মুর্শিদাবাদ জেলার দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হল বৃহস্পতিবার। ছবি: সংগৃহীত।
বিক্ষিপ্ত অশান্তি আর যুযুদান রাজনৈতিক দলগুলির চাপানউতোরের মধ্যেই বৃহস্পতিবার জঙ্গিপুর ও সমশেরগঞ্জে ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হল। বিকেল ৫টা পর্যন্ত জঙ্গিপুরে ৭৬.১২ শতাংশ এবং শমসেরগঞ্জে ৭৮.৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে। আগামী রবিবার কলকাতার ভবানীপুরের সঙ্গেই মুর্শিদাবাদ জেলার এই দুই কেন্দ্র ভোট গণনা হবে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ভোট কেন্দ্রে ভিড় জমান ভোটাররা। মহিলাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। অশান্তি ঠেকাতে ছিল কড়া নিরাপত্তাও। বড় ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না হলেও অশান্তি পুরোপুরি এড়ানো যায়নি।
বৃহস্পতিবার ভোট শুরুর আগেই সামশেরগঞ্জে এক তৃণমূলকর্মীর বাড়ি লক্ষ্য করে বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় শমসেরগঞ্জ থানার পুলিশ। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কংগ্রেস। ভোটের দিন এলাকায় সকালে বাজার গরম করতেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে কংগ্রেস পক্ষ থেকে।
এই ঘটনায় অভিযুক্ত আনারুল হককে আটক করেছে পুলিশ। অভিযোগ আনারুল তৃণমূল পরিচালিত শমসেরগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ হলেও বর্তমানে কংগ্রেস প্রার্থী জইদুর রহমানের হয়ে ভোট করছিলেন। ফরাক্কার প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক, সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া মইনুল হক অভিযোগ করেন, সামশেরগঞ্জের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ২৭, ২৮ এবং ২৯ নম্বর বুথে উত্তেজনা সৃষ্টি করে কংগ্রেস।
ঘনশ্যামপুরের তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী জিয়াউর রহমান শমসেরগঞ্জ থানায় কংগ্রেসেরে বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করলেও তার বাবা আলি হোসেন সরাসরি আক্রমণের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তানি বলেন, ‘‘মিথ্যা অভিযোগ, অপপ্রচার করছে তৃণমূল। কংগ্রেস আমার বাড়িতে কোনও হামলা করেনি।’’ যদিও জিয়াউরের অভিযোগ, রাত ২ টোর সময় কংগ্রেস প্রার্থী জইদুর রহমানের নেতৃত্বে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ সদস্য আনারুল হক বিপ্লব তাঁর বাহিনী হামলা চালান। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আনারুলকে আটকও করে পুলিশ। একই অভিযোগ, শমসেরগঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী আমিরুল ইসলামেরও।
শমসেরগঞ্জ বিধানসভার অন্তর্গত ধূলিয়ান পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর তথা তৃণমূলের নেতা হাবিবুর রহমান ওরফে জোহরকে লাথি মারার অভিযোগ ওঠে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে শমসেরগঞ্জ বিধানসভার ১৭৪ এবং ১৭৫ নম্বর দখলের অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী জইদুর রহমান। ওই দুই কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের এজেন্টকে বার করে দিয়ে তৃণমূলকর্মীরা ভোটারদের প্রভাবিত করছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
শমসেরগঞ্জের দোগাছির বুথে ‘দুয়ারে সরকার’, ‘লক্ষীর ভান্ডার” সহ একাধিক সরকারি প্রকল্পের স্টিকার থাকায় নির্বাচনী বিধিভিঙ্গের অভিযোগ তোলে কংগ্রেস। লস্করপুর প্রাইমারি স্কুলে ১১৬ নম্বর বুথে দু’জন ভুয়ো ভোটারকে আটক করে পুলিশ। দু’জনেই নাবালক বলে জানা গিয়েছে।
জঙ্গিপুর বিধানসভাতে ভোটের দিন বুথ পরিদর্শন সেরে বাড়ি ঢোকার মুখে বিজেপি প্রার্থী সুজিত দাসের মুখোমুখি হন তৃণমূল প্রার্থী জাকির হোসেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে হয় সৌজন্য বিনিময়। বিজেপি-র প্রার্থী সুজিতকে দুপুরে দেখা গেল ফুরফুরে মেজাজে। জঙ্গিপুরে গঙ্গার ধারে নৌকায় বসে গান করতে।
তবে জঙ্গিপুর বিধানসভা কেন্দ্রে অন্তর্গত রঘুনাথগঞ্জে ৬৩, ৬৪ ও ৬৫ নম্বর বুথে তৃণমূলের পতাকা লাগিয়ে টোটোতে করে ভোটারদের নিয়ে আসা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল প্রার্থী তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জাকির হোসেন অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেন।
জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপি-র সভাপতি সুজিত দাস বলেন, ‘‘জঙ্গিপুর এবং শমসেরগঞ্জে বিজেপি জয়ী হবে। মানুষ তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন।’’ তৃণমূলের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, ‘‘ভোটের হার দেখেই মনে হচ্ছে, মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আস্থা রেখে ভোট দিয়েছেন।’’ মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাসের মন্তব্য ‘‘শমসেরগঞ্জে কংগ্রেসের উপর হামলা করা হয়েছে। ছাপ্পা ভোট হয়েছে। তবে কংগ্রেস প্রার্থী জিতবেন।’’ জঙ্গিপুর বিধানসভা কেন্দ্রে বামফ্রন্টের প্রার্থী জানে আলম মিঞা জানান, শাসকদল সন্ত্রাস করলেও জয়ী হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী তিনি।