Man Beaten To Death in Pandua

‘কী জবাব দেব সন্তানকে?’ পান্ডুয়ায় গণপিটুনিতে মৃত যুবকের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী চান দোষীদের কঠিন শাস্তি

এলাকায় মনসা পুজো উপলক্ষে লাউডস্পিকার বাজছিল জোরে। সেই সময় রাস্তা পার হতে গিয়ে কয়েক জনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় ২৬ বছরের আশিস বাউলদাসের। তাঁকে বাইক থেকে রাস্তায় ফেলে মারধর করেন কয়েক জন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪ ১৮:৪০
Hooghly beaten to death case

গণপিটুনিতে মৃত যুবকের স্ত্রী অপর্ণা দেবী। —নিজস্ব চিত্র।

চোখের তলায় কালি। পরনে আটপৌরে শাড়ি। কেঁদেই চলেছেন বধূ। অনাগত সন্তানের জন্য তাঁকে শরীরের খেয়াল নিতে বলছেন আত্মীয়েরা। কিন্তু ছ’মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলাপ করে চলেছেন, ‘‘আমার জীবনটা শুরুর আগে শেষ করে দিল ওরা! কী জবাব দেব আমার সন্তানকে?’’ পর ক্ষণেই নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে তিনি বলছেন, ‘‘আমি চাই, দোষীদের কঠিন শাস্তি। কঠিন থেকে কঠিন শাস্তি... কী দোষ করেছিল ও? চুরি করেছিল? নেশা করে গাড়ি চালাচ্ছিল? কিচ্ছু করেনি। শুধু শুধু এক জনকে এ ভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলা যায়?’’

Advertisement

গত বৃহস্পতিবার হুগলির পান্ডুয়ার দ্বারবাসিনী এলাকার বাসিন্দা আশিস বাউলদাস বাইক নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এলাকায় মনসা পুজো উপলক্ষে লাউডস্পিকার বাজছিল জোরে। সেই সময় রাস্তা পার হতে গিয়ে কয়েক জনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় ২৬ বছরের ওই যুবকের। অভিযোগ, তাঁকে বাইক থেকে রাস্তায় ফেলে বেদম প্রহার করেন কয়েক জন। বুকে লাথি মারা হয়। কোনও রকমে আশিসকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন বন্ধুরা। তাঁরাও মার খান। অন্য দিকে, সে দিন রাত থেকে রক্তবমি শুরু হয়েছিল যুবকের। প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে পরে কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসার সময় মৃত্যু হয় আশিসের। গণপিটুনির ওই ঘটনায় ইতিমধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তদন্ত চলছে।

দ্বারবাসিনীরই গরুইগেঁড়ে গ্রামের ওই মৃতের স্ত্রী অপর্ণা বাউলদাস অন্তঃসত্ত্বা। তিনি ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বামী নেশা করে বাইক চালাচ্ছিল না। কোনও ভুল কাজ করেনি। শুধু একটা ঘটনার প্রতিবাদ করায় ওকে মেরে ফেলল! আমি চাই, ওদের শাস্তি হোক।’’ শাড়ির আঁচলে মুখ ঢেকে বলেন, ‘‘এ অবস্থায় আমার দায়িত্ব কে নেবে? ওরা নেবে আমার দায়িত্ব?’’

আশিসের দাদু নেপাল বাউলদাস বলেন, ‘‘বার বার গ্রামে মাইক (লাউডস্পিকার) বাজানো নিয়ে অশান্তি দেখা যায়। যে প্রতিবাদ করবে, তাকেই এ ভাবে মেরে ফেলা হবে? অভিযুক্তদের যেন ছাড়া না হয়। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় ওদের।’’ তিনি জানান, নাতিকে ওই ভাবে মারধর করার পর দিন তিনি এবং ছেলে এ নিয়ে গ্রামে বলতে গিয়েছিলেন। কিন্তু, তাঁদের উপরও চড়াও হন কয়েক জন।

শুক্রবার থেকে চিকিৎসা শুরু হয়েছিল আশিসের। প্রথমে পান্ডুয়া পরে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় কল্যাণীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু শারীরিক পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করে পরিবার। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় আশিসের। এই ঘটনা নিয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সরকার বলেন, ‘‘ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পান্ডুয়া থানার পুলিশ। তদন্ত চলছে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement