই খুশি নই। সুপ্রিম কোর্টে তো যাবই তার আগে বৃহত্তর আন্দোলনের কথা এখন থেকেই ভাবতে শুরু করেছি। ঠিক কী কী আমরা করব তা খুব তাড়াতাড়ি ঘোষণা হবে।’’ নিম্ন আদালতের রায় হাই কোর্টে বহাল থাকবে বলে আশায় থাকলেও তা না মেলায় প্রদীপের প্রশ্ন, ‘‘যারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, তারা কী ভাবে বেকসুর খালাস হতে পারে?’’

প্রসঙ্গত, শুক্রবার ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত সইফুল আলি এবং আনসার আলির সাজা বদলে আমৃত্যু কারাদণ্ড ঘোষণা করেছে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ। নিম্ন আদালতে আর এক ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আমিন আলি বেকসুর খালাস পেয়েছেন। অন্য দিকে, নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন জেলের সাজাপ্রাপ্ত ইমানুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম এবং ভোলানাথ নস্করও ১০ বছর জেল খাটার কারণে খালাস পেয়েছেন হাই কোর্ট থেকে। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রদীপ বলেন, ‘‘দোষী ১০ বছর জেল খেটেছে বলে খালাস পেয়ে যাবে? এটা কী হতে পারে? আমরা এই রায় মেনে নেব না। কামদুনি এই রায় মেনে নেবে না।’’

২০১৩ সালের ৭ জুন উত্তর ২৪ পরগনার কামদুনিতে কলেজ থেকে ফেরার পথে এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল। সেই ঘটনাকে ঘিরে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। তার রেশ পৌঁছে গিয়েছিল রাজধানী দিল্লিতেও। দোষীদের চরম সাজার দাবিতে পথে নেমে আন্দোলন শুরু করে কামদুনি গ্রাম। সে দিন গ্রামবাসীদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যাঁরা, মৌসুমী, টুম্পা তাঁদের মধ্যে অন্যতম। রায় শোনার পর তাঁরা নতুন করে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন।

Advertisement
আরও পড়ুন