RG Kar Medical College and Hospital Incident

মাইক ছেড়ে ছুরি-কাঁচি! কর্মবিরতি তুলেই আরজি করের ওটিতে লহরী এবং রক্তিম, সঙ্গী অনিকেতও

রোগী হার্নিয়ার সমস্যায় ভুগছিলেন। আরজি কর হাসপাতালে সেই ‘অবস্ট্রাকশন আমবিলিক্যাল হার্নিয়া’র অস্ত্রোপচার করেন লহরী এবং রক্তিম। অপারেশন থিয়েটারে তাঁদের সঙ্গে ছিলেন অনিকেত।

Advertisement
সারমিন বেগম
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০০
বাঁ দিক থেকে সবুজ অ্যাপ্রন পরা লহরী সরকার, অনিকেত মাহাতো, রক্তিম মজুমদার।

বাঁ দিক থেকে সবুজ অ্যাপ্রন পরা লহরী সরকার, অনিকেত মাহাতো, রক্তিম মজুমদার। — নিজস্ব চিত্র।

সেই ৯ অগস্ট থেকে দিন-রাত কেটেছে কখনও খোলা আকাশ, কখনও ত্রিপলের নীচে। হাতে স্টেথোস্কোপ, ছুরি-কাঁচির বদলে ছিল মাইক। প্রেসক্রিপশনের বদলে লিখে গিয়েছেন পোস্টার, প্ল্যাক্যার্ড। টাইপ করে গিয়েছেন একের পর এক স্মারকলিপি, প্রশাসনকে আবেদন জানিয়ে ইমেল। অবশেষে আরজি কর হাসপাতালে কাজে ফিরলেন লহরী সরকার, রক্তিম মজুমদার, অনিকেত মাহাতোরা। শনিবার এক মহিলা রোগীর অস্ত্রোপচারও করলেন শল্যচিকিৎসক লহরী, রক্তিম। অস্ত্রোপচারের আগে রোগীকে অজ্ঞান করেন অ্যানস্থেশিস্ট অনিকেত।

Advertisement

রোগী হার্নিয়ার সমস্যায় ভুগছিলেন। আরজি কর হাসপাতালে সেই ‘অবস্ট্রাকশন আমবিলিক্যাল হার্নিয়া’র অস্ত্রোপচার করেন লহরী এবং রক্তিম। অপারেশন থিয়েটারে তাঁদের সঙ্গে ছিলেন অনিকেত। গত কয়েক দিন ধরে বার বার সাংবাদিক বৈঠক করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। সেই অনিকেতও শনিবার যোগ দিলেন কাজে। গায়ে চাপালেন সবুজ রঙের অ্যাপ্রন।

গত ৯ অগস্ট এই আরজি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চারতলার সেমিনার হলেই উদ্ধার হয়েছিল চিকিৎসক-পড়ুয়ার দেহ। প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তার পর থেকেই আন্দোলনের মঞ্চে তাঁরা। যদিও রবিবার করে ‘অভয়া ক্লিনিক’ করে রোগী দেখেছেন তাঁরা। জেনেছেন আন্দোলন নিয়ে সাধারণ মানুষের মতামত। সরকারি হাসপাতালে জরুরি বিভাগ-সহ অন্য বিভাগের কাজ দেখেছেন সিনিয়র ডাক্তারেরা। সেই আরজি কর হাসপাতাল শনিবার সকাল থেকে ফিরেছে পুরনো চেনা ছন্দে। জরুরি বিভাগে এসেছেন একের পর এক রোগী। কারও কারও অবস্থা গুরুতর। গলায় স্টেথোস্কোপ নিয়ে রোগী দেখতে নেমে পড়েছেন আরিফ আহমেদরা। এই আরিফও ছিলেন আন্দোলনের অন্যতম মুখ।

রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতালে একই ছবি দেখা গিয়েছে। দীর্ঘ আন্দোলনের পর কাজে যোগ দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা, জরুরি পরিষেবায়, যেমনটা শুক্রবার রাতে জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা জানিয়েছিলেন, বন্যাবিধ্বস্ত গ্রামীণ বাংলার কথা ভেবে তাঁরা আন্দোলন সাময়িক ভাবে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে আন্দোলন বন্ধ হবে না। চিকিৎসকেরা বলেন, ‘‘আমাদের একটি দল ইতিমধ্যে পাঁশকুড়ায় পৌঁছে গিয়েছে। সেখানকার বন্যাবিধ্বস্ত মানুষদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছি। এ ভাবেই নিজেদের অধিকার, দাবির জন্য প্রতিবাদ এবং সাধারণ মানুষের জন্য আমাদের কর্তব্য পালন করে যাব। এই আন্দোলন চলবে। আমরা শেষ দেখে ছাড়ব। যত দিন না চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের বিচার পাচ্ছি, আমরা আমাদের লড়াই চালিয়ে যাব।’’ শুধুমাত্র ‘অপরিহার্য’ বা এসেনশিয়াল সার্ভিস চালু রাখবেন বলে জানান জুনিয়র ডাক্তারেরা।

গত প্রায় দেড় মাস ধরে মোট পাঁচ দফা দাবিতে টানা আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সরকার পক্ষের সঙ্গে দু’দফায় বৈঠক হয়েছে। এক বার কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে। আর এক বার নবান্নে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নিজেদের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপিও জমা দেন তাঁরা। লালবাজারে গিয়ে কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের কাছেও স্মারকলিপি জমা দেন। শেষে মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যসচিবের সঙ্গে দু’দফা বৈঠকের পর হাসপাতালে নিরাপত্তা ও পরিকাঠামোগত দিকগুলিতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে সরকারের তরফে ইতিবাচক পদক্ষেপ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে এ বিষয়ে ১০ দফা নির্দেশিকা-সহ একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন পন্থ। এর পরেই স্বাস্থ্য ভবনের সামনে টানা ১০ দিনের অবস্থানে ইতি টানার সিদ্ধান্ত নেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। শুক্রবার দুপুরে শেষ হয় অবস্থান। শনিবার কাজে যোগ দেন তাঁরা। হাতে নেন ছুরি, কাঁচি, কেউ বা স্টেথোস্কোপ।

আরও পড়ুন
Advertisement