Howrah Municipal Corporation

পার্কিং নিয়ে সিন্ডিকেটের কোপে হাওড়া পুরসভা

হাওড়া শহরে যত্রতত্র বেআইনি পার্কিং রুখতে ও পুরসভার রাজস্ব বাড়াতে জানুয়ারিতে হাওড়া সিটি পুলিশের সঙ্গে যৌথ অভিযান চলে।

Advertisement
দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:৩২
হাওড়া পৌর নিগম।

হাওড়া পৌর নিগম। —ফাইল চিত্র।

হাওড়া শহর জুড়ে চলা অবৈধ পার্কিং বৈধ করতে গিয়ে এ বার সিন্ডিকেটের কোপে খোদ হাওড়া পুরসভা।

Advertisement

শহরের যত্রতত্র বাইক ও গাড়ির পার্কিং বন্ধ করতে সম্প্রতি হাওড়া পুরসভা ও পুলিশ ৩৫টি জায়গাকে চিহ্নিত করে দরপত্র ডেকেছিল। কিন্তু চূড়ান্ত সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও দেখা যায়, দরপত্রে অর্ধেকেরও কম জায়গায় বেসরকারি পার্কিং সংস্থাগুলি অংশ নিয়েছে। অথচ ওই সব চিহ্নিত জায়গাতেই অবাধে চলছে পার্কিং। ইচ্ছে মতো টাকা নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ, সব জেনেও চুপ পুলিশ। পুরসভার দাবি, হাওড়া সিটি পুলিশের কাছে পাঠানো ৩৫টি পার্কিং-এর জায়গার তালিকা দেওয়ার পরেও এই ঘটনায় প্রমাণ হয়, পুলিশ বা পুরসভা কাউকে তোয়াক্কা না করেই শহর জুড়ে পার্কিং-এর সিন্ডিকেট চলছে।

হাওড়া শহরে যত্রতত্র বেআইনি পার্কিং রুখতে ও পুরসভার রাজস্ব বাড়াতে জানুয়ারিতে হাওড়া সিটি পুলিশের সঙ্গে যৌথ অভিযান চলে। তাতে ৩৫টি পার্কিং-এর জায়গা চিহ্নিত হয়। পুরসভা জানিয়েছে, হাওড়া সিটি পুলিশ নিয়মাফিক ৩৩টি জায়গার ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ দেয়। কিন্তু নবান্ন সংলগ্ন দু’টি জায়গায় কলকাতা পুলিশ প্রথমে ‘এনওসি’ দেয়নি। এখন তা দিয়েছে। ফলে নতুন করে ওই দু’টির জন্যে দরপত্র ডাকতে হবে।

বাকি ৩৩টি জায়গায় বেসরকারি সংস্থা থেকে পার্কিং লটের দরপত্র ডাকা হয়। কিন্তু চূড়ান্ত সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরে দেখা যায়, হাওড়া সদরের চারটি বিধানসভা এলাকা অর্থাৎ, দক্ষিণ হাওড়া, মধ্য হাওড়া, শিবপুর ও উত্তর হাওড়া থেকে মাত্র ১৪টি সংস্থা দরপত্রে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে শিবপুর ও দক্ষিণ হাওড়ায় চিহ্নিত পার্কিং জ়োনে প্রায় কোনও সংস্থাই অংশ নেয়নি। এর থেকেই পুরকর্তাদের ধারণা, বেআইনি পার্কিং-এর সিন্ডিকেট রমরমা বজায় রাখতে অসাধু চক্র ইচ্ছাকৃত ভাবেই স্বচ্ছ দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চাইছে না বা ইচ্ছুকদের আটকে দিচ্ছে।

হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শহরে পার্কিং এলাকা ঠিক করতে ট্র্যাফিক পুলিশের পদস্থ কর্তাদের মত নিয়ে পার্কিং-এর জায়গা চিহ্নিত করা হয়। তার পরেই দরপত্র ডাকা হয়েছিল। কিন্তু এখনও ১৪টি সংস্থা তাতে অংশ নিয়েছে এবং তারা দায়িত্ব পেয়েছে।’’ সুজয় জানান, দেখা গিয়েছে, ওই জায়গাগুলি থেকে পার্কিং ফি নিলে বছরে হাওড়া পুরসভা ৯৫ লক্ষ টাকা পাবে। অর্থাৎ, বাকি আরও ২১টি জায়গার জন্য বেসরকারি পার্কিং সংস্থা দরপত্রে অংশ নিলে এই আয় দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারত বলে অনুমান।

তবে বেআইনি পার্কিং গজিয়ে ওঠার অন্যতম কারণ যে পুলিশি নজরদারির অভাব, তা মানছেন পুরকর্তা-সহ জনসাধারণের বড় অংশ। দাবি, কয়েক মাস আগেও বেলেপোল থেকে ইছাপুর পর্যন্ত শৈলেন মান্না সরণির পাশের সরকারি ফাঁকা জমিতে গাড়ি বেআইনি ভাবে রাখা হত। রাস্তার নতুন নামকরণ ও সৌন্দর্যায়ন শুরু হতেই বেআইনি পার্কিং বন্ধ হয়।

অন্য দিকে, গত নভেম্বরে কাজিপাড়া ক্রসিং ও ফোরশোর রোড সংযোগকারী জগৎ ব্যানার্জি ঘাট রোডে ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু হয়। হাওড়া সিটি পুলিশের তরফে দু’টি লেনে পর পর বসানো হয় ‘নো পার্কিং’-এর সাইনবোর্ড। গত চার মাসে একে একে উধাও সেই সব। বাড়ছে গাড়ি ও বাইক পার্কিংও। সরকারি অনুমতি ছাড়াই ২০-১০০ টাকা পর্যন্ত পার্কিং ফি নেওয়া হচ্ছে।

হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘শহরে বেআইনি পার্কিং রুখতে নজরদারি চলছে। জনবহুল ও ঘিঞ্জি রাস্তায় বেআইনি পার্কিং থাকবে না, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে।’’

Advertisement
আরও পড়ুন