SSC recruitment Case Verdict

পার্শ্ব-শিক্ষকদের নিয়ে নয়া ভাবনা, চাকরি-সঙ্কটে বিকল্প পরিকল্পনার খোঁজে রাজ্য

সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্যের শিক্ষা দফতর থেকে ফাইল পাঠানো হয়েছে অর্থ দফতরের কাছে। বিকাশ ভবনের তরফে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পার্শ্ব-শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর জন্য।

Advertisement
সন্দীপন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৫:১৮

— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, ‘‘আমি বেঁচে থাকতে কারও চাকরি যেতে দেব না!’’ নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকেও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, ‘যোগ্য’ প্রার্থীদের চাকরির বিষয়টি তাঁর সরকার দেখবে। কী ভাবে রাজ্য সরকার এই সঙ্কট সামলাবে, তার কোনও রূপরেখা এখনও স্পষ্ট হয়নি। তবে সরকারি একটি সূত্রের ইঙ্গিত, বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের একেবারে শীর্ষ স্তরের কয়েক জন সেই ভাবনার প্রক্রিয়ার শরিক। তবে অত্যন্ত ‘স্পর্শকাতার’ এই বিষয়ে কেউই কোথাও মুখ খুলছেন না। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশও তেমনই।

Advertisement

সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্যের শিক্ষা দফতর থেকে ফাইল পাঠানো হয়েছে অর্থ দফতরের কাছে। বিকাশ ভবনের তরফে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পার্শ্ব-শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর জন্য। তাঁরা এখন মাসে প্রায় ১৩ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। সেই বেতন তিন গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব আপাতত অর্থ দফতরের বিবেচনাধীন। সূত্রের ইঙ্গিত, আদালতের রায়ে চাকরিহারাদের মধ্যে থেকে কয়েক দফায় পার্শ্ব-শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা হতে পারে বেতন বাড়ানোর পরে। তাতে রাজ্যের কোষাগারে কিছু বাড়তি চাপ আসবে। চাকরিহারা স্কুল শিক্ষকদের বেতনের ক্ষেত্রেও পূর্ণ সমতা হয়তো থাকবে না। তবে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এমন গুরুতর সমস্যায় চাকরিচ্যুতদের বড় অংশের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হতে পারে।

তবে পদক্ষেপ চূড়ান্ত করার আগে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ব্যাখ্যা চেয়ে দায়ের হওয়া আবেদনের পরিণতি রাজ্য সরকার দেখে নিতে চাইবে বলেই সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত। পার্শ্ব-শিক্ষকদের নিয়ে ভাবনার আর্থিক দিক নিয়ে অর্থ ও শিক্ষা দফতরের মধ্যে প্রশাসনিক আলোচনা হয়েছে। যদিও অর্থসচিব প্রভাত কুমার মিশ্র বা শিক্ষাসচিব বিনোদ কুমার, কেউই এই নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। আবার চাকরিহারাদের বিকল্প নিয়োগের ব্যবস্থা করলে ফের কেউ মামলা করতে পারেন বলেও রাজ্য প্রশাসনের আশঙ্কা রয়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে আইন দফতরের কাছে বিশদে মতামত চাওয়া হয়েছে। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে মঙ্গলববারই মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের তত্ত্বাবধানে আইন বিষয়ক একটি কমিটি গড়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের ছয় মন্ত্রী মলয় ঘটক, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ব্রাত্য বসু, ফিরহাদ (ববি) হাকিম, অরূপ বিশ্বাস এবং শশী পাঁজাকে সেই কমিটিতে রাখা হয়েছে। সূত্রের খবর, চাকরিহারা শিক্ষকদের বিকল্প নিয়োগ সংক্রান্ত পরিকল্পনা খতিয়ে দেখার জন্য ওই কমিটির কাছে পাঠানো হতে পারে।

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরে কারা ‘যোগ্য’ এবং কারা ‘অযোগ্য’, সেই প্রশ্ন নিয়েই প্রবল বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা করতে গেলেও ‘যোগ্য’দের অগ্রাধিকার দিতে হবে। সেই বাছাই কী ভাবে হবে, সে প্রশ্নও থাকছে। বিরোধী-সহ সরকারের একাংশেরও মত, রাজ্য সরকার এই বিষয়ে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে ‘রিভিউ পিটিশন’ দায়ের করুক। তা হলে রাজ্যের ঘাড়ে অন্য দায় থাকবে না। পাশাপাশি, পার্শ্ব-শিক্ষকের চাকরিতে প্রভিডেন্ট ফান্ড বা গ্র্যাচুইটির সুবিধা নেই। কাজের মেয়াদ শেষে তাঁদের জন্য এককালীন কিছু টাকার বন্দোবস্ত আছে, সিভিক ভলান্টিয়ারের মতো। রাজ্য সরকার এ বার ‘সিভিক টিচার’ তৈরি করবে কি না, সেই বিতর্কও দানা বাঁধতে পারে। গোটা পরিস্থিতি বিবেচনা করেই মুখে কুলুপ এঁটে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে সরকারি স্তরে।

চাকরিহারাদের নিয়ে যে কোনও প্রশ্নেই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য এখন বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যথেষ্ট মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে পুরো বিষয়টা দেখছেন।’’ রাজ্য প্রশাসনের এক সূত্রের কথায়, ‘‘কিছু ভাবনা-চিন্তা আছে সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে। মুখ্যমন্ত্রী সব দিক দেখেই এগোতে চান।’’

আর এমতাবস্থায় বিরোধীদের তোলা নানা প্রশ্নে শাসক দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের মন্তব্য, ‘‘এখন মুখ্যমন্ত্রী যে চেষ্টা করছেন বিপন্নদের সুরক্ষা দেওয়ার, দয়া করে প্ররোচনা দিয়ে জট না বাড়িয়ে একটু অপেক্ষা করুন!’’

Advertisement
আরও পড়ুন