অসম্পূর্ণ: বেশ কিছুটা অংশের কাজ বাকি কালীঘাট স্কাইওয়াকে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
এ এক অদ্ভুত খেলা!
প্রকল্পের সময়সীমা ভাঙার জন্যই যেন রাখা হচ্ছে নতুন নতুন সময়সীমা। এক বার নয়, বার বার। কবে যে কাজ শেষ হবে, তা জানা নেই প্রশাসনেরও। কর্তাব্যক্তিরা মাঝেমধ্যে হুঙ্কার ছাড়েন বটে, কিন্তু ওই পর্যন্তই। তাতে কাজের কাজ কিছুই হয় না। আর তাই কালীঘাট স্কাইওয়াকের কাজও বিশেষ এগোয় না। এ বার জানা গিয়েছে, কাজের যা গতি, তাতে আগামী বছরের পয়লা বৈশাখের মধ্যেও তা শেষ করা নিয়ে সংশয় আছে। পয়লা বৈশাখে প্রতি বছরই কালীঘাটে প্রবল ভিড় হয়। তিতিবিরক্ত এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীদের প্রশ্ন, একটা স্কাইওয়াক তৈরি হতে আর কত দিন লাগতে পারে?
প্রথম দফায় চলতি বছরের এপ্রিলের মধ্যেই স্কাইওয়াকের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সময়সীমা পেরিয়ে যায়। এর পরে মুখ্যসচিব নবান্নে বৈঠক করে নির্মাণ সংস্থাকে নির্দেশ দেন, ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করতে। সেই সময়সীমাও অচিরেই পেরোবে। সূত্রের খবর, বর্তমানে যে গতিতে কাজ চলছে, তাতে আগামী বাংলা নববর্ষেও কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে ঘোরতর সংশয় রয়েছে। নির্মাণ সংস্থার এক আধিকারিক দাবি করেন, ‘‘স্কাইওয়াক নির্মাণে দেরির পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম, পুরসভা বিল মেটাতে দেরি করছে। এর পাশাপাশি, কালীঘাটের মতো ঘিঞ্জি এলাকায় মাটির নীচে থাকা ব্রিটিশ আমলের জল ও নিকাশির পাইপলাইন অক্ষত রেখে কাজ করতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।’’ পুরসভার তরফে এক শীর্ষ আধিকারিক অবশ্য নির্মাণ সংস্থার দেরিতে টাকা পাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘পুরসভা ঠিক সময়েই টাকা দিচ্ছে। আসলে ওদের কাজে ঢিলেমির জন্যই এত দেরি হচ্ছে।’’
সম্প্রতি ওই প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডের মুখ থেকে কালী টেম্পল রোডে যাওয়ার রাস্তাটি খানাখন্দে ভরে গিয়েছে। চার দিকে অবিন্যস্ত অবস্থা। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড ও কালী টেম্পল রোডের মুখের দু’পাশে বিশাল গর্ত খোঁড়া হয়েছে। ওই দুই জায়গায় চলমান সিঁড়ি বসবে বলে জানালেন ইঞ্জিনিয়ারেরা। নির্মাণ সংস্থার এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার বললেন, ‘‘পয়লা বৈশাখে কালীঘাট স্কাইওয়াকের উদ্বোধন করা হলেও তখনও প্রায় দশ শতাংশ কাজ বাকি থাকবে। অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াও শেষের দিকের কিছু কাজ বাকি থাকবে।’’
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে কালীঘাট স্কাইওয়াকের কাজ শুরু হয়েছিল। কাজ শেষ হতে দেরি হওয়ায় গত এপ্রিল মাসে এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সামনেই ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, স্কাইওয়াকের নির্মাণ সংস্থাকে প্রয়োজনে সরিয়ে পূর্ত দফতরকে দিয়ে বাকি কাজ করানো হোক। মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশের পরেই তড়িঘড়ি স্কাইওয়াকের নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেন মেয়র। গত মে মাসে নবান্নে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে এবং একাধিক সরকারি সংস্থার শীর্ষ কর্তাদের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে স্কাইওয়াকের নির্মাণ সংস্থাকে এ বছরের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে পূর্ত দফতরের নজরদারিতে স্কাইওয়াকের কাজের অগ্রগতি নিয়ে ১৫ দিন পর পর রিভিউ বৈঠকও হচ্ছে। কিন্তু এত সব করেও নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করা নিয়ে প্রবল সংশয় দেখা দিয়েছে।
কাজে এত দেরি হচ্ছে কেন?
নির্মাণ সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, স্কাইওয়াকের কাজের জেরে কয়েক মাস আগে প্রায় ১৫০ মিটার লম্বা ও তিন মিটারেরও বেশি
চওড়া একটি বিশাল ইটের তৈরি বহু পুরনো নিকাশি নালা ফেটে যায়। এ ছাড়া, কালী টেম্পল রোডেও একটি নিকাশি পাইপ ফেটে যায়। ওই দু’টি নিকাশি নালার মেরামতি করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার উপরে সমস্যা আরও বাড়িয়েছে কালীঘাটের মতো ঘিঞ্জি এলাকায় মাটির নীচে থাকা একাধিক বড় বড় জলের পাইপ ও
নিকাশি নালা।
পুরসভার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শীর্ষ ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘গত প্রায় দু’বছর ধরে স্কাইওয়াকের কাজ করতে গিয়ে একাধিক জায়গায় জল ও নিকাশির পাইপ ফেটেছে। এখন তাই কাজ করার সময়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে গিয়েই দেরি হচ্ছে।’’ প্রায় ৫০০ মিটার লম্বা এবং সাড়ে ১০ মিটার চওড়া স্কাইওয়াক তৈরিতে খরচ ধরা হয়েছে ৮০ কোটি টাকা। স্কাইওয়াকের একটি দিক কালীঘাট মন্দির থেকে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডের দিকে যাবে। আর একটি দিক কালীঘাট থানার পাশ দিয়ে গুরুপদ হালদার রোডের দিকে নামবে।