Kanchenjunga Express accident

নিয়ম না মেনে দ্রুত গতিতে মালগাড়ি চালিয়েই দুর্ঘটনা, রেলের পর্যবেক্ষণে ‘দায়ী’ মৃত চালক, জখম সহকারী

মালগাড়ির চালক, সহকারী চালক ও গার্ডকে দায়ী করার বিষয়টিতে সহমত পোষণ করেননি এনজেপির ‘চিফ লোকো ইনস্পেক্টর’ (সিএলআই) ওমপ্রকাশ শর্মা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২৪ ১৬:৫৪

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিয়ম অমান্য করে দ্রুত গতিতে মালগাড়ি চালানোর জন্যই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটেছে! যৌথ পর্যবেক্ষণ রিপোর্টে তেমনটাই দাবি করা হয়েছে বলে জানা গেল রেল সূত্রে। ওই পর্যবেক্ষণ রিপোর্টে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়েছে মালগাড়ির মৃত চালক অনিল কুমার, জখম সহকারী চালক মনু কুমার এবং ট্রেন ম্যানেজার (গার্ড) ভবেশকুমার শর্মাকে। বলা হয়েছে, স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা খারাপ থাকলে যে নিয়ম মেনে ট্রেন চালানো উচিত, তা মানেননি তাঁরা। একই সঙ্গে নিয়মের বাইরে বেরিয়ে অতিরিক্ত গতিতে মালগাড়ি চালিয়েছেন।

Advertisement

রেল সূত্রে খবর, পর্যবেক্ষণ রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, সোমবার সকাল ৮টা ২৭ মিনিটে রাঙাপানি স্টেশন ছেড়েছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। ওই দিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে রাঙাপানি এবং চটেরহাটের মধ্যেকার স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা ‘অকেজো’ থাকায় কাগুজে অনুমতি (রেলের পরিভাষায় ‘পেপার লাইন ক্লিয়ার টিকিট’)-তে ট্রেন চালানো হচ্ছিল। সেই মতো কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে ‘টি/এ ৯১২’ এবং ‘টি ৩৬৯ (৩বি)’ ফর্ম দেওয়া হয়েছিল। পরে সকাল ৮টা ৪২ মিনিটে রাঙাপানি স্টেশন থেকে ছাড়ার সময় মালগাড়িটিকেও দেওয়া হয়েছিল এই দু’টি ফর্ম।

‘টিএ ৯১২’ ফর্মে কী লেখা ছিল, তা আগেই প্রকাশ্যে এসেছে। রাঙাপানির স্টেশনমাস্টারের দেওয়া ওই ফর্মে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছিল, কোন কোন সিগন্যাল লাল থাকা সত্ত্বেও ‘ভাঙতে’ পারবেন চালক। এমনকি, কোথা থেকে কোন অবধি এই ‘অনুমতি’ বহাল থাকবে, তারও উল্লেখ ছিল। কিন্তু এর সঙ্গে যে ‘টি ৩৬৯ (৩বি)’ ফর্মটিও দেওয়া হয়েছিল, তা এই প্রথম পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে বলেই দাবি করেছে রেলের ওই সূত্র। নিয়ম অনুযায়ী, ‘টি ৩৬৯ (৩বি)’ ফর্মে লেখা থাকে, এক বা একাধিক সিগন্যাল খারাপ থাকলে স্টেটশমাস্টার যখন চালক এবং গার্ডকে ট্রেন চালানোর অনুমতি দেবেন কাগুজে পদ্ধতিতে, তখন ট্রেনের গতিবেগ যেন কোনও ভাবেই ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটারের বেশি না হয়। রেলের ওই সূত্রের দাবি, ওই নিয়ম নজরে রেখেই পর্যবেক্ষণ রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, নিয়মের তোয়াক্কা না করে দ্রুত গতিতে মালগাড়ি চালানো হয়েছিল। এর ভিত্তিতেই দায়ী করা হয়েছে মালগাড়ির চালক, সহকারী চালক ও গার্ডকে।

রেল সূত্রে খবর, যদিও মালগাড়ির চালক, সহকারী চালক ও গার্ডকে দায়ী করার বিষয়টিতে সহমত পোষণ করেননি এনজেপির ‘চিফ লোকো ইনস্পেক্টর’ (সিএলআই) ওমপ্রকাশ শর্মা। পর্যবেক্ষণ রিপোর্টেই তাঁর মত উল্লেখ করা আছে বলেই দাবি ওই সূত্রের। ওমপ্রকাশের মত, যে হেতু ভোর ৫টা ৫০ থেকে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা বিকল হয়ে ছিল, তাই এ ক্ষেত্রে ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে ‘টি/এ ৯১২’ ফর্ম দেওয়া উচিত হয়নি। উচিত ছিল ‘টি/ডি ৯১২’ ফর্ম দেওয়া। ঘটনাচক্রে, স্টেশনমাস্টারই এই অনুমতি দিয়ে থাকেন। সেই সূত্রেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে স্টেশনমাস্টারের ভূমিকা।

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য সুরক্ষা কমিশনার (সিসিআরএস) জনককুমার গর্গের নেতৃত্বে যে তদন্ত শুরু হয়েছে, তাতে ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে রবিবার রাত এবং সোমবার সকালে রাঙাপানিতে কর্তব্যরত থাকা দুই স্টেশন ম্যানেজারকে। রাঙাপানিতে সকালের ডিউটিতে থাকা স্টেশন ম্যানেজার অংশুকুমার অমরেশ আগেই বলেছেন, ‘‘কিছু বলব না। তদন্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা হলে, হবে।’’

জনকের নেতৃত্বে যে তদন্ত চলছে তা এখনও শেষ হয়নি। তার আগেই বুধবার কাটিহারের ডিআরএম সুরেন্দ্র কুমার জানিয়েছিলেন, মালগাড়ির গতিবেগ বেশি ছিল। প্রাথমিক ভাবে দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে সেটাই জানিয়েছিলেন তিনি। একই বিষয় দেখা গেল রেলের যৌথ পর্যবেক্ষণ রিপোর্টেও। সেখানে সকলে ঐকমত্য হলেও ওমপ্রকাশ নিজের ভিন্নমত লিখিত ভাবে জানিয়েছেন বলেই রেল সূত্রে খবর।

আরও পড়ুন
Advertisement