National Institutes of Health

জয়ন্ত থেকে ‘জে’ হয়েও ভোলেননি বাংলা

জয়দের বাড়ি ছিল চন্দননগরের মধ্যাঞ্চলে। ১৯৬৮ সালে এখানেই তাঁর জন্ম। বাবা বিষ্ণুপদ শিবপুর বিই কলেজের পিএইচ ডি।

Advertisement
প্রকাশ পাল
শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৩৩
জয় ভট্টাচার্য।

জয় ভট্টাচার্য। ছবি রয়টার্স।

তিনি জয়ন্ত। ডাকা হত জয় নামে। শৈশবেই বাবার কর্মসূত্রে আমেরিকা-যাত্রা। সেখানকার উচ্চারণে জয় হয়ে যায় ‘জে’। সেই নামেই এখন তাঁর পরিচিতি গোটা বিশ্বে।

Advertisement

বিশ্বের বৃহত্তম সরকার পোষিত বায়োমেডিক্যাল গবেষণা বিষয়ক সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ (এনআইএইচ)-এর পরবর্তী ডিরেক্টর হচ্ছেন চন্দননগরের সন্তান জয়ন্ত ভট্টাচার্য। আমেরিকার ভাবী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খোদ তাঁকে বেছে নিয়েছেন।

জয়দের বাড়ি ছিল চন্দননগরের মধ্যাঞ্চলে। ১৯৬৮ সালে এখানেই তাঁর জন্ম। বাবা বিষ্ণুপদ শিবপুর বিই কলেজের পিএইচ ডি। স্ত্রী মাধুরী, জয় এবং ছোট ছেলে দ্বৈপায়নকে নিয়ে তিনি আমেরিকায় চলে যান। জয় তখন বছর তিনেকের। তাঁর আশৈশব পড়াশোনা আমেরিকাতেই। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেডিসিনের এমডি। পিএইচ ডি অর্থনীতিতে।

আত্মীয়েরা জানান, তুমুল ব্যস্ততার মধ্যেও তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন জয়। তাঁর এক পিসতুতো বোন জানান, অর্থনীতিতে উচ্চশিক্ষার কাজে নব্বইয়ের দশকে মেদিনীপুরে এসেছিলেন জয়। মাস তিনেক ছিলেন। থাকতেন চন্দননগরের বাড়িতেই। কয়েক বছর আগে বাড়িটি বিক্রি করে দেওয়া হয়। বছর ২৭-২৮ আগে নিজের বিয়ের ‘রিসেপশনে’ আরও এক বার চন্দননগরে আসেন জয়। তার পরেও এসেছেন। ওই বোন বলেন, ‘‘হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের নিয়মিত ব্যক্তিগত কথাবার্তা হয়। এনআইএইচ-এর পরবর্তী ডিরেক্টরের দায়িত্ব পাওয়ায় অভিনন্দন জানিয়েছি।’’

আত্মীয়েরা জানান, আমেরিকায় জল-হাওয়াতেও বাংলাকে ভোলেননি জয়। বাংলা ভাষায় স্বচ্ছন্দ। পিসতুতো বোনের কথায়, ‘‘পড়াশোনার জন্য প্যারিসে গিয়ে চন্দননগর নিয়ে গান শুনে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে জানিয়েছিল। চন্দননগর থেকে অনেক বাংলা বই কিনে নিয়ে গিয়েছিল।’’ আত্মীয়েরা জানান, ‘বইপাগল’ জয়ের ব্যাগে সব সময় বই থাকে। আড্ডার মাঝেও বইয়ের অক্ষরে চোখ বোলান। ভালবাসেন শিশুদের সঙ্গ। একঘর লোকের মধ্যে খুদেদের সঙ্গেই মেতে থাকতে পারেন।

জয়ের খুড়তুতো ভাই তথাগত বেঙ্গালুরুতে ‘সেমিকন্ডাক্টর’ ক্ষেত্রে কর্মরত। তাঁর কথায়, ‘‘দাদা আমার বাড়িতে এসেছিল। আমার ছেলের সঙ্গে খেলাধুলোয় মেতে উঠেছিল। ছোটদের সঙ্গে ছোটদের মতো করেই মিশতে পারে।’’ অতীত ঘেঁটে তথাগত বলেন, ‘‘দাদা যখন চন্দননগরের বাড়িতে এসেছে তখন আমি ছোট। আমাকে অঙ্ক শিখিয়েছে।’’ তথাগতের মা মঞ্জু বলেন, ‘‘আমার যখন বিয়ে হয়, জয় ছ’মাসের। তার বছর আড়াইয়ের মধ্যেই ওরা আমেরিকা চলে যায়। শান্ত প্রকৃতির ছিল। আমাকে কাকিমা বলতে পারত না, বলত কাপিমা। সেই ছেলে অত দূরে পৌঁছে গিয়েছে! ওর জন্য সত্যিই গর্ব হয়।’’

জয়ের বড় কাকা ঊষাপতি চন্দননগর আদর্শ শিক্ষালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মেজো কাকা শ্রীপতি শিবপুর বিই কলেজ থেকে বি টেক এবং লন্ডন থেকে এম টেক করে আমেরিকায় চলে যান। ছোট কাকা শ্রীকুমার দুর্গাপুরের আরই কলেজে স্থাপত্যবিদ্যার স্বর্ণপদকজয়ী। স্ট্যানফোর্ডে পরবর্তী শিক্ষা। তিনিও আমেরিকায় কাজ করতেন। চার ভাই-ই প্রয়াত হয়েছেন।

চন্দননগরের কানাইলাল বিদ্যামন্দিরে বিজ্ঞান ভবন তৈরি শ্রীকুমারের স্মৃতিতে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নামে ছিল বৃত্তি। চন্দননগরের আদর্শ শিক্ষালয়ের হলঘর রয়েছে
ঊষাপতির স্মৃতিতে। বিষ্ণুপদের নামে বৃত্তি চালু হয়েছিল শিবপুর বিই কলেজে। জয়ের ঠাকুমা নীহারনলিনীদেবীর স্মৃতিতে সাহায্য করা হয় চন্দননগরের ইন্দুমতী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে।

সেই পরিবারের সন্তানের হাতে উঠতে চলেছে আমেরিকার স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভালমন্দের চাবিকাঠি।

Advertisement
আরও পড়ুন