Dilip Ghosh

দিলীপকে দলের পদ থেকে সরিয়ে দিল বিজেপি, তিনি এখন শুধুই সাংসদ, পদ্মের কমিটিতে বড় রদবদল

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৩ ১০:৪৪
Dilip Ghosh

দিলীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

রাজ্য সভাপতি পদ খোয়ানোর পরে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি করা হয়েছিল দিলীপ ঘোষকে। কিন্তু এ বার সেই পদ খোয়ালেন দিলীপ। এখন তিনি শুধুই মেদিনীপুরের সাংসদ। শনিবার সকালে সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা যে নতুন কমিটি ঘোষণা করেছেন তাতে দিলীপের নাম নেই। বিজেপি সূত্রে খবর, বার বার তাঁর মুখে লাগাম পরানোর চেষ্টা সত্ত্বেও দিলীপ তাতে কান দেননি। এই কারণেই তাঁকে দলীয় পদ থেকে সরানো হল। বিজেপির অন্য শিবিরের মত, যে হেতু সামনেই লোকসভা নির্বাচন, তাই সাংসদ দিলীপকে নিজের এলাকায় সময় দেওয়ার সুযোগ করে দিতে সর্বভারতীয় দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে।

গত কিছু দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল দিলীপকে সর্বভারতীয় দায়িত্ব থেকে সরিয়ে কেন্দ্রের মন্ত্রী করা হবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করে পরে দলীয় পদ থেকে সরানোই দস্তুর। তবে তার আগেই দিলীপকে সর্বভারতীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার মধ্যে অন্য ইঙ্গিত পাচ্ছেন রাজ্য বিজেপির নেতারা। বিজেপি শিবির বলছে, অনেক দিন ধরেই দিলীপকে নিয়ে অসন্তোষ ছিল কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। নিজের মতো করে কাজ করে, মন্তব্য করে তিনি দলের অনুশাসন মানছেন না বলে অভিযোগ ছিল। সেই কারণেই এটা একটা শাস্তিমূলক পদক্ষেপ।

Advertisement

যদিও দিলীপ সেটা বলছেন না। তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমি এখনও কোনও চিঠি পাইনি। তবে এটা শুনেছি যে, দলের সাংসদদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। সেটা লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়েই। সাংসদরা যাতে নিজের নিজের এলাকায় বেশি করে সময় দিতে পারেন, তাই এই পদক্ষেপ।’’

তবে দিলীপের দাবি পুরোপুরি ঠিক নয়। নড্ডার ঘোষিত নতুন সর্বভারতীয় কমিটিতে লোকসভার সাংসদ রয়েছেন তেলঙ্গানার সঞ্জয় বন্দি। এ ছাড়াও বেশ কয়েক জন রাজ্যসভার সাংসদ রয়েছেন। সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি পদেই রয়েছেন ছত্তিশগড়ের সরোজ পাণ্ডে, উত্তরপ্রদেশের রেখা বর্মা, লক্ষ্মীকান্ত বাজপেয়ী। এই তিন জনই রাজ্যসভার সাংসদ। দিলীপকে সরিয়ে দেওয়ার ফলে এখন বিজেপির সর্বভারতীয় কমিটিতে বাংলার প্রতিনিধি রইলেন শুধু অনুপম হাজরা। আগের মতোই তিনি সর্বভারতীয় সচিব পদে রয়েছেন। উল্লেখযোগ্য, বাংলার প্রাক্তন পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় এ বারেও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক থাকছেন। একটা সময় শোনা গিয়েছিল, দলের কাজের মধ্যে সে ভাবে না থাকার জন্য তাঁকে সর্বভারতীয় কমিটি থেকে ছেঁটে দেওয়া হতে পারে। তবে বিজেপিতে গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ সম্পাদক পদে আট জনের মধ্যে কৈলাসের নাম রয়েছে।

নতুন কমিটিতে সবচেয়ে বড় বদল দিলীপের অপসারণই। এখনও পর্যন্ত দলের রাজ্য নেতৃত্ব এ নিয়ে চুপ। তাঁর অনুগামীরা দাবি করে থাকেন, রাজ্য বিজেপিতে পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে লোকসভা নির্বাচনে ফলের নিরিখে দিলীপই সর্বকালের সেরা রাজ্য সভাপতি। তাঁর জমানাতে দলের বিধায়ক সংখ্যা তিন থেকে ৭৭ হয়েছে। তবে দলীয় নিয়ম মেনে টানা দু’টি মেয়াদ রাজ্য সভাপতি থাকার পরে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর জায়গায় আসেন বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। দিলীপকে করা হয় সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি।

একটা সময়ে আরএসএস প্রচারক থাকা দিলীপ রাজনীতিতে আসার কিছু দিনের মধ্যেই রাজ্য সভাপতি হন। নিজে প্রথমে বিধায়ক এবং পরে সাংসদ হন। ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বরে তাঁকে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি করা হয়। কিন্তু তার পরেও নির্দিষ্ট করে কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। বাংলাতে তো নয়ই, দেশের অন্য কোনও রাজ্যেও নয়। পরে ২০২২ সালের মে মাসে দেশজুড়ে বিজেপির বুথ সশক্তিকরণ কর্মসূচির সময়ে বাংলার বাইরে পাঁচটি রাজ্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল দিলীপকে।

তবে তার আগেই দিলীপের মুখে লাগাম পড়ানোর চেষ্টা হয়। ২০২২ সালের ৩১ জুন দিলীপকে ‘সেন্সর’ করেন বিজেপি নেতৃত্ব। নড্ডার হয়ে চিঠি পাঠান দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সদর দফতরের ভারপ্রাপ্ত নেতা অরুণ সিংহ। লেখা হয়, ‘‘আপনার এমন আচরণে দলীয় নেতৃত্ব গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন এবং মর্মাহত। দলীয় নেতৃত্ব আশা করেন এ বার বিষয়টিতে আপনি গুরুত্ব দেবেন, নিজের পদমর্যাদার প্রতি সুবিচার করে আপনি দলকে উদ্বুদ্ধ এবং ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করবেন।’’ এর পরে দিলীপ কিছু দিন চুপ থাকলেও পরে আবার এলোমেলো মন্তব্য করতে থাকেন। বিজেপির একাংশ মনে করছেন সেই চিঠির পরে কাজ না হওয়াতেই এ বার দিলীপকে আরও কড়া বার্তা দেওয়া হল।

আরও পড়ুন
Advertisement