Land Ownership Issue

হাওড়ায় স্কুলের জমির মালিকানা নিয়ে টানাপড়েন, বিতর্ক

হাওড়া ভট্টনগর ঘুঘুপাড়ার সারদামণি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১১ কাঠা সেই জমিতেই আচমকা একটি বোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়ে। বোর্ডে লিখে দেওয়া হয়েছে, জমিটি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের।

Advertisement
দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:৫৭
হাওড়ার ভট্টনগরের স্কুলের মাঠে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এই সাইনবোর্ড নিয়েই বিতর্ক।

হাওড়ার ভট্টনগরের স্কুলের মাঠে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এই সাইনবোর্ড নিয়েই বিতর্ক। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

অন্যের সম্পত্তি দখল করতে বেআইনি ভাবে সেই জমিতে বোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়ার নানা
অভিযোগ মাঝেমধ্যেই শোনা যায়। কিন্তু একটি সরকারি দফতরের নামে থাকা জমি অন্য সরকারি দফতর বোর্ড লাগিয়ে নিজেদের সম্পত্তি ঘোষণা করার ঘটনা কার্যত নজিরবিহীন। আর তেমনটাই ঘটেছে হাওড়ার ভট্টনগর এলাকায়। যা নিয়ে শিক্ষা দফতর আর জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মধ্যে রীতিমত ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়েছে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকার বাসিন্দাদের জন্য পর্যাপ্ত পানীয় জলের সরবরাহের কথা ভেবে ২০১২ সালে স্কুলের জমির একটি অংশ জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছিল জেলা স্কুল পরিদর্শক অফিস। সেই জন্য ওই জমির এক কোণে তৈরি হয়েছিল একটি পাম্প হাউস। সম্প্রতি হাওড়া ভট্টনগর ঘুঘুপাড়ার সারদামণি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১১ কাঠা সেই জমিতেই আচমকা একটি বোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়ে। বোর্ডে লিখে দেওয়া হয়েছে, জমিটি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের। স্কুলের মাঠে এই বোর্ড দেখার পরেই চিন্তায় পড়েছেন ওই স্কুলের শিক্ষকেরা। স্কুলের সম্পত্তি হওয়া সত্ত্বেও কেন বোর্ড ঝুলিয়ে দাবি করা হচ্ছে যে জমিটির মালিক জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে স্কুল কর্তৃপক্ষের নাজেহাল অবস্থা। স্কুলের পক্ষ থেকে জেলা প্রাথমিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান-সহ জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে, স্কুলের জমি কেন এ ভাবে দখল করার চেষ্টা হচ্ছে? প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি স্কুলের জমিতে পাম্প হাউস করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জমিটাই জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের হয়ে যাবে? কিন্তু এখনও পর্যন্ত চিঠির কোনও উত্তর মেলেনি।

ওই স্কুলের টিচার ইন-চার্জ শুভাশিস কর বলেন, ‘‘এই জমিটি সারদামণি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে শিক্ষা দফতরের তরফে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত ১১ সেপ্টেম্বর আচমকা স্কুলের মাঠে সম্পত্তিটি তাদের বলে দাবি করে একটি বোর্ড লাগিয়ে দেয় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। এর জন্য আমাদের সঙ্গে কথা বলারও প্রয়োজন মনে করেননি তাঁরা। এই ঘটনার পর থেকে সমস্ত দফতরে জানিয়েছি, কিন্তু সদুত্তর পাইনি। এই ব্যাপার নিয়ে অভিভাবকেরাও চিন্তিত।’’

এই ভাবে শিক্ষা দফতরের জমিতে বোর্ড লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনায় রীতিমত ক্ষুব্ধ হাওড়া জেলা প্রাথমিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান কৃষ্ণ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘আমি এই অভিযোগ পাওয়ার পরেই জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছি, কেন এটা করা হয়েছে। কিন্তু এখনও উত্তর পাইনি। কোনও সরকারি দফতরের জমি অন্য দফতর এ ভাবে দখল করতে পারে নাকি?’’

বোর্ড টাঙিয়ে জমি ‘দখল’ করার অভিযোগ নিয়ে হাওড়ার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার সৌরভ বসু জানান, বিষয়টা দখলদারির নয়। ওই পাম্প হাউসে বহিরাগতরা প্রবেশ করছে বলে অভিযোগ আসছিল। তাই তাদের সাবধান করতে ওই বোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে বোঝানো হয়েছে যে, জমিটি সরকারি। কিন্তু এ বিষয়ে স্কুল কতৃর্পক্ষকে আগে জানানো হয়নি কেন? জেলা প্রাথমিক কাউন্সিল চেয়ারম্যানের চিঠির উত্তরই বা দেওয়া হয়নি কেন? সহকারি ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘স্কুলকে জানানো হয়নি কেন, তা জানি না। তবে জেলা স্কুল কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের চিঠির উত্তর নিশ্চয় দেওয়া হবে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement