Ganga Pollution

হাওড়ায় বর্জ্যের রাহুগ্রাসে ‘নীলকণ্ঠ’ হয়েই বইছে গঙ্গা

দূষণমুক্তি দূর, গঙ্গাকে নোংরা করার যেন প্রতিযোগিতা চলছে হাওড়ায়। মুক্তি কী ভাবে, নেই উত্তর।

Advertisement
দেবাশিস দাশ
হাওড়া শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:৫২
An image of Ganges

দূষণ: ভেঙেছে আবর্জনা আটকানো লকগেট। গঙ্গায় অবাধে মিশছে আবর্জনা যুক্ত জল। হাওড়ার গোলবাড়ি ফেরি ঘাটের কাছে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

এ যেন স্রোতস্বিনী গঙ্গাকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিষ পান করানোর উদ্যোগ! কোথাও গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের ভাঙাচোরা লকগেট দিয়ে গোটা শহরের নর্দমার জল ও আবর্জনা সরাসরি মিশছে গঙ্গায়। কোথাও রেলের ধোপাখানা থেকে বিষাক্ত ক্ষারমিশ্রিত জল গঙ্গায় গিয়ে পড়ছে নালা বেয়ে। কোথাও আবার রুজি-রুটির টানে গঙ্গার ধারের সোনার দোকানের সামনের নর্দমা থেকে তুলে আনা পাঁকে মারাত্মক ক্ষতিকর নাইট্রিক অ্যাসিড মিশিয়ে চলছে সোনা-রুপোর গুঁড়ো বার করার চেষ্টা। সেই অ্যাসিডও অবাধে গিয়ে মিশছে গঙ্গার জলে।

Advertisement

গঙ্গা দূষণের এই সমস্ত ভয়াবহ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে হাওড়ার দিকে, গঙ্গার ধার বরাবর বিভিন্ন জায়গায়। সম্প্রতি হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন গঙ্গার তীরবর্তী কয়েকটি ভাতের হোটেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তারা মানুষের ব্যবহারের পক্ষে অনুপযোগী গঙ্গার দূষিত জল পরিস্রুত না করেই মানুষকে খাওয়াচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, ওই সমস্ত হোটেলও গঙ্গায় নিয়মিত নোংরা জল ও আবর্জনা ফেলে বলে অভিযোগ। ফলে, সরকারি উদাসীনতায় গঙ্গা কী ভাবে দিনদিন আরও বিষিয়ে যাচ্ছে, হাওড়া শহরে এক দিন ঘুরলেই বোঝা যাবে তা।

কেমন সেই চিত্র?

হাওড়ায় গোলাবাড়ি থানার উল্টো দিকেই রয়েছে গোলাবাড়ি লঞ্চ ঘাট। সেই ঘাটের পাশেই রয়েছে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের অংশ হিসাবে তৈরি হওয়া দু’টি নিকাশি হাইড্র্যান্টের লকগেট। ওই দু’টি দৈত্যাকার পাইপলাইন দিয়ে উত্তর হাওড়া ও বালির একাংশের নিকাশি জলের কোনও ‘সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ হয়ে গঙ্গায় পড়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই প্লান্ট আজ পর্যন্ত তৈরি হয়নি। শুধু তা-ই নয়, নিকাশি নালার মাধ্যমে বয়ে আসা বর্জ্য আটকাতে ওই দু’টি পাইপের মুখে যে দু’টি লকগেট তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলি যে কবে থেকে ভেঙে পড়ে আছে, তা-ও আর মনে নেই স্থানীয় বাসিন্দাদের। ওই ঘাটে গিয়ে দেখা গেল, সেই ভাঙা, অকেজো পাইপলাইন দিয়ে কালো, বিষাক্ত পাঁকজল এবং আর্বজনা গঙ্গায় গিয়ে পড়ছে অবিরাম। সেই বর্জ্য মেশায় গঙ্গার জলের রংটাই পাল্টে গিয়েছে ওই এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দা অমরেশ ত্রিপাঠী বললেন, ‘‘এই লকগেট ঠিক কবে থেকে ভেঙে পড়ে আছে, তা আর মনে নেই। আমরা হাওড়া পুরসভাকে বার বার বলেছি, এ ভাবে গঙ্গাকে দূষিত করবেন না। কিন্তু কে কার কথা শোনে?’’

হাওড়া পুরসভা সূত্রের খবর, উত্তর হাওড়ার ওই নিকাশি বর্জ্যের সরাসরি গঙ্গায় পড়ার কথাই নয়। কারণ, ওই বর্জ্য জে এন মুখার্জি রোডের পাম্প হাউস থেকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল কোনা সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টে। সেখান থেকে বেলগাছিয়া ভাগাড়ের অক্সিডেন্ট পন্ড হয়ে পচাখালে মিশে গঙ্গায় পড়ার কথা ওই বর্জ্যের। কিন্তু জে এন মুখার্জি রোডের পাম্প খারাপ হয়ে পড়ে থাকায় তা হচ্ছে না। পুরসভার ‌নিকাশি বিভাগের এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘ওই পাম্প সারানোর কাজ চলছে। শীঘ্রই ঠিক হয়ে যাবে।’’

তবে, গোলাবাড়ি ঘাটের লকগেট অকেজো হয়ে পড়ে থাকার ঘটনায় হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী দায় চাপিয়েছেন গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের কর্মকর্তাদের ঘাড়ে। তিনি বলেন, ‘‘ওই লকগেট মেরামত করার দায়িত্ব গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান কর্তৃপক্ষের। পুরসভা শুধু দেখে, লকগেট ঠিক সময়ে খোলা ও বন্ধ করা হচ্ছে কি না। তবে, লকগেট কেন কাজ করছে না, তা খতিয়ে দেখা হবে।’’ অন্য দিকে, গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের হাওড়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত এগ্‌জিকিউটিভইঞ্জিনিয়ার অনিরুদ্ধ মণ্ডল বললেন, ‘‘ওই ঘাটের লকগেটের দায়িত্ব আমরা সম্প্রতি নিয়েছি। সেটির রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের এজেন্সি করছে। ভেঙে গিয়েছে বলে তো জানি না। খোঁজ নেব।’’

(চলবে)

আরও পড়ুন
Advertisement