ED Attacked in Sandeshkhali

আক্রমণকারীরা ভারতের নাগরিক নাকি নৌকোয় ঢুকেছেন? সন্দেশখালি নিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়

সন্দেশখালিতে ইডির উপর আক্রমণ নিয়ে শাসকদলের তীব্র সমালোচনা করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি জানতে চাইলেন, মা-মাটি-মানুষের সরকার সুপ্রিম কোর্টে মামলা করতে কত টাকা খরচ করছেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:৩৯
Justice Abhijit Gangopadhyay

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।

রেশন ‘দুর্নীতি’ কাণ্ডে তৃণমূল নেতা শাহাজাহান শেখের বাড়ি হানা দিয়ে আক্রান্ত হওয়া ইডি আধিকারিকদের দেখতে হাসপাতালে গেলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেখানে আরও এক দফা রাজ্যের শাসকদলকে নিশানা করে সন্দেশখালির ঘটনাকে ‘অনভিপ্রেত’ এবং ‘লজ্জাজনক’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। পাশাপাশি বিচারপতি জানান, দুই ইডি আধিকারিকের চোট গুরুতর। মানবিকতার খাতিরে তাঁদের দেখতে হাসপাতালে এসেছেন। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আবারও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। সন্দেশখালি কাণ্ডে তাঁর মন্তব্য, ‘‘পুলিশের উপর আমার ভরসা আছে। কিন্তু পুলিশ পরিচালনার উপর কোনও ভরসা নেই। পুলিশকে যাঁরা পরিচালনা করছেন, তাঁরা নিজেদের স্বার্থে পুলিশকে কাজে লাগাচ্ছেন। পুলিশকে যদি হাত খুলে কাজ করত দেওয়া হয়, এই সব দুর্বৃত্তদের থামাতে দু-তিন দিন লাগবে।’’ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আবারও বলেছেন যে, তিনি মনে করেন বাংলার সাংবিধানিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়েছে। তিনি সচেতন ভাবেই শুক্রবার সকালে ওই মন্তব্য করেছিলেন।

Advertisement

সন্দেশখালিকাণ্ডে বিচারপতি তৃণমূল নেতাকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘বাড়িতে শাহজাহানকে পাওয়া যায়নি। তিনি এতই সাহসী যে, বাড়িতে থাকতে পারেননি। ইডির ভয়ে দৌড়ে চলে গিয়েছিলেন। কঠোর ব্যবস্থা তো নেওয়া উচিত বটেই।’’ এর পর সন্দেশখালিতে ইডি আধিকারিকদের উপর আক্রমণের ঘটনা নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমার একটা স্পেসিফিক প্রশ্ন আছে। যাঁদেরকে মারার জন্য লেলিয়ে দেওয়া হল, তাঁরা ভারতবর্ষের নাগরিক তো? তাঁরা অন্য কোনও জায়গা থেকে নৌকো করে এখানে ঢোকেননি তো? যদি উপযুক্ত তদন্ত হয়, তাহলে কারা কাকে আশ্রয় দিচ্ছে, সেটা জানা যাবে।’’

শুক্রবার রাতে আক্রান্ত ইডি আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করার পর সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দু’জনের মাথায় ভয়ঙ্কর চোট। অনেকগুলো স্টিচ হয়েছে। এক জন আইসিইউ-তে আছেন। দু’জন কেবিনে আছেন। বাইকে করে এসে পরিকল্পনামাফিক তাঁদের মারধর করা হয়েছে।’’ এর আগে সন্দেশখালিকাণ্ডে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। এ-ও জানান, তিনি চান যে, তৃণমূল নেতার বাড়িতে গিয়ে ইডি আধিকারিকরা আক্রান্ত হয়েছেন, সেই শাহাজাহান যেন শুক্রবার রাত ১২টার মধ্যে ইডি অফিসে হাজিরা দেন। হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে বিচারপতি বলেন, ‘‘বিভিন্ন তদন্তে যাতে অগ্রগতি না-হয় তার জন্য সুপ্রিম কোর্টে বহু মামলা ফাইল করেছে রাজ্য সরকার। সেই অধিকার তাদের আছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যদি কেউ মনে করেন, কোনও দুর্নীতি হয়নি, তাহলে তার উচিত তদন্তে সহযোগিতা করা। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। আবার কেউ যদি এটাও মনে করেন যে দুর্নীতি হয়েছে, কোর্টে-কোর্টে না দৌড়ে তাঁরও উচিত তদন্তে সহযোগিতা করা। এর কোনওটাই রাজ্য সরকার করেনি। আবার এখন দেখা যাচ্ছে, তদন্তকারীদের ভয় দেখিয়ে এই তদন্ত আটকানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’ পাশাপাশি সন্দেশখালিতে ইডি আধিকারিকদের মারধরের ঘটনাকে ‘নির্লজ্জ কাণ্ড’ বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘সারা দেশের কাছে পশ্চিমবঙ্গের নাম ছোট হয়েছে। আমি বিচারপতি হিসাবে নয়, ইডি আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি শুধু মানবিকতার খাতিরে।’’

উল্লেখ্য, শুক্রবার সকালে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে রেশন দুর্নীতির তদন্তে তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে হানা দেয় পাঁচ ইডি আধিকারিকের একটি দল। সরবেড়িয়া গ্রামে শাহজাহানের বাড়িতে ইডি আধিকারিকেরা পৌঁছনোর আগেই ঘিরে ফেলেন গ্রামবাসীরা। তার মধ্যে তৃণমূল নেতার বাড়ির সামনে গিয়ে তাঁকে ডাকাডাকি করেন ইডি আধিকারিকরা। ভিতর থেকে সাড়াশব্দ না মেলায় দরজা ভাঙার চেষ্টা হয়। ঠিক সেই সময়েই তাঁদের ঘিরে ফেলে মারধর শুরু হয় বলে অভিযোগ। সরিয়ে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীকেও। এর পর ইডি আধিকারিকদের ধাওয়া করে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেন শাহজাহানের অনুগামীরা। ভাঙচুর চলে গাড়িতে। সেই সময়েই তিন ইডি আধিকারিক জখম হন বলে খবর। তাঁদের সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা চলছে। এই ঘটনায় রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়। বিরোধীদের সমালোচনায় পড়েছে শাসকদল। এ নিয়ে আদালতে আগেও মন্তব্য করেন বিচারপতি। সন্ধ্যায় তিনি সন্দেশখালির তৃণমূল নেতার প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘যাঁকে খুঁজতে যাওয়া হয়েছিল, সেই শেখ শাহজাহান রাত ১২টার মধ্যে যেন ইডি অফিসে হাজিরা দেন। এটা আমি আশা করব। তাঁকে এবং তাঁর দলকে এ কথা জানাব। কারণ, তাঁর খোঁজে গিয়ে ইডি আধিকারিকরা আক্রান্ত হয়েছেন। দেখা যাক, তিনি আসেন কি না।’’

সন্দেশখালিতে অভিযানে গিয়ে সব থেকে বেশি আঘাত লেগেছে রাজকুমার নামে এক ইডি আধিকারিকের। আক্রান্ত বাকি দুই ইডি আধিকারিকও ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে তাঁদের দেখতে গিয়েছিলেনন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। আক্রান্তদের সঙ্গে দেখা করেন রেশন দুর্নীতিকাণ্ডের তদন্তকারী অফিসারও। এর পর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁদের সঙ্গে দেখা করার পর বলেন, ‘‘বিচারপতির পাশাপাশি আমি এক জন সাধারণ মানুষ। আমি জানতে চাই... আমাদের মা-মাটি-মানুষের সরকার এইটুকু অন্তত প্রকাশ করবেন যে, সুপ্রিম কোর্টে ছোটাছুটি করতে, এই তদন্ত আটকাতে মোট কত টাকা তারা খরচ করেছেন। এই হিসাব আমি জানতে চাই। এর পর দেখা যাবে কাকে ধরতে গিয়ে কাকে মারা হল। কে মৃত্যুর মুখোমুখি হল। কে পালিয়ে গেল।’’ আবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে শাসকদলের তরফে প্রতিক্রিয়া এসেছে। এ নিয়ে বিচারপতির নিজের কথায়, ‘‘আমি সকালে যখন এ নিয়ে মন্তব্য করেছিলাম তখন কিছু লোক, কিছু রাস্তার ছোঁড়া কিছু কিছু মন্তব্য করেছেন। তাঁদের সম্পর্কে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। কোন দল সে সম্পর্কেও কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’’

Advertisement
আরও পড়ুন