BJP on Sandeshkhali

সন্দেশখালি নিয়ে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের ধাঁচে আন্দোলন ছড়াতে চায় বিজেপি, দল পাঠাচ্ছেন নড্ডা

সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলন বাংলার রাজনৈতিক পটভূমিতে অন্যতম দু’টি গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় আন্দোলন। সন্দেশখালি নিয়ে আন্দোলনকে দলীয় নেতৃত্ব সেই দুই আন্দোলনের চেহারাই দিতে চাইছেন বলে বিজেপি সূত্রে খবর।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:১০
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা।

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। —ফাইল চিত্র ।

বুধবার সকাল থেকেই সন্দেশখালি নিয়ে নতুন করে উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি। ক্রমে তা আলোড়িত করেছে জাতীয় রাজনীতিকেও। সন্দেশখালির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে শুক্রবার রাজ্যে একটি সংসদীয় দল পাঠাচ্ছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। সেখানে থাকছেন বিজেপির ছয় সাংসদ। যাঁদের মধ্যে পাঁচ জনই মহিলা। বৃহস্পতিবার রাতেই বিজেপির প্রতিনিধিদল রাজ্যে আসছে। শুক্রবার সকালে তাঁরা সন্দেশখালির উদ্দেশে রওনা দেবেন। সঙ্গে থাকবেন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। সন্দেশখালির স্থানীয় মহিলাদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলবেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর।

Advertisement

বস্তুত, সন্দেশখালিকে বিজেপি ক্রমশ সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের আন্দোলনের লাইনে নিয়ে যেতে চাইছে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলন বাংলার রাজনৈতিক পটভূমিতে অন্যতম দু’টি গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় আন্দোলন। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম নিয়ে তৎকালীন বিরোধীদের (মূলত তৃণমূল) প্রতিবাদ পশ্চিমবঙ্গে বামদুর্গের ভিত নড়িয়ে দিয়েছিল। গদিচ্যুত হয়েছিল বামেরা। তখন বঙ্গে বিজেপির তেমন প্রাধান্য না থাকলেও সেই ঘটনাকেই ‘মডেল’ হিসাবে দেখছে বিজেপি। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের সময় বিরোধী দল ছিল তৃণমূল। সন্দেশখালির সময়ে বিজেপি। গত দু’দিন ধরে বার বার সন্দেশখালি প্রবেশের ‘ব্যর্থ চেষ্টা’ করেছেন বিজেপি নেতারা। বার বার পুলিশি বাধার মুখে পড়েছেন। রাস্তায় ধর্নায় বসেছেন। তবু হাল ছাড়ছেন না। যেমনটা সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় করেছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের অন্যান্য নেতা।

দিল্লি থেকেও সন্দেশখালি নিয়ে আগে সরব হয়েছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সন্দেশখালিকাণ্ডে মুখ খুলেছিলেন কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। তৃণমূল সরকারের দিকে তোপ দেগেছিলেন তিনি। যা নিয়ে তাঁকে পাল্টা আক্রমণ করেছিলেন অধুনা বহিষ্কৃত তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। এ বার সরাসরি খোদ নড্ডার তৈরি সংসদীয় প্রতিনিধিদল সন্দেশখালি পরিদর্শনে আসছে। যা থেকে স্পষ্ট যে, লোকসভা ভোটের আগে সন্দেশখালি নিয়ে আটঘাট বেঁধে মাঠে নামতে চাইছে বিজেপি।

যদিও সন্দেশখালি নিয়ে বিজেপির জঙ্গি আন্দোলনকে বিশেষ আমল দিতে রাজি নয় রাজ্যের শাসক শিবির। সন্দেশখালিতে তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে তোলা বিজেপির অভিযোগ ‘বঙ্গবিরোধী প্রচার’ বলেও দাবি তৃণমূলের। তবে সন্দেশখালিকে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের লাইনে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টাকে ‘মারাত্মক’ আখ্যা দিয়েছেন শাসকদলের রাজ্য সম্পাদক তথা অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। বিজেপির বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের সঙ্গে একটি অডিয়ো ক্লিপিং (তবে তার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন) উল্লেখ করে কুণাল ওই কথা বলেছেন। যেখানে অগ্নিমিত্রার মতো কণ্ঠস্বরে এক মহিলা বলছেন, তাঁরা নিশ্চিত ভাবেই সন্দেশখালির আন্দোলনকে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের আন্দোলনের মতো করে তুলতে চাইবেন বা চাইছেন।

বস্তুত, এতে অন্যায়েরও কিছু দেখছে না বিজেপি। তাদের বক্তব্য, বিরোধীদলের কর্তব্যই হল আন্দোলন করা। তাদের পাল্টা প্রশ্ন, মমতা যখন সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের আন্দোলন করেছিলেন, তখন কি তৃণমূলের মুখপাত্র বা কোনও নেতা ‘মারাত্মক’ বলে শিউরে উঠেছিলেন?

সন্দেশখালির সাম্প্রতিক ঘটনায় অবশ্য অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের সুর চড়াতে শুরু করেছে শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই। তবে সন্দেশখালি নিয়ে বিজেপি ‘অতি সক্রিয়’। গত দু’দিন ধরে রাজ্য বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং বিধায়কদের বার বার সন্দেশখালিতে প্রবেশের চেষ্টা, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ এবং জঙ্গি আন্দোলন দেখে তেমনই মনে করা হচ্ছে। নড্ডার তৈরি দলের সফরের মাধ্যমে জাতীয় স্তরেও সন্দেশখালির বিষয়টি ছড়িয়ে দিতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব। নির্দিষ্ট একটি পরিধিতে বেঁধে না-রেখে প্রশাসনের সঙ্গে সংঘাতে গিয়ে সন্দেশখালির আন্দোলনকে ‘জঙ্গি’ আন্দোলনে পরিণত করতে চাইছে বিজেপি। যা বোঝা গিয়েছে বুধবার সন্দেশখালি অভিযানে গিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার পুলিশের গাড়ির বনেটের উপর উঠে পড়েছিলেন!

‘হামলা ও নিগ্রহে’র কারণে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার আগে সুকান্ত মজুমদার বৃহস্পতিবার প্রত্যেকটি জেলার পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে দুপুর দু’টো থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেই কর্মসূচি শুরু করেছেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। সেই আন্দোলনও ‘জঙ্গি’ আন্দোলনের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বর্ধমানে বিক্ষোভকারীদের উপর জলকামান ছুড়েছে পুলিশ। অন্যত্রও বিক্ষোভ হয়েছে। যা থেকে এটা স্পষ্ট যে, সন্দেশখালির আন্দোলনকে পরিকল্পিত ভাবে সারা রাজ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে প্রধান বিরোধীদল। সেই সূত্রেই আসছে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের লাইনে আন্দোলনকে নিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ।

(ভ্রম সংশোধন: এই খবরটি প্রথমে লেখার সময় ভ্রমবশত লেখা হয়েছিল, জেপি নড্ডা নিজেও সন্দেশখালি সফরে আসছেন। সেটি ঠিক নয়। নড্ডার নিযুক্ত একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদল আসছে। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী)

আরও পড়ুন
Advertisement