ipl betting

মাঠে এবং মোবাইলে আইপিএল সম্প্রচারের মধ্যে ব্যবধান ৩০ সেকেন্ড, তাতেই সক্রিয় বেটিং চক্র

সারা বছর ধরে বিভিন্ন বেটিং অ্যাপের রমরমা চলে ঠিকই, তবে আইপিএলে ‘পয়সা খাটানো’-র প্ল্যাটফর্মগুলিতে যোগদানকারীর সংখ্যা বেড়ে যায়। মোট বিজ্ঞাপনের কুড়ি শতাংশই এসেছে গেমিং অ্যাপ থেকে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৩ ০৬:০৯
An image of an IPL match

মাঠে এবং টিভি বা মোবাইলে সরাসরি সম্প্রচার— এই দুইয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ২৭ থেকে ৩০ সেকেন্ড। ফাইল ছবি।

মাঠে এবং টিভি বা মোবাইলে সরাসরি সম্প্রচার— এই দুইয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ২৭ থেকে ৩০ সেকেন্ড। আর তাকে হাতিয়ার করেই সম্প্রতি ক্রমশ জাল বিস্তার করছে ক্রিকেট বেটিং চক্র। এই কৌশল না জেনেই বহু ক্ষেত্রে আর্থিক লোকসানের সম্মুখীন হয়েও আরও বেশি টাকা জেতার তাগিদে ছুটছেন অনেকে। ফলত, খেলা থাকলেই যেন এই চক্রের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারি অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত শনিবারও ইডেনে আইপিএলের খেলার পরে গ্রেফতার করা হয়েছে অভয়রাজ সিঙ্ঘানিয়া এবং নন্দু সিংহ নামে দুই ব্যক্তিকে। যে ঘটনাপ্রবাহ প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে, অতীতে কখনও ক্রিকেট প্রতিযোগিতা ঘিরে কি বেটিংয়ের এত রমরমা দেখা গিয়েছে?

তদন্তকারীরা বলছেন, ‘‘একাধিক মোবাইল অ্যাপ থাকায় বেটিং এখন কার্যত জলভাত। কোনটি বৈধ আর কোনটি নয়, ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে সেই ভেদাভেদ। মাঠে খেলা দেখা আর সেটি টিভি বা মোবাইলে সম্প্রচারিত হওয়ার মধ্যেকার ব্যবধান কাজে লাগিয়েই চলছে রমরমা বেটিং কারবার।’’

Advertisement

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, সারা বছর ধরে বিভিন্ন বেটিং অ্যাপের রমরমা চলে ঠিকই, তবে আইপিএলে ‘পয়সা খাটানো’-র প্ল্যাটফর্মগুলিতে যোগদানকারীর সংখ্যা বেড়ে যায়। আজকাল আর টি-২০ মানে তারকা নিলাম নয়, মরসুম জুড়ে সাধারণ দর্শকদের জন্য রয়েছে কোটি কোটি টাকা রোজগারের হাতছানি। এই উদ্দেশ্যেই বাজার মাতাচ্ছে কিছু গেমিং অ্যাপ ও বেটিং সাইট। প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড়, চলচ্চিত্র তারকারা এই অ্যাপগুলির বিজ্ঞাপনে বলেন, ‘‘আপনার বন্ধুরা টিম বানিয়ে ফেলেছে, আপনি পিছনে পড়ে থাকবেন না কিন্তু!’’ বিজ্ঞাপনের শেষে যে আসক্তি এবং আর্থিক ক্ষতির সতর্কবার্তা দেন তাঁরা, তা ঢাকা পড়ে যায় তাঁদের তারকা ভাবমূর্তির নীচে।

লালবাজারের এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘কালেভদ্রে ১০০-২০০ টাকা জিতলে মনে হয়, রাস্তা খুলছে। কয়েক বার লোকসানের পরে জেতার খিদে আরও তীব্র হয়ে ওঠে। কিন্তু আদতে এর সুযোগ নিয়ে যায় একদল জুয়াড়ি।’’ লালবাজারের সাইবার শাখার এক অফিসারের কথায়, ‘‘বেটিং চক্রের একদল লোক মাঠে থাকে। তারা সরাসরি দেখতে পায়, কোন বলে কত রান হচ্ছে। ফলাফল জেনেই বেটিংয়ের দর নির্ধারণ করে তারা। আর যাঁরা ওই অ্যাপের মাধ্যমে টাকা ঢালছেন, তাঁরা খেলা দেখছেন টিভিতে। ফলাফল সঙ্গে সঙ্গে জানার কারণে বেটিং চক্রের লোকেরা লাভবান হয় বেশি। অন্য দিকে টাকা যাঁরা ঢালছেন, তাঁরা লভ্যাংশ পান কম।’’

আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে পুলিশের এক কর্তা জানালেন, চলতি বছরের আইপিএলে এখনও পর্যন্ত মোট বিজ্ঞাপনের কুড়ি শতাংশই এসেছে গেমিং অ্যাপ থেকে। বিজ্ঞাপনদাতার তালিকায় এর পরেই রয়েছে পানমশলা। গত মরসুমে প্রথম ১৪টি খেলার নিরিখে বিজ্ঞাপনদাতার তালিকায় এগিয়ে ছিল ই-শিক্ষা, ই-শপিং এবং ই-ওয়ালেট সংস্থাগুলি।

কিন্তু এমন অ্যাপ কি বৈধ? সাইবার বিশেষজ্ঞ তথা ‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং‌’-এর অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘বেটিং অ্যাপগুলির মধ্যেও একটা সূক্ষ্ম ব্যবধান তৈরি করে রাখা হয়েছে। ধরা হয়, ভাগ্যের উপরে ভিত্তি করে অনুমানের মাধ্যমে যে জিনিসে টাকা ঢালা হচ্ছে, সেটি নিষিদ্ধ। কিন্তু কোনও কিছুর পারদর্শিতার উপরে ভিত্তি করেটাকা ঢালা অবৈধ নয়। এখন কেউ বলতেই পারেন, তিনি ক্রিকেটের বোদ্ধা। বুঝেই বলছেন, কোন দল নামানো উচিত। সে ক্ষেত্রে সেটি অবৈধ, বলা যাবে না।’’ সেই সঙ্গে সন্দীপের দাবি, ‘‘বেশ কিছু রাজ্যে সব ধরনের মোবাইল বেটিং অ্যাপ নিষিদ্ধ হলেও সর্বত্র হয়নি। যত দিন তা না হচ্ছে, তত দিন এই জুয়ার রমরমা ঠেকানো কঠিন।’’

আরও পড়ুন
Advertisement