Junior Doctors Cease Work

পূর্ণ কর্মবিরতি চলবে দাবি না-মেটা পর্যন্ত, পুজোয় আন্দোলনের পদ্ধতি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে আলোচনায়

মহালয়ার দিন কলেজ স্ক্যোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল রয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের। এর পর ধর্মতলায় সভা। তবে পুজোর দিনগুলিতে আন্দোলনের পদ্ধতি নিয়ে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি জুনিয়র ডাক্তারেরা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৪ ১৩:৫৯
সাংবাদিক বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তারেরা।

সাংবাদিক বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তারেরা। —নিজস্ব চিত্র।

মহালয়ার আগের দিন ফের পূর্ণ কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। স্বাভাবিক ভাবেই আরও জোরদার হবে আন্দোলন। তবে পুজোর সময় আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেননি তাঁরা। এই বিষয়ে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত জানাবে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্‌স ফ্রন্ট’। ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আংশিক ভাবে কাজে ফিরেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। ১০ দিন কাজ করার পর ফের পূর্ণ কর্মবিরতি ঘোষণা। সরকার পক্ষের কাছে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেছেন তাঁরা। দাবি পূরণে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ না হওয়া পর্যন্ত রাজ্যের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে পূর্ণ কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সামনেই দুর্গাপুজো। বুধবার মহালয়া। তার ঠিক মুখেই দ্বিতীয় বারের জন্য পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু করল রাজ্যের ২৩টি মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারদের মিলিত মঞ্চ।

Advertisement

মহালয়ার দিন জুনিয়র ডাক্তারদের একটি পূর্বঘোষিত কর্মসূচি রয়েছে। কলেজ স্ক্যোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল। যেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের পাশাপাশি শহর ও শহরতলির সাধারণ নাগরিকদের পা মেলাতে দেখা যেতে পারে। যেমন দেখা গিয়েছিল আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের পূর্ব কর্মসূচিগুলিতে। মিছিল শেষে ধর্মতলায় একটি সভাও করার কথা রয়েছে তাঁদের। কিন্তু এর পরের দিনগুলিতে কোন পথে এগোবে প্রতিবাদ কর্মসূচি, তা নিয়ে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নেননি জুনিয়র ডাক্তারেরা। মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিক বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি অনিকেত মাহাতো বলেন, “২ অক্টোবর আমাদের মিছিল রয়েছে। এই পর্যন্ত কর্মসূচি স্থির রয়েছে। পুজোর দিনগুলিতে কী হবে বা কী হবে না, সে বিষয়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্‌স ফ্রন্টের তরফে কোনও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।”

প্রসঙ্গত, অগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাস ধরে জুনিয়র ডাক্তারদের একাধিক কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষকে শামিল হতে দেখা গিয়েছে। লালবাজার অভিযান হোক বা স্বাস্থ্য ভবন অভিযান— জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে রাত জেগেছেন সাধারণ মানুষও। নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। এমন অবস্থায় পুজোর দিনগুলিতে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিবাদ কর্মসূচি কী থাকবে— তা নিয়ে যেমন সাধারণ মানুষের একাংশের কৌতূহল রয়েছে, তেমনই রোগী পরিষেবা বিঘ্নিত হবে কি না, তা নিয়েও উদ্বেগে রয়েছে অপর একাংশ।

অতীতে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি চলাকালীন হাসপাতালে রোগী পরিষেবা সচল রাখতে একটি বড় ভূমিকা দেখা গিয়েছিল সিনিয়র ডাক্তারদের। তবে সরকারি হাসপাতালগুলিতে রোগীর চাপ যে পরিমাণ থাকে, তাতে পরিষেবা সচল রাখতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছিল সিনিয়র ডাক্তারদের। এ বারও কি সে রকম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে? যদিও জুনিয়র ডাক্তারদের অন্দরমহলে চর্চা, পুজোর সময় অনেক ডাক্তারই ছুটিতে থাকেন। তুলনায় রোগীর সংখ্যাও কম হয়। যে সব অস্ত্রোপচারের তাৎক্ষণিক প্রয়োজন নেই, সেগুলিও পুজোর সময় করা হয় না। রোগীর চাপ কম থাকার কারণে সমস্যা হবে না বলেই মনে করছে জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ। আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের সূত্রে খবর, পুজোর কারণে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসার কোনও সম্ভাবনা নেই। যদি কখনও জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন সময় বুঝে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টিও ভেবে দেখছেন তাঁরা।

মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকেই অনিকেত-কিঞ্জলেরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তাঁরা কাজে ফিরতে চান। তাঁরা জানিয়েছেন, এই ১০ দফা দাবি সঙ্গে সঙ্গে পূরণ করতে হবে না। কিন্তু দাবিগুলি পূরণের লক্ষ্যে সুস্পষ্ট সদর্থক পদক্ষেপ করা হলেই কাজে ফিরতে প্রস্তুত তাঁরা। সেই কথার রেশ টেনেই জুনিয়র ডাক্তারদের কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, পুজো পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে এটাই বা ধরে নেওয়া হচ্ছে কেন? সরকারকে তার আগেই সদর্থক ভূমিকা দেখাতে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন, এই যুক্তিটিও তুলে ধরছেন তাঁরা।

জুনিয়র ডাক্তারদের ফের পূর্ণ কর্মবিরতির সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছে শাসকদল। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ এই সিদ্ধান্তকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, কাদের পরামর্শ ও স্বার্থে এবং কোন উদ্দেশ্যে এই কর্মবিরতি করা হচ্ছে? জুনিয়র ডাক্তারদের এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করারও পরামর্শ দিয়ে কুণাল বলেন, “যখন সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত বলেছে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য, তখন এই সিদ্ধান্ত ভাবা যায় না। মুখ্যমন্ত্রী বার বার চেষ্টা করেছেন, আলোচনা করেছেন। পরিকাঠামো এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার সমস্ত কাজ চলছে। এক দিকে যখন উৎসবের মরশুম, অন্য দিকে বন্যা পরিস্থিতি— এমন সময়ে কাদের পরামর্শে কর্মবিরতি করা হচ্ছে? যে গরিব মানুষেরা সরকারি হাসপাতালে যান চিকিৎসার জন্য, তাঁদের হয়রানির মধ্যে ফেলা হচ্ছে এবং বাধ্য করা হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালে যেতে। সেখানে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড না থাকলে প্রচুর বিল।”

আরও পড়ুন
Advertisement