(বাঁ দিকে) রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। যাদবপুরের প্রাক্তন উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত (ডান দিকে) — ফাইল চিত্র।
রাজ্যপালের অনুমতি ছাড়া ‘বেআইনি’ ভাবে সমাবর্তন অনুষ্ঠান হয়েছে যাদবপুরে। এমনকি, সমাবর্তন অনুষ্ঠানের জন্য অর্থও খরচ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে। তাই এ বার সেই টাকা নিজের ‘পকেট’ থেকে ফেরত দিতে হবে উপাচার্যকে। শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্যপ্রাক্তন উপাচার্য ভাস্কর গুপ্তকে কড়া বার্তা দিয়ে এমনটাই জানাল রাজভবন।
শনিবার যাদবপুরের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ভাস্করকে ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে রাজভবন। তাতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে টাকা নিয়ে ‘বেআইনি’ ভাবে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ফেরত দিতে হবে ভাস্করকে। সমাবর্তনের জন্য যত টাকা খরচ হয়েছে, অবিলম্বে তা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করতে হবে। অন্যথায় তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবে রাজভবন।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের জন্য আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। সমাবর্তন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় আইনও মানা হয়নি বলে অভিযোগ রাজভবনের। ১৯৮১ সালের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, প্রতি বছর ২৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য প্রথমেই আচার্যের অনুমতি প্রয়োজন। তার পর অনুষ্ঠানের অন্তত ১৫ দিন আগে এগ্জ়িকিউটিভ কাউন্সিল (ইসি)-কে বিষয়টি জানাতে হয়। এ বিষয়ে ইসি বৈঠকের পরেই নেওয়া হয় পরবর্তী সিদ্ধান্ত।
ভাস্করের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০২৪-এর ডিসেম্বরে রাজ্যপালের সবুজসঙ্কেত ছাড়াই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। অনুষ্ঠানের মাত্র সাত দিন আগে তড়িঘড়ি ইসি বৈঠক ডেকে দায় সেরেছেন বলেও অভিযোগ। আর গোটা অনুষ্ঠানের খরচও গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে। এর পরেই প্রাক্তন উপাচার্যকে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে তহবিলের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে রাজভবন।
যদিও এ বিষয়ে যাদবপুরের প্রাক্তন উপাচার্য ভাস্কর শনিবার রাতে বলেন, ‘‘এই ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ রূপে অসত্য। এই নিয়ে আচার্য আমাকে দ্বিতীয় বার চিঠি দিলেন। সমাবর্তনের পরে এক বার চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কিছু ক্ষণ আগেই আর একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। আমি এই অভিযোগের ভিত্তিতে মন্তব্য করে কাদা ছোড়াছুড়ি করতে চাই না। আমারও আত্মমর্যাদা বোধ রয়েছে।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন জুটার সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়ও বলছেন, ‘‘ছাত্রদের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনেই সমাবর্তন হয়েছে। সমাবর্তনের নির্ধারিত বাজেট থেকেই টাকা খরচ করা হয়েছে। সেই বাজেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স কমিটি এবং এগ্জ়িকিউটিভ কাউন্সিলে পাশ হয়েছিল। তাই এখানে কোনও বেআইনি কাজ হয়নি।’’ প্রসঙ্গত, শুক্রবারই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ভাস্করকে। আগামী ৩১ মার্চ অধ্যাপক হিসাবে তাঁর চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। অথচ তার চার দিন আগে ২৭ মার্চ রাজভবন থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়, যাদবপুরের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য পদে আর থাকছেন না ভাস্কর। ভাস্করের অপসারণের ফলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আপাতত উপাচার্যহীন।
উল্লেখ্য, শুধু গত বছরই নয়, বরং ২০২৩ সালেও যাদবপুরের সমাবর্তন ঘিরে চূড়ান্ত বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। রাজ্যপাল সমাবর্তন করতে বারণ করলেও সেই আপত্তি অগ্রাহ্য করে রাজ্য সরকারের অনুমতি নিয়ে সমাবর্তনের আয়োজন করেছিলেন তৎকালীন অন্তর্বর্তী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ। সেই আবহে সমাবর্তনের ঠিক আগের রাতে তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেন রাজ্যপাল। অথচ, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য একক ভাবে এ ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তার পরেই ২৪ ডিসেম্বর সমাবর্তন করানোর জন্য রাজ্য সরকারের তরফে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয় বুদ্ধদেবকে। শেষমেশ রাজ্য সরকারের অনুমতিকে গুরুত্ব দিয়ে ডামাডোলের মধ্যেই সমাবর্তন অনুষ্ঠান করেন বুদ্ধদেব। পরের বছর একই পথে হেঁটে সমাবর্তন করিয়েছিলেন ভাস্কর। এ বার সেই ভাস্করকেই কড়া বার্তা দিল রাজভবন।