মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ‘ক্ষোভ’ বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের। আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান শুভেন্দু অধিকারীকে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
চাকরি বাতিল নিয়ে রাজ্য জুড়ে আলোড়নের আবহে এ বার নবান্ন অভিযানের ডাক দিল ‘বঞ্চিত’ চাকরিপ্রার্থীরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁদের সঙ্গেও বৈঠকে বসতে হবে, এই দাবি তুলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সরকারি চাকরিজীবীদের সংগঠন ‘সংগ্রামী যৌথমঞ্চ’ও, যারা বর্তমানে ডিএ আন্দোলনও করছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও এই অভিযানে শামিল হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তবে শুধু শুভেন্দু নন, যে কোনও ‘শুভবুদ্ধিসম্পন্ন’ মানুষকে আন্দোলনে শামিল হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা।
এসএসসি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রায় ২৬ হাজার জনের চাকরি বাতিল হয়েছে রাজ্যে। আগামী সোমবার সেই চাকরিহারাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। নেতাজি ইন্ডোরে সেই বৈঠক হওয়ার কথা। বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রী সদ্য চাকরিহারাদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারলে কেন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন না? পয়লা বৈশাখ, অর্থাৎ আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে বৈঠক না করলে তাঁরা আগামী ২১ এপ্রিল নবান্ন অভিযান করবেন।
২০০৯ সাল থেকে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা অভিযানের ডাক দিয়েছে। তাদের অন্তত ১২টি সংগঠন এর সঙ্গে যুক্ত। তার মধ্যে অন্যতম হল— ‘২০১৪ প্রাইমারি টেট পাশ ট্রেন্ড নট ইনক্লুডেড একতা মঞ্চ’, ‘মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন পাশ প্রার্থী মঞ্চ’, ‘ইন্টারভিউ বঞ্চিত আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীবৃন্দ’। তারা জানিয়েছে, ওই দিন দুপুর ১২টায় কলেজ স্ট্রিট এবং সাঁতরাগাছি দু’জায়গায় জমায়েত হবে। তার পর সেখান থেকে গন্তব্য নবান্ন।
আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত গ্রুপ ডি-র চাকরিপ্রার্থী আশিস খামরাই বলেন, ‘‘সরকারের সদিচ্ছার অভাবে এত লোকের চাকরি চলে গিয়েছে। আমাদের কষ্ট কোনও অংশে কম নয়। আর প্রতিশ্রুতি নয়। আমাদের সঙ্গে বসে সুষ্ঠু সমাধান করে দিন। পয়লা বৈশাখের মধ্যে আমাদের সঙ্গে নবান্ন সভাঘরে বসে বৈঠক করুন মুখ্যমন্ত্রী। আমাদের যন্ত্রণার কথা শুনুন। নয়তো বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।’’
২০০৯ সালে টেটে ‘বঞ্চিত’দের সংগঠনের সদস্য দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, ‘‘বামেদের দুর্নীতির সময় দিদি আমাদের ডাবল ডাবল চাকরি দেবেন বলেছিলেন। কিন্তু শুধু মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এখনও ওঁর উপর আস্থা রয়েছে। আমরা ভাতা চাই না। আমরা চাকরি চাই। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও আসুন। ওঁকে সব সময় দিদির সঙ্গে দেখা যায়।’’
একই কথা বলেন পশ্চিমবঙ্গ এনএসকিউএফ শিক্ষক পরিবারের সদস্য তথা চাকরিজীবী শুভদীপ ভৌমিকও। তিনি বলেন, ‘‘অযোগ্যদের জন্য আজ ২৬ হাজার চাকরি বাতিল হল। আমরা এই রাজ্যে শুধু ভোট দেব, আর চাকরির জন্য অন্য রাজ্যে যাব? এটা রাজনীতি করার সুযোগ নয়। ভোটের আগে সমস্যার সমাধান চাই। যুবশ্রী বা ভাতার টাকায় সংসার চলে না। জীবন যখন বিপন্ন, সবাই চলো নবান্ন।’’