ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। —ফাইল চিত্র।
তাঁদের আন্দোলনের চাপে পড়ে সোমবার সকালে পদত্যাগ করেছেন আরজি করের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। কিন্তু তার পরেও আন্দোলন থামছে না বলে হুঁশিয়ারি দিলেন হাসপাতালে বিক্ষোভরত জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সোমবার দুপুরে তাঁরা একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানেই জানান, তাঁদের ছয় দফা দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন চলবে।
কী কী দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা?
প্রথমত, যুবতী চিকিৎসক খুনের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। দোষীদের গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। সিসিটিভি ফুটেজ এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট-সহ তদন্ত সংক্রান্ত যাবতীয় নথি আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিকে দেখাতে হবে।
দ্বিতীয়ত, উচ্চ পদস্থ আধিকারিককে (অধ্যক্ষ, এমএসভিপি, ডিন অফ স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার, রেসপিরেটরি মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান) লিখিত ভাবে পদত্যাগ বা অপসারণ করতে হবে। তাঁদের লিখিত ভাবে ক্ষমাও চাইতে হবে। ভবিষ্যতে আর কখনও যাতে কোনও প্রাতিষ্ঠানিক পদে তাঁদের দায়িত্ব না দেওয়া হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
তৃতীয়ত, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিহত চিকিৎসকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
চতুর্থত, রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ এবং স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ২৪ ঘণ্টা সিসি ক্যামেরার নজরদারির বন্দোবস্ত করতে হবে। মহিলা এবং পুরুষ নিরাপত্তারক্ষীর ব্যবস্থা করতে হবে। হাসপাতাল চত্বরে পুলিশ পিকেটিং এবং পুলিশের টহলদারির ব্যবস্থা করতে হবে। কর্তব্যরত চিকিৎসকদের জন্য উপযুক্ত ঘরের বন্দোবস্ত করতে হবে, যাতে কাউকে আর সেমিনার হলে বিশ্রাম নিতে না হয়।
পঞ্চমত, আন্দোলনরত ডাক্তারি পড়ুয়া এবং জুনিয়র চিকিৎসকদের উপর অত্যাচারের জন্য কলকাতা পুলিশকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
ষষ্ঠত, সমাজমাধ্যমে যে মানহানি করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে পদক্ষেপ করতে হবে।
এই সমস্ত দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজে জরুরি বিভাগ-সহ সর্বত্র কর্মবিরতি চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। সেই সঙ্গে আরজি করের আন্দোলনের সঙ্গে গলা মিলিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে যে সমর্থন আসছে, তা-ও স্বাগত জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
উল্লেখ্য, আরজি করের সুপারকে রবিবারই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অধ্যক্ষ পদ থেকে সোমবার সন্দীপের ইস্তফার পরেও আন্দোলনকারীরা জানিয়েছিলেন, লিখিত পদত্যাগ চান তাঁরা। সাংবাদিক বৈঠকেও তা জানানো হল। সোমবার দুপুরে নিহত চিকিৎসকের বাড়িতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, আগামী রবিবারের মধ্যে পুলিশ এই ঘটনার কিনারা করতে না পারলে তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হবে। যে আধিকারিকদের পদত্যাগ চেয়েছেন আরজি করের আন্দোলনকারীরা, তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মমতা। তবে তার পরেও আন্দোলন থামছে না।