Cycle race

প্যাডেলে পা রেখে দিঘা থেকে দার্জিলিং

তাঁরা পাড়ি দেবেন মোট ৮৩০ কিলোমিটার পথ। ছুঁয়ে যাবেন পশ্চিমবঙ্গের একাধিক ঐতিহাসিক জায়গা।

Advertisement
সুনীতা কোলে
শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:১৫
প্রথম বারের প্রতিযোগিতায় এক সাইক্লিস্ট।

প্রথম বারের প্রতিযোগিতায় এক সাইক্লিস্ট। —নিজস্ব চিত্র।

সূর্যোদয়ের কিছুটা আগেই বঙ্গোপসাগরের ঢেউকে সাক্ষী রেখে প্যাডেলে পা ছোঁয়াবেন ৩৭ জন। তাঁদের সেই যাত্রা থামবে হিমালয়ের কোলে, দার্জিলিংয়ের ঘুম স্টেশনে। তাঁরা পাড়ি দেবেন মোট ৮৩০ কিলোমিটার পথ। ছুঁয়ে যাবেন পশ্চিমবঙ্গের একাধিক ঐতিহাসিক জায়গা।

Advertisement

আজ, শনিবার ভোর ৫টায় শুরু হয়েছে এই সাইকেল প্রতিযোগিতা— ‘কোস্ট টু ক্রেস্ট’। আয়োজকেরা জানাচ্ছেন, এটি পূর্ব ভারতের একমাত্র আল্ট্রা সাইকেল প্রতিযোগিতা। কোনও প্রতিযোগিতা ২০০ কিলোমিটারের বেশি হলে তবেই তা আল্ট্রা গোত্রভুক্ত হতে পারে। ২০২৩-এ শুরু হওয়ার পরে চলতি বছরে দ্বিতীয় বার আয়োজন করা হয়েছে এই প্রতিযোগিতার। এতে অংশ নিতে ইতিমধ্যেই দিঘায় হাজির হয়ে গিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সাইক্লিস্টরা। বছরের শেষ ক’টা দিনে তাঁরা পরীক্ষা দেবেন শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতার। সমতল থেকে পাহাড়— বাংলার বৈচিত্রময় ভৌগোলিক গঠন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে তাঁদের দিকে।

দিঘার মেরিন ড্রাইভে শুরু হয়ে ঘুম পৌঁছনোর মধ্যে যাত্রাপথে পড়বে কোলাঘাট, ডানকুনি, মগরাহাট, নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর, বহরমপুর, ফরাক্কা, ডালখোলা, শিলিগুড়ি ও হিল কার্ট রোড। শেষের দিকের প্রায় ৮০ কিলোমিটার সাইকেল চালানো ক্রমশই কঠিন হতে থাকবে, পাহাড়ি রাস্তার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন প্রতিযোগীরা। তবে অনেকের কাছে সেটিই রেসের প্রধান আকর্ষণ। পুণে থেকে দিঘায় আসার পথে তেমনটাই জানালেন অমিত সমর্থ। বিশ্বের একাধিক দীর্ঘ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা, ভারতীয় সাইক্লিস্টদের মধ্যে অন্যতম পরিচিত মুখ অমিতই প্রথম বারের কোস্ট টু ক্রেস্টের বিজয়ী ছিলেন। ৪০ ঘণ্টায় রেস শেষ করেন তিনি।

অমিত বলেন, ‘‘সাইকেলে চেপে বাংলাকে চেনার সুযোগ আর শেষের দিকে পাহাড়ি পথে চালানো— এই দুটোর টানেই আবার যোগ দিচ্ছি।’’ তিনি জানান, প্রতিযোগীরা পুরো রাস্তাই পাড়ি দেবেন অন্য কারও সহায়তা ছাড়া। মানসিক ভাবে শক্তিশালী অনেকেই রাতে না ঘুমিয়েও রেস শেষ করার চেষ্টা করবেন। প্রথম বার বাংলায় সাইকেল প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে পেরে আনন্দিত প্রবীণতম প্রতিযোগী, বছর সত্তরের মহিন্দর সিংহ ভারজ। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, পুণে থেকে গোয়ার পথে এর আগে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া মহিন্দর বলেন, ‘‘আমার বয়স জেনে অনেকেই অবাক হন। কিন্তু নিয়মিত অনুশীলনের সামনে বয়সটা ব্যাপারই নয়। আমি সাইকেল চালানো শুরুই করেছি ৫৫ বছর বয়সে।’’

‘এনডিওরেন্স সাইক্লিং’ গোত্রের এই প্রতিযোগিতা ওয়ার্ল্ড আল্ট্রা সাইক্লিং অ্যাসোসিয়েশন অনুমোদিত। এ ছাড়াও, এই প্রতিযোগিতায় সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছতে পারলে মিলবে রেস অ্যাক্রস আমেরিকা (আর এ এ এম)-য় যোগদানের ছাড়পত্র। আমেরিকার পশ্চিম উপকূল থেকে পূর্ব উপকূল পর্যন্ত প্রায় ৪৮০০ কিলোমিটার পথে হয় ওই রেস। সাইক্লোলজি ইন্ডিয়া ও ডিকোয়েস্টস অ্যাডভেঞ্চার নামে একটি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় প্রথম বার যোগ দিয়েছিলেন ১৮ জন। তাঁদের মধ্যে চার জন নির্ধারিত সময়ে রেস শেষ করেছিলেন। আয়োজকদের তরফে অভিষেক তুঙ্গা বলেন, ‘‘সাইক্লিং বেশ খরচসাপেক্ষ। বিদেশে বা দেশের অন্য কোথাও রেসে যেতে পারেন না অনেকেই। পূর্ব ভারতের সাইকেল চালকদের এই ধরনের লম্বা রাস্তার প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার সুযোগ করে দিতেই কোস্ট টু ক্রেস্ট শুরু হয়। পাশাপাশি, আমাদের রাজ্যকে জানারও একটা সুযোগ হয়। তবে সারা দেশ থেকেই চালকেরা আসছেন। ৩০ তারিখ সকাল ৬টায়, অর্থাৎ ৪৯ ঘণ্টার মধ্যে কোনও প্রতিযোগী ঘুম পৌঁছতে পারলে তিনি আর এ এ এম-এ যোগ দিতে পারবেন।’’ এ ছাড়া, রেস শেষ করার শংসাপত্র পেতে গেলে ঘুম পৌঁছতে হবে অন্তত ৫৯ ঘণ্টা, অর্থাৎ ৩০ তারিখ বিকেল ৪টের মধ্যে।

দু’-আড়াই দিনের পরিশ্রমের পরে প্রতিযোগীদের জন্য অপেক্ষা করবে বর্ষশেষের দার্জিলিং। ৩১ তারিখে শৈলশহরের ঐতিহাসিক কাফে গ্লেনারিজ়ে আনন্দে মাতবেন সকলে।

Advertisement
আরও পড়ুন