Kolkata Child Selling

কলকাতায় শিশু বিক্রির তদন্তে ‘মিডলম্যান’ গ্রেফতার! পুলিশের নজরে একটি আইভিএফ কেন্দ্রের ভূমিকা

পুলিশের অনুমান, শহরের বুকে জাঁকিয়ে শিশু কেনাবেচার ব্যবসা চালাচ্ছে একটি চক্র। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বুধবার গ্রেফতার করা হল আরও দু’জনকে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৩ ১৯:২৯
Another person detained in Kolkata’s Child Selling incident

—প্রতীকী ছবি।

খাস কলকাতার বুকে চার লক্ষ টাকায় কন্যাসন্তান বিক্রির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই তৎপর কলকাতা পুলিশ। শিশু বিক্রির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হল কলকাতার বেনিয়াপুকুর এলাকার এক ডায়গনস্টিক সেন্টারের কর্মীকে। তাঁর বাড়ি মুর্শিদাবাদে। এ ছাড়াও নোনাডাঙা এলাকা থেকে মমতা পাত্র নামে আরও এক মহিলাকে এই শিশু কেনাবেচায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, বিক্রি হওয়া কন্যাসন্তানটির মা রূপালী মণ্ডল এবং পাটুলি থেকে গ্রেফতার হওয়া রূপা দাসের মধ্যে যোগসূত্র ছিলেন এই মমতা।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে খবর, ২১ দিনের কন্যাসন্তানকে কেনার অভিযোগে ধৃত গৃহবধূ কল্যাণী গুহকে বুধবার বেহালার বকুলতলায় একটি আইভিএফ সেন্টারে নিয়ে গিয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ। কল্যাণীর সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় লালতি দে নামে আরও এক অভিযুক্তকে। বেহালার আইভিএফ সেন্টারে তল্লাশি চালানোর সময় বেনিয়াপুকুরের ওই ডায়গনস্টিক সেন্টারের খোঁজ পান তদন্তকারী আধিকারিকরা। এর পর বেনিয়াপুকুর গিয়ে ওই ডায়গনস্টিক সেন্টারে তল্লাশি চালিয়ে এক কর্মীকে আটক করা হয়। তদন্তকারীদের অনুমান, ডায়গনস্টিক সেন্টারের আড়ালে শিশু কেনাবেচায় ‘মিডলম্যানের’ ভূমিকা পালন করতেন তিনি। ইতিমধ্যেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। জিজ্ঞাসাবাদের পরেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃত ওই ব্যক্তির নাম গোলাম অম্বিয়া। পুলিশ সূ্ত্রে খবর, এই গোলামই কল্যাণীর সঙ্গে লালতির আলাপ করিয়ে দিয়েছিল। লালতিও শিশু বিক্রির ঘটনায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বলে তদন্তকারীদের অনুমান।

পুলিশের অনুমান, শহরের বুকে জাঁকিয়ে শিশু কেনাবেচার ব্যবসা চালাচ্ছে একটি চক্র। আর সেই চক্রের পিছনে বড় ভূমিকা পালন করছে শহরের বুকে ইতিউতি গজিয়ে ওঠা আইভিএফ সেন্টারগুলি। এই সব আইভিএউ সেন্টারগুলির বৈধ কাগজপত্র রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। শিশু জন্মানোর আগেই বিক্রির দর ঠিক করা হচ্ছে কি না? সেই প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজতে এখন মরিয়া তদন্তকারীরা।

সোমবার রাতে ২১ দিনের ওই কন্যাসন্তানকে বিক্রির অভিযোগ ওঠে মা রূপালি মণ্ডলের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার কলকাতার আনন্দপুরের নোনাডাঙা রেল কলোনি এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ চার লক্ষ টাকার বিনিময়ে কন্যাসন্তানকে বিক্রি করে দেন অভিযুক্ত মা। স্থানীয়দের দাবি, রূপালি নোনাডাঙা রেল কলোনির একটি বাড়িতে তিন শিশুকে নিয়ে থাকতেন। তিন জনকেই সন্তান হিসাবে পরিচয় দিতেন তিনি। কিন্তু কয়েক দিন ধরেই তাঁর সদ্যোজাত কন্যাসন্তানকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে স্থানীয়দের দাবি। এর পর সন্দেহ বাড়লে স্থানীয়দের কয়েক জন পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে গিয়ে রূপালিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। কন্যাসন্তান কোথায়? এর সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। এর পরেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ সূত্রে খবর, জেরার মুখে ভেঙে পড়ে রূপালি স্বীকার করেন যে চার লক্ষ টাকার বিনিময়ে তিনি তাঁর সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরেই পাটুলি এলাকা থেকে রূপা দাস নামে আরও এক মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়। এর পর একে একে কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেফতার করা হয় স্বপ্না সর্দার, পূর্ণিমা কুণ্ডু এবং লালতি দে নামে তিন মহিলাকে। লালতির সূত্র ধরে বেহালার পর্ণশ্রী এলাকা থেকে কল্যাণীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, আদতে মেদিনীপুরের বাসিন্দা কল্যাণী বেহালার পর্ণশ্রী এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন। তাঁর বাড়ি থেকেই শিশুকন্যাটিকে উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে, কল্যাণী ১৫ বছর ধরে বিবাহিত। কিন্তু তিনি নিঃসন্তান। তার জন্যই তিনি কন্যাসন্তানকে কিনেছিলেন কি না তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ধৃতদের মঙ্গলবারই আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়। তাঁদের সকলকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

প্রসঙ্গত, শুধু কলকাতাই নয়, সাম্প্রতিক কালে রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতে শিশু বিক্রির অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। এপ্রিল এবং জুলাই মাসে টাকার বিনিময়ে শিশু বিক্রির অভিযোগ উঠেছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার নরেন্দ্রপুরে। আবার গত মাসে উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটিতে আইফোন কেনার জন্য পুত্রসন্তানকে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছিল দম্পতির বিরুদ্ধে। মায়ের কোল যে কোনও শিশুর কাছেই নিরাপদ আশ্রয়। কিন্তু ‘টাকার লোভে’ সেই আশ্রয়ই কখনও সখনও শিশুদের কাছে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা ভাবাচ্ছে পুলিশকে।

আরও পড়ুন
Advertisement