Jadavpur University

ছাত্র-হেনস্থায় তদন্ত কমিটি, ফের হস্টেলে ক্যামেরা বসানোর দাবি

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, অন্তর্বর্তী উপাচার্য ভাস্কর গুপ্তের সঙ্গে বৈঠকে আধিকারিকদের একাংশ দাবি করেছেন, কোনও অঘটনের পুনরাবৃত্তি এড়াতে বারান্দায় ছাত্রদের জড়ো হওয়ার ঘটনা ঘটলেই কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ করা উচিত।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৪ ০৭:৪৮
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেল।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেল। —ফাইল চিত্র।

এক বছর আগে যা ঘটেছিল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলে ছাত্র-পীড়নের জেরে সেই দাবিগুলিই ফের মাথাচাড়া দিল। মেন হস্টেলে সালিশি সভা বসিয়ে কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক ছাত্রকে চুরির অভিযোগে ধ্বস্ত করার পরে আবারও হস্টেলের বারান্দাগুলিতে একাধিক সিসি ক্যামেরা বসানোর দাবি উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, অন্তর্বর্তী উপাচার্য ভাস্কর গুপ্তের সঙ্গে বৈঠকে আধিকারিকদের একাংশ দাবি করেছেন, কোনও অঘটনের পুনরাবৃত্তি এড়াতে বারান্দায় ছাত্রদের জড়ো হওয়ার ঘটনা ঘটলেই কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ করা উচিত। তার জন্য হস্টেলের ভিতরেও কিছু অংশে সিসি ক্যামেরা বসানো জরুরি।

Advertisement

এর পাশাপাশি, গত বুধবার রাতে মেন হস্টেলে ওই ছাত্রটিকে হেনস্থার ঘটনায় স্বতন্ত্র তদন্ত কমিটি গড়েছেন যাদবপুর কর্তৃপক্ষ। চার সদস্যের ওই কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জন আধিকারিক, অ্যান্টি-র‌্যাগিং স্কোয়াডের প্রধান তথা ফার্মাসির অধ্যাপক সন্ময় কর্মকার এবং যাদবপুরের বাইরের লোক হিসাবে এক জন আইন বিশারদ ও এক জন চিকিৎসক রয়েছেন।

গত সপ্তাহের ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিলেও হস্টেলে সিসি ক্যামেরা বসানোর বিষয়টি নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়। সোমবার বৈঠক শেষে অন্তর্বর্তী উপাচার্য বলেন, “এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আরও অনেকের মতামত নিয়েই যা করার করা হবে।”

উল্লেখ্য, এক বছর আগে মেন হস্টেলে র‌্যাগিংয়ের জেরে ছাত্র-মৃত্যুর ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেননি কর্তৃপক্ষ। তবে ভাস্কর এ দিনও বলেন, ‘‘র‌্যাগিংয়ে জড়িতদের শো-কজ় করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অনেকের নাম উঠে এসেছে, তাই সময় লাগছে।’’ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, কারণ দর্শানোর চিঠির বয়ান ইতিমধ্যেই তৈরি। যদিও এতে যাদবপুর প্রাঙ্গণে ফের গোলমালের আশঙ্কা রয়েছে। তা ছাড়া, অভ্যন্তরীণ তদন্তের সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও যথেষ্ট মাথাব্যথা কর্তৃপক্ষের।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকেরা মনে করছেন, র‌্যাগিংয়ের মতো ঘৃণ্য কাজে সক্রিয় কিছু ছাত্র এখনও মেন হস্টেল বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ঘুরছে বলেই বার বার নানা অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে চলেছে। এমনকি, মেন হস্টেলের সুপারেরাও কয়েক জন ছাত্রের সামনে অসহায় বলে মনে করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষও মানছেন, গত সপ্তাহের ঘটনায় যাদবপুরের মেডিক্যাল অফিসার মিতালি দেব তৎপর না-হলে পরিণতি ভয়াবহ হতে পারত।

সূত্রের খবর, এ দিনও মেডিক্যাল অফিসারের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন অন্তর্বর্তী উপাচার্য। সেই সঙ্গে রাতে হস্টেলে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যেতে হলে মেডিক্যাল অফিসারের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার বিষয়টিও কর্তৃপক্ষ মেনে নিয়েছেন। মিতালি পরে বলেন, “আমিও মনে করি, হস্টেলের বারান্দায় সিসি ক্যামেরা থাকা দরকার।” তিনি জানান, সেই রাতে হস্টেলে দু’জন সুপার ছিলেন। তার পরেও বেপরোয়া ছাত্রদের পুরোপুরি সামলানো যায়নি। মিতালির কথায়, “সুপার ছিলেন বলে ছেলেটির গায়ে কেউ হাত তোলেনি। এটা খুবই দুঃখজনক, কর্তৃপক্ষের এত চেষ্টা সত্ত্বেও কিছু ছাত্রের জন্য আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে।”

ঘটনাচক্রে, মেন হস্টেলে গত বছর মৃত নবাগত ছাত্রটির বাৎসরিক শ্রাদ্ধানুষ্ঠান এ দিনই মায়াপুরের শ্রীচৈতন্য মঠে সম্পন্ন হয়েছে। ছেলেটির মা বলেন, “আমি ওষুধের উপরে বেঁচে। ওর বাবার অবস্থা অপ্রকৃতিস্থের মতো। যাদবপুরে ছেলেকে পড়াতে গিয়ে আমাদের সবার জীবনই শেষ হয়ে গেল।” র‌্যাগিং -কাণ্ডে অভিযুক্তদের কঠোরতম শাস্তির দাবির পাশাপাশি তৎকালীন কর্তৃপক্ষেরও শাস্তি চেয়েছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন
Advertisement