West Bengal Panchayat Election 2023

সবাই বলছে, আমার ঝান্ডা আগে! দম ফেলার ফুরসত নেই দর্জিদের, পতাকা বরাতে এগিয়ে কোন দল?

জগাছার দোকানগুলো থেকে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক ঝান্ডা হু-হু করে বিক্রি হচ্ছে। দক্ষিণবঙ্গ তো বটেই, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো থেকেও একের পর এক বরাত আসছে। কাজ যেন শেষই হচ্ছে না কারিগরদের।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
জগাছা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২৩ ২১:১২
Howrah tailors are busy with making political flags ahead of Panchayat Poll

পাশপাশি চলছে সিপিএম এবং তৃণমূলের পতাকা তৈরির কাজ। —নিজস্ব চিত্র।

হাতে মাত্র আর কয়েকটা দিন। সেলাই মেশিনের প্যাডেলে চাপ বাড়াচ্ছেন কারিগররা। ঝপাঝপ তৈরি হচ্ছে একের পর এক রাজনৈতিক দলের পতাকা। অর্ডার সামলাতে গিয়ে নাওয়া-খাওয়া ভুলেছেন তাঁরা। চলছে রাত জেগে কাজ। পঞ্চায়েতের মরসুমে এমন ব্যস্ততায় হাওড়ার জগাছা ইনসানি এলাকার পতাকা কারিগরেরা। ৮ জুলাই যত এগিয়ে আসছে, ততই কাজ বা ড়ছে শেখ সইফুল, রাজু হালদাররা।

জগাছার ওই এলাকার মানুষের পতাকা তৈরি অন্যতম পেশা। স্বাধীনতা দিবস কিংবা প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রচুর জাতীয় পতাকা বানান তাঁরা। কিন্তু যে কোনও ভোট এলেই সইফুলদের আর দম ফেলার সময় থাকে না। একের পর এক রাজনৈতিক দলের বরাত আসে তাঁদের কাছে। কেউ চাইছেন ঘাসফুল আঁকা পতাকা, কেউ পদ্ম। কারও চাহিদা কাস্তে-হাতুড়ি আঁকা পতাকা তো কেউ বলে যাচ্ছেন হাত চিহ্ন আঁকা পতাকা তৈরি করে দিতে হবে। রাজু হালদার নামে এক দর্জির কথায়, ‘‘সবাই চান তাঁর বরাতি মাল আগে তৈরি হোক। কিন্তু আমাদের তো সেটা করলে চলবে না। যার অর্ডার আগে আসবে, তার কাজ আগে ধরি। গত কয়েক দিন ধরে তো ঘুমনোর সময় পাচ্ছি না।’’ রাজু এবং তাঁর সহকর্মীরা জানাচ্ছেন, পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার পর আচমকা তাঁদের কাজের চাপ বেড়ে গিয়েছে। দিনরাত এক করে তৃণমূল, কংগ্রেস, বিজেপি, সিপিএম, আইএসএফের পতাকা তৈরি করে চলেছেন তাঁরা। এগুলো তো আছেই। হঠাৎ করে নির্দল প্রার্থীদেরও বরাত বেড়ে গিয়েছে। সবার দাবি একটাই— ‘‘জলদি পতাকা চাই।’’ এত কাজের চাপে মাঝেমাধে মেজাজ হারাচ্ছেন কারিগররা। কিছু ক্ষণ পর আবার মন দিচ্ছেন কাজে। দিতেই হচ্ছে।

Advertisement

জগাছার ওই দোকানগুলো থেকে ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক ঝান্ডা হু-হু করে বিক্রি হচ্ছে। দক্ষিণবঙ্গ তো বটেই, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো থেকেও একের পর এক বরাত আসছে। কাজ যেন শেষই হচ্ছে না কারিগরদের। রাজু দর্জির কথায়, ‘‘শুধু পতাকাই নয়। এখন টি-শার্ট, টুপিতেও দলীয় প্রতীক ছাপিয়ে দেওয়ার অর্ডার আসছে প্রচুর। এখন যেমন তৃণমূল এবং কংগ্রেসের বিশেষ টি-শার্ট তৈরির কাজ করছি।’’ দর্জিদের কথায়, ‘‘কাজের এত চাপ ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া হচ্ছে না। সকাল ১০টার টিফিন পড়ে পড়ে ঠান্ডা হচ্ছে। হাত দেওয়ার সময় নেই। খাওয়া হচ্ছে সেই ঘণ্টা তিনেক পর। দুপুরের খাবার কে কখন খাচ্ছি, ঠিক থাকছে না।’’ ওই দোকানের এক কর্মচারীর কথায়, ‘‘কাজের চাপে বাড়ি যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’ রাজু বলছেন, তাঁর কারখানায় ১০জন কারিগর কাজ করছেন। কিন্তু দিনরাত সবাই মিলে খেটেখুটেও কোনও ভাবেই কাজ যেন শেষ হতে চাইছে না! বাধ্য হয়ে পরিচিতদেরও কাজে লাগাচ্ছেন।

এই কথাবার্তার মধ্যেই একটি পতাকা তৈরির কারখানায় উপস্থিত জনৈক ওয়াসিম লস্কর। তিনি এসেছেন নির্দল প্রার্থীর হয়ে পতাকার বরাত দিতে। ওয়াসিম জানান, শাসকদলের পতাকার সঙ্গে তাঁরাও এবার সমানে সমানে টক্কর দেবেন। বলেন, ‘‘আমাদের পতাকায় এলাকার রাস্তা ছেয়ে যাবে।’’

পঞ্চায়েত ভোটের মরসুমে বাড়তি কিছু লাভের আশায় সেলাই মেশিনের প্যাডেলে চাপ বাড়াচ্ছেন রাজুরা। সেলাই মেশিনের সামনে তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস— সব রাজনৈতিক দলের পতাকা রয়েছে জড়ো হয়ে। দর্জি-কারিগররা জানাচ্ছেন, পতাকা বরাতের লড়াইয়ে শাসকদলই অন্যদের চেয়ে এগিয়ে। তখনই এক কর্মচারীর মন্তব্য, ‘‘দেখুন, এখানে কেমন সব পতাকা মিলেমিশে আছে। এখান থেকে বেরলেই আবার কার ঝান্ডা হাতে থাকবে তাই নিয়ে লড়াই শুরু হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement