শিশু বিক্রির অভিযোগে ওই দম্পতি-সহ মোট ছ’জনকে গ্রেফতার করল সিআইডি। —প্রতীকী চিত্র।
বেআইনি ভাবে শিশু কেনার অভিযোগে এক দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছে থাকা দু’মাসের একটি শিশুকন্যাকেও উদ্ধার করেছে সিআইডি। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বেআইনি ভাবে শিশু বিক্রির তদন্তে নেমে মঙ্গলবার ভোরে নাগেরবাজার থানার যশোর রোডের একটি আবাসনে হানা দেওয়া হয়। সেই আবাসনের ১০তলা থেকে গ্রেফতার করা হয় ওই দম্পতিকে। ধৃতদের নাম বিজয় সন্থালিয়া এবং নেহা সন্থালিয়া। দু’জনকেই মঙ্গলবার হাওড়া আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাঁদের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। দম্পতির থেকে উদ্ধার হওয়া শিশুটিকে তুলে দেওয়া হয়েছে শিশু কল্যাণ সমিতির (সিডব্লিউসি) হাতে। এই নিয়ে বেআইনি ভাবে শিশু বিক্রির অভিযোগে ওই দম্পতি-সহ মোট ছ’জনকে গ্রেফতার করল সিআইডি।
গত নভেম্বরে শালিমার স্টেশনের সামনে বিহার থেকে এক শিশুকে নিয়ে এসে বিক্রির চেষ্টার অভিযোগে মানিক হালদার এবং মুকুল হালদার নামে এক দম্পতিকে গ্রেফতার করেছিল সিআইডি। তাদের জেরা করে জ্যোৎস্না মণ্ডল নামে এক মহিলাকে গত ডিসেম্বর মাসে গ্রেফতার করেন তদন্তকারীরা। জ্যোৎস্নাকে জেরা করে জানা যায়, নভেম্বরে বিহারের গয়া থেকে আনা এক সদ্যোজাতকে প্রায় সাত লক্ষ টাকায় সে বিক্রি করেছে সন্থালিয়া দম্পতির কাছে। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, জ্যোৎস্না জেরার মুখে জানিয়েছে, সে শিশু বিক্রি চক্রের চাঁই মানিকের কাছ থেকে ওই শিশুটিকে পেয়েছিল। ধৃত সন্থালিয়া দম্পতির এক বন্ধুর সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। তাঁর মাধ্যমেই মানিকের থেকে নেওয়া শিশুটিকে ওই দম্পতির হাতে তুলে দেয় জোৎস্না। ধৃত দম্পতির ওই বন্ধুর খোঁজ শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। তাঁকে পেলেই জানা যাবে, কী ভাবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল জ্যোৎস্নার।
ধৃত দম্পতিকে জেরা করে গোয়েন্দারা জেনেছেন, তাঁদের সাত বছরের একটি ছেলে রয়েছে। তবে তার সঙ্গে একটি কন্যাসন্তানেরও ইচ্ছে ছিল তাঁদের। কিন্তু শারীরিক সমস্যার কারণে তাঁদের আর সন্তান হবে না, এ কথা জানার পরেই তাঁরা সন্তান দত্তক নেওয়া প্রসঙ্গে কথা বলেন এক বন্ধুর সঙ্গে। সেই মতো নভেম্বরের গোড়ার দিকে জ্যোৎস্নার থেকে সাত লক্ষ টাকায় ওই শিশুকন্যাটিকে কিনে নেন তাঁরা।
বেআইনি ভাবে শিশু বিক্রি এবং পাচারের মামলায় সিআইডি জানতে পেরেছে, এই চক্রের মাথা গয়ার বাসিন্দা এক মহিলা। তার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে মানিকের। ওই মহিলাই পটনা এবং গয়ার বিভিন্ন নার্সিংহোম এবং আইভিএফ সেন্টার থেকে সদ্যোজাতদের সংগ্রহ করে। পরে তাদের বিক্রির জন্য তুলে দেওয়া হয় মানিকের হাতে।
মানিকের মোবাইলের সূত্র ধরেই সেই মহিলার নাম জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। কিন্তু বিহারে তিন বার হানা দিয়েও খোঁজ মেলেনি তার। এক তদন্তকারী জানান, সন্থালিয়া দম্পতি ছাড়াও মানিক এবং জ্যোৎস্না আরও বহু দম্পতিকে বেআইনি ভাবে শিশু বিক্রি করেছে। ধৃতদের জেরা করে এমন বেশ কিছু দম্পতির সন্ধান মিলেছে।