অভিযোগ তৃণমূল কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে
Uluberia TMC

‘কাটমানি’ না-দেওয়ায় প্রধানের বাড়িতে হামলা

হামলাকারীদের কারও নাম বলতে চাননি প্রধান বা তাঁর স্বামী। সোমবার বিকেল পর্যন্ত থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়নি।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৫৮
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

রাস্তার কাজে ‘কাটমানি’ না-পাওয়ায় উলুবেড়িয়া ২ ব্লকের জোয়ারগড়ি পঞ্চায়েতের দলীয় প্রধানের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠল স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে। রবিবার রাতে পালোড়া গ্রামে প্রধান শম্পা দাসের বাড়িতে ঢুকে একদল যুবক জানলার কাচ এবং প্লাস্টিকের চেয়ার ভাঙে। প্রধানের স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়িকেও তারা মারতে উদ্যত হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই অবশ্য হামলাকারীরা পালায়।

Advertisement

পুলিশ জানায়, তদন্ত শুরু হয়েছে। গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সোমবার রাত পর্যন্ত অবশ্য ওই ঘটনায় পুলিশ কাউকে ধরতে পারেনি।
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ২০৫ ও ২০৪ নম্বর বুথের মাঝে
একটি ঢালাই রাস্তা মেরামতের জন্য বরাদ্দ হয় ১ লক্ষ টাকা। পরে কাজ করতে গিয়ে অতিরিক্ত কিছু টাকা
খরচ হয়। ২০৫ নম্বর বুথ থেকেই জিতেছেন শম্পা।

শম্পার অভিযোগ, ‘‘ওই কাজের বরাদ্দ থেকে কাটমানি চেয়েছিল দলের কিছু কর্মী। দিইনি। ওরা কাজেরও হিসাব দেখতে চাওয়ায় পঞ্চায়েতে যেতে বলেছিলাম। ওরা পঞ্চায়েতে এল না। টাকার ভাগ না-পাওয়াতেই হামলা করল। কোনও রকমে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলাম বলে রেহাই পেয়েছি।’’ প্রধানের স্বামী গৌতম বলেন, ‘‘স্ত্রী প্রধান হওয়ার পর থেকেই কয়েকজন তৃণমূল কর্মী বারে বার টাকা চাইছে। যে কোনও কাজ করতে গেলে তাদের জন্য কাটমানি রাখতে হবে বলে দাবি করছে। সেই টাকা না দেওয়ার জন্যই মদ্যপ অবস্থায় বাড়িতে হামলা করে।’’

হামলাকারীদের কারও নাম বলতে চাননি প্রধান বা তাঁর স্বামী। সোমবার বিকেল পর্যন্ত থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়নি। তবে, প্রধানের কাজকর্মে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। তাঁদের দাবি, প্রধান ও তাঁর স্বামী নিজেদের ইচ্ছা মতো কাজ করেন। গ্রামের মানুষকে কিছু জানাতে চান না। ‘কাটমানি’র জন্য প্রধানের বাড়িতে হামলার অভিযোগ তাঁরা মানছেন না। পাল্টা প্রধানের বিরুদ্ধেই ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।

ওই তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে শেখ মইনুদ্দিন ও নুরুল হাসানের দাবি, ‘‘প্রধান এবং তাঁর স্বামী মিথ্যা কথা বলছেন। যে অংশে রাস্তা মেরামতের কাজ হয়, তার ওয়ার্ক-অর্ডার দেখতে চাওয়া হয়েছিল। কোনও উপভোক্তা কমিটি না গড়ে কাজ করছেন প্রধান ও তাঁর স্বামী। হিসাব দেখাচ্ছেন না। তাই কয়েকজন তৃণমূল কর্মী রবিবার রাতে প্রধানের বাড়িতে হিসাব দেখতে গিয়েছিলেন। প্রধানের স্বামীই জানলার কাচ ও চেয়ার ভেঙে পুলিশের কাছে মিথ্যা অভিযোগ জানান।’’ একইসঙ্গে ওই দুই তৃণমূল কর্মীর অভিযোগ, প্রধানই নানা কাজে ‘কাটমানি’ নেন। অভিযোগ উড়িয়ে প্রধান
দাবি করেছেন, ‘‘রাস্তার কাজ
পুরোটাই পঞ্চায়েতের ইঞ্জিনিয়ারের সামনে হয়েছে। লুকোচুরির কোনও ব্যাপার নেই।’’

দলীয় কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রধানের বাড়িতে হামলার অভিযোগ মানছেন না উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক নির্মল মাজি। তাঁর দাবি, ‘‘ওই এলাকায় একটি চোলাই এবং গাঁজার ঠেক আছে। সেখান থেকে কয়েকজন সমাজবিরোধী মাঝেমধ্যেই এলাকায় উৎপাত চালায়। তারাই প্রধানের বাড়ি হামলা করে। পুলিশকে বলেছি তদন্ত করে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করতে। এলাকা থেকে চোলাই-গাঁজার ঠেক তুলে দিতে।’’

বিধায়ক যা-ই বলুন, জোয়ারগোড়ি অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি বিবেকানন্দ সিংহ মানছেন, ‘‘চাওয়া-পাওয়া নিয়েই গোলমাল। কিছু কর্মী প্রধানের বাড়িতে গিয়েছিল কাটমানি খাওয়ার জন্য। প্রধান না দেওয়ায় হামলা হল।’’

ঘটনায় সরব হয়েছে বিরোধীরা। পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা বিজেপির গৌর ভুঁইয়া বলেন, ‘‘যে রাজ্যে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রী চুরির অভিযোগ জেলে রয়েছেন, সেই দলের পঞ্চায়েত প্রধান থেকে সাধারণ কর্মীরা— সকলেই কাটমানি খেতে ব্যস্ত। এখানেও কাটমানি না পাওয়ায় তৃণমূল কর্মীরাই প্রধানের বাড়িতে হামলা চালাল। প্রধান সব কাজে কাটমানি খাচ্ছেন।’’ওই অঞ্চলের সিপিএম নেতা নবকুমার দুয়ারি বলেন, ‘‘কাটমানি নিয়ে গোলমাল তৃণমূলের মধ্যে। প্রধান একাই কাটমানি খাচ্ছেন। কর্মীরা পাচ্ছেন না। সারা রাজ্যে যা ঘটছে, জোয়ারগোড়িতেও তাই।’’

আরও পড়ুন
Advertisement