Murder

গাড়ির বাইরে গুলি, অথচ খোল মিলল ভিতরে! এই ‘ভুল’ই কি ধরিয়ে দিল রিয়ার হত্যাকারীকে?

নিহত রিয়া কুমারীর স্বামী প্রকাশ কুমারের বয়ানে ধরা পড়েছে একাধিক অসঙ্গতি। এমনটাই মত তদন্তকারীদের। এর পরই প্রকাশকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চায় পুলিশ।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
হাওড়া শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১২:০৫
রিয়া কুমারী হত্যাকাণ্ডে ধৃত তাঁর স্বামী প্রকাশ কুমার।

রিয়া কুমারী হত্যাকাণ্ডে ধৃত তাঁর স্বামী প্রকাশ কুমার। নিজস্ব চিত্র।

নতুন মোড় নিল ঝাড়খণ্ডের অভিনেত্রী রিয়া কুমারীর হত্যাকাণ্ড। ওই খুনের ঘটনায় রিয়ার স্বামী প্রকাশ কুমারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকাশের বক্তব্যে ধরা পড়েছে একাধিক অসঙ্গতি। তার জেরেই প্রকাশকে গ্রেফতার করেছে বাগনান থানার পুলিশ। তবে গোটা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ছবি পেতে ধৃতকে পুলিশ আরও জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় তারা।

তদন্তকারীদের মতে, প্রকাশ প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছিলেন, গাড়ির বাইরে গুলি করা হয়েছে রিয়াকে। কিন্তু, পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গাড়ির ভিতর থেকে উদ্ধার হয়েছে গুলির খোল। প্রকাশ আরও দাবি করেছিলেন, ছিনতাইকারীরা তাঁকে ঘিরে ধরেছিল। কিন্তু রিয়া তাদের বাধা দেওয়ায় ছিনতাইকারীরা তাঁকে গুলি করে। তদন্তকারীদের প্রশ্ন, এই পরিস্থিতিতে প্রকাশকেই ছিনতাইকারীদের আক্রমণ করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। আর এই প্রশ্নই প্রথম থেকে ভাবিয়ে তুলেছিল তদন্তকারীদের। ক্রমশ তাঁদের সন্দেহ গাঢ় হচ্ছিল প্রকাশের উপর। সন্দেহ করা হচ্ছিল, প্রকাশ নিজেই রিয়াকে গুলি করে ছিনতাইয়ের গল্প ফেঁদেছিলেন। এই সন্দেহ জোরালো হয়, আরও কয়েকটি তথ্যে। হাওড়ার বাগনানের রাজাপুর এলাকায় জাতীয় সড়কের উপর মহিষরেখা সেতুর কাছে গুলি করে খুন করা হয়েছে রিয়াকে। তদন্তকারীদের মতে, ওই এলাকায় ইতিপূর্বে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যের তেমন ইতিহাস নেই। তা ছাড়া, প্রকাশ দাবি করেছিলেন, তিনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে সেতুর কাছে গাড়ি দাঁড় করান। তাঁর দাবি ছিল, ঠিক সেই সময়েই দুষ্কৃতীরা প্রকাশকে ঘিরে ফেলে। এই দুই ঘটনার সমাপতন কি নেহাতই কাকতালীয়, সেই প্রশ্নও ভাবিয়ে তোলে তদন্তকারীদের। দুষ্কৃতীরা কী করে জানল যে, ওই দম্পতি মহিষরেখা সেতুর কাছে গাড়ি দাঁড় করাবেন, এই প্রশ্নও ভাবিয়ে তোলে তদন্তকারীদের।

Advertisement

বুধবার রাতে রিয়ার বাড়ির লোকজন পৌঁছন বাগনান থানায়। সেখানে রিয়ার ভাই অভিযোগ দায়ের করেন, প্রকাশ, তাঁর দুই ভাই এবং তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রীর বিরুদ্ধে। রিয়াকে খুন করতে যে আগ্নেয়াস্ত্রটি ব্যবহার করা হয়েছিল তার খোঁজ চালানো হচ্ছে।

প্রকাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রিয়ার উপর মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন করতেন। তিনি রিয়াকে সন্দেহ করতেন এবং তাঁর টাকাপয়সাও নিয়ে নিতেন বলে রিয়ার ভাইয়ের অভিযোগ। প্রকাশের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী রিয়া। ইউটিউবে ঈশা আলিয়া নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। ইউটিউবের জন্য গানের ভিডিয়ো এবং ছোট ছবি তৈরি করে বিপুল টাকা রিয়া উপার্জন করতেন বলেও তাঁর পরিবারের দাবি। অন্য দিকে, প্রকাশের আর্থিক অবস্থাও বেশ ভাল। তাঁর পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে। পুলিশ আধিকারিকরা জেনেছেন, প্রকাশ ইউটিউবে ছবি পরিচালকের কাজ করতেন। রিয়া তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী হলেও প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে প্রকাশের যোগাযোগ ছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। তাঁরা এ-ও জেনেছেন, এই নিয়ে রিয়ার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ তৈরি হয়েছিল প্রকাশের। পাশাপাশি, এ-ও জানা গিয়েছে, দু’জনের মধ্যে ইউটিউব থেকে আসা টাকা নিয়েও তৈরি হয়েছিল বিবাদ। তবে পুলিশ এখনও নিশ্চিত নয়, ঠিক কী কারণে রিয়াকে খুন করা হয়েছে।তবে প্রকাশ উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করতেন বলেও জানতে পেরেছে পুলিশ।

যে গাড়িতে চড়ে বুধবার রাঁচী থেকে প্রকাশ, রিয়া এবং তাঁদের আড়াই বছরের মেয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন তা সম্প্রতি কেনা হয়েছিল বলেও জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। পুলিশের মতে, বাড়ি থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে স্ত্রীকে খুন করার পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই করেছিলেন প্রকাশ। তাঁদের অনুমান, কোনও ওয়েব সিরিজ় দেখে স্ত্রীকে খুনের ছক কষেছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন
Advertisement