Abdul Karim Chowdhury

এক ফোনে মান-অভিমান মিটে গেল! মমতার সভায় পাশেই করিম, সক্রিয় হবেন লোকসভার ভোট-মঞ্চেও

জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের মধ্যে অনেকেরই প্রশ্ন, কোন জাদুবলে মান অভিমান ভেঙে আবারও বিদ্রোহী আব্দুল করিম চৌধুরীকে মূলস্রোতে ফেরালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:৫৯
Islampur TMC MLA Abdul Karim Chowdhury attended Chief Minister Mamata Banerjee’s meeting

মঙ্গলবার রায়গঞ্জের সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে আব্দুল করিম চৌধুরী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।

দীর্ঘদিন পর সরকারি অনুষ্ঠানে দেখা গেল তৃণমূলের বিদ্রোহী বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরীকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে চেয়ারেই। মঙ্গলবার রায়গঞ্জের সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রবীণ বিধায়ককে হাজির হতে দেখে জেলা তৃণমূলের নেতারা অনেকে বিশ্বাসই করে উঠতে পারেননি যে এমন একরোখা জেদি মানুষ কোন জাদুবলে মমতার অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন।

Advertisement

তবে সভা যত এগিয়েছে ততই অবাক হয়েছেন উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের নেতারা। কারণ সভাস্থলে করিমকে আসতে দেখেই নিজের পাশে‌র চেয়ারে বসান মুখ্যমন্ত্রী। বেশ কিছুক্ষণ কথাও বলতে দেখা যায় তাঁদের। আবার মমতা যখন বক্তৃতা করতে ওঠেন তখনও প্রথমে নাম করেন ইসলামপুরের বর্ষীয়ান বিধায়কের। অনুষ্ঠান শেষে যখন মুখ্যমন্ত্রী রওনা দিলেন বালুরঘাটের উদ্দেশে তখন খোশমেজাজে জেলার নেতা-বিধায়ক-মন্ত্রীদের সঙ্গে হাসিমুখে আলাপচারিতা করে ইসলামপুরের উদ্দেশে তিনিও রওনা হন।

তবে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের মধ্যে সকলেরই প্রশ্ন, কোন জাদুবলে মান অভিমান ভেঙে আবারও করিমকে মূলস্রোতে ফেরালেন মমতা? আনন্দবাজার অনলাইনকে বিধায়ক পুত্র মেহতাব চৌধুরী বলেন, ‘‘রবিবার বিকেলে হাসিমারা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী বাবাকে ফোন করেছিলেন। দীর্ঘ ক্ষণ তাঁদের মধ্যে কথা হয়েছে। কী কথা হয়েছে তা বাবা আমাদের বলেননি, তবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পরেই নিজের অনুগামীদের নির্দেশ দেন সভাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ফোন পাওয়ার পর বাবাকে আবারও পুরনো মেজাজে দেখতে পেলাম। তিনি আমাদের বলেছেন লোকসভা ভোটে দলের হয়ে খাটবেন। আর বিধানসভার বাজেট অধিবেশনেও যোগদান করবেন।’’

প্রসঙ্গত, গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের আগে উত্তর দিনাজপুর জেলায় তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বে মারা যান কয়েকজন তৃণমূল কর্মী। করিমের অভিযোগ ছিল জেলা তৃণমূলের সভাপতি কানহইয়ালাল আগরওয়ালের বিরুদ্ধে। সে কথা তিনি মুখ্যমন্ত্রীকেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও ফল না পেয়ে মান-অভিমানের পালা শুরু হয়। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের নবজোয়ার যাত্রা নিয়ে উত্তর দিনাজপুর এলে বাড়িতে লাল কার্পেট বিছিয়ে তাঁর আগমনের অপেক্ষায় বসেছিলেন এই বর্ষীয়ান বিধায়ক। কিন্তু অভিষেক আসেননি। এমন ঘটনার জেরে তাঁর অভিমান বেড়ে যায় কয়েকগুণ। পঞ্চায়েত ভোটে জেলা নেতৃত্ব তাঁর অনুগামীদের টিকিট না দিলে, দলের বিরুদ্ধে গিয়ে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিলেন করিম। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন জিতেওছিলেন।

এর পরেই কার্যত জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দলের যাবতীয় কর্মসূচি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন করিম। সঙ্গে জানিয়ে দেন, তিনি সরকারি কোনও অনুষ্ঠানে আর যোগদান করবেন না। এমনকি, বিধানসভার অধিবেশনেও হাজির হবেন না। এরপর দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে একের পর এক দলের নেতার প্রকাশ্যেই সমালোচনা শুরু করেন ইসলামপুরের এই প্রবীণ বিধায়ক। সেখানে অভিষেক ও কুণাল ঘোষকে আক্রমণ করে তিনি বলেছিলেন, ‘‘কুণাল ঘোষকে মুখপাত্র হিসাবে অনেক কথা বলতে দেখেছি। আমাদের মমতাদির উচিত ছিল সঙ্গে সঙ্গে ওকে বহিষ্কার করা, সরিয়ে দেওয়া।’’ কুণালকে ‘ননসেন্স’ বলে উল্লেখ করে প্রবীণ বিধায়ক করিম আরও বলেছিলেন, ‘‘প্রবীণদের ছাড়া বাংলা কেন, কোনও রাজ্য, দেশও চলবে না। বাঁদরের হাতে নারকেল দেওয়ার মতো। চালাতে পারবে কি এরা? যে সেনাপতি হয়েছে না, আমি আগেই বলেছিলাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যে, বাচ্চা আছে, নাবালক আছে। আপনি সঙ্গে রাখুন। কিন্তু পুরো ক্ষমতা কখনও দেবেন না। এ বাচ্চা আছে। নাদান, বাচ্চা, নাবালক।’’

দলীয় নেতৃত্বের প্রতি তাঁর এ হেন ক্ষুরধার আক্রমণের পর দলীয় নেতৃত্বের একাংশের ধারণা ছিল, আর কোনও ভাবেই করিমকে দলের মূলস্রোতে ফেরানো সম্ভব নয়। কিন্তু রবিবার ফোন করে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে কথা বলতেই সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে। আর সোমবার সভায় দলনেত্রীর ব্যবহারে মুগ্ধ করিম ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়ে দিয়েছেন, মমতার জন্যই লোকসভা ভোটে আমাকে দলের হয়ে কাজ করতে হবে। প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বর্তমানে প্রবীণতম সদস্য হলেন করিম।

আরও পড়ুন
Advertisement