ফিরহাদ হাকিম। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিমের সাম্প্রতিক এক মন্তব্য নিয়ে নাগাড়ে আক্রমণ চালিয়েছে রাজ্য বিজেপি। এ বার বিধানসভার অধিবেশনে সেই মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন ফিরহাদ। তিনি জানালেন, কারও ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করতে চাননি তিনি। প্রসঙ্গত, বিধানসভার অধিবেশনে ফিরহাদের ওই ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য নিয়ে জলঘোলা করছে বিজেপি। ফিরহাদ বলতে উঠলেই বিজেপির বিধায়কেরা কক্ষত্যাগ করছিলেন ধারাবাহিক ভাবে।
বিজেপির বক্তব্য ছিল, ফিরহাদ ওই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা না চাইলে তাঁকে বিধানসভায় কোনও প্রশ্ন করবেন না পদ্মশিবিরের বিধায়কেরা। এমনকি, বিধানসভায় ফিরহাদ কোনও আলোচনায় অংশ নিলে সেই আলোচনা ‘বয়কট’ করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিজেপির পরিষদীয় দল। বুধবারেও তেমন ‘বয়কট’-এর ছবি দেখা গিয়েছিল বিধানসভার অধিবেশনে। ফিরহাদের বক্তৃতার সময় বিজেপি বিধায়করা অধিবেশন কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তা নিয়ে বৃহস্পতিবার ফিরহাদকে তাঁর অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন বিজেপি বিধায়কদেরও কক্ষে থাকার অনুরোধ করেন তিনি।
ফিরহাদ জানান, তাঁর মন্তব্যের ‘অপব্যাখ্যা’ করা হয়েছে। বিধানসভায় উপস্থিত সহ-বিধায়কদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বুকে হাত দিয়ে এক বার বলুন তো, আপনারা আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে ধর্মনিরপেক্ষ ভাবেন কি ভাবেন না? আমি সবসময় ধর্মনিরপেক্ষতার রাস্তাতেই থাকি। একটি ধর্মীয় সভায় গিয়ে কী বললাম, সেটা নিয়ে রাজনীতি করার মানে হয় না।” তখন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানান, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ফিরহাদের যাওয়া নিয়ে তাঁর আপত্তি নেই। কিন্তু সেখানে তাঁকে ‘মন্ত্রী ও মহানাগরিক’ হিসাবে ডাকা হয়েছিল। শুভেন্দু আরও বলেন, ‘আমরাও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাই। আপনি কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গিয়ে আপনার ধর্মের কথা বলবেন, প্রশংসা করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি নিজের ধর্মে বাকিদেরও আহ্বান করবেন, সেটা ঠিক নয়।’’
বিরোধী দলনেতা বক্তব্যের পর ফিরহাদের ব্যাখ্যা, তিনি সেই ধর্মের মানুষ বলেই তাঁকে ডাকা হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হয়েও দুর্গাপুজো, কালীপুজোয় যোগ দিই। এটা নিয়ে তর্ক হওয়া কাম্য নয়। কাউকে আঘাত করার কোনও উদ্দেশ্য আমার ছিল না।”
প্রসঙ্গত, শহর তিলোত্তমার একটি বড় দুর্গাপুজো কমিটির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক হলেন ফিরহাদ। চেতলা অগ্রণীর দুর্গাপুজোকে ‘ফিরহাদের পুজো’ বলেই লোকে চেনেন। শুধু তা-ই নয়, ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও দেখা মেলে কলকাতার মহানাগরিকের। যেমন দেখা মেলে ইদে। প্রসঙ্গত, ফিরহাদের ওই মন্তব্য নিয়ে তৃণমূল খানিকটা ‘অস্বস্তিতেই’ ছিল। এমনকি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ওই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া এড়িয়ে গিয়েছিলেন। কলকাতা বিমানবন্দরে তাঁকে ওই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মমতা বলেছিলেন, ‘‘আমি বিষয়টি জানি না। আমার জানা নেই।’’